জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের পর দেশ প্রথমবারের মতো যে বিজয় দিবস উদযাপন করেছে, তা ছিল ভিন্ন মাত্রার এবং মুক্ত পরিবেশে অনুষ্ঠিত। তাঁর মতে, ওই সময় জনগণ স্বাধীন পরিবেশে বিজয়ের অনুভূতি উপভোগ করার সুযোগ পেয়েছিল। তবে এক বছর পার হওয়ার পর জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে বিতর্ক ও মতপার্থক্যের কারণে সমাজে কিছু বিভাজন দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে, যা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার জন্য চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে।
সালাহউদ্দিন আহমদ এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন। তিনি উল্লেখ করেন, সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক অবস্থান ও বক্তব্যের কারণে জনপরিসরে বিভক্তির চিত্র স্পষ্ট হয়েছে। তাঁর বক্তব্য অনুযায়ী, এই বিভক্তির সুযোগ নিয়ে অগণতান্ত্রিক ও ফ্যাসিবাদী শক্তি পুনরায় সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করছে। বিশেষ করে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর একটি সহিংস ঘটনার প্রেক্ষাপটে রাজনৈতিক পরিবেশে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা তৈরি হয়েছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক উত্তরণের চলমান প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করতে পতিত ফ্যাসিবাদী শক্তি ও তাদের সহযোগীরা নানা ধরনের তৎপরতা অব্যাহত রেখেছে বলে রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা রয়েছে। তাঁর মতে, এই পরিস্থিতিতে দেশের সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্রকে সুসংহত রাখতে বাংলাদেশের পক্ষে অবস্থান নেওয়া সব গণতান্ত্রিক শক্তি এবং ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐক্য জোরদার করা সময়ের দাবি। তিনি মনে করেন, ঐক্যবদ্ধ উদ্যোগের মাধ্যমেই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, গণতন্ত্রবিরোধী তৎপরতা এবং অগণতান্ত্রিক শক্তির পুনরুত্থানের চেষ্টা প্রতিহত করা সম্ভব হবে।
সালাহউদ্দিন আহমদ তাঁর বক্তব্যে মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে এ দেশের সব শ্রেণি-পেশার মানুষের সম্মিলিত সংগ্রাম ছিল। ইতিহাসের ধারাবাহিকতায় যারা মুক্তিযুদ্ধকে দলীয় বা সংকীর্ণ স্বার্থে ব্যবহার করার চেষ্টা করেছে, তারা জনগণের সমর্থন হারিয়েছে। তাঁর মতে, চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানও একইভাবে জনগণের সামষ্টিক আকাঙ্ক্ষা ও প্রত্যাশার বহিঃপ্রকাশ।
তিনি বলেন, গণঅভ্যুত্থানে যারা প্রাণ হারিয়েছেন, তাঁদের আত্মত্যাগের পেছনে ছিল গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা, বৈষম্যমূলক সমাজব্যবস্থা থেকে মুক্তি এবং সাংবিধানিক অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার আকাঙ্ক্ষা। একই সঙ্গে হারানো মানবাধিকার পুনরুদ্ধার এবং রাষ্ট্র পরিচালনায় জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার দাবিও এই আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিল। এসব দাবির সমষ্টিগত রূপ হিসেবেই চব্বিশের গণঅভ্যুত্থান সংঘটিত হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
বিএনপির এই সিনিয়র নেতা বলেন, বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় প্রধান চ্যালেঞ্জ হলো ফ্যাসিবাদবিরোধী জাতীয় ঐক্যকে একটি কার্যকর জাতীয় শক্তিতে রূপ দেওয়া। তাঁর মতে, শুধু নির্বাচনী রাজনীতির মধ্যেই নয়, গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি ও প্রতিষ্ঠানকে শক্তিশালী করতেও এই ঐক্যের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। তিনি মনে করেন, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ন্যূনতম ঐকমত্য ও সহযোগিতা থাকলে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া আরও স্থিতিশীল হবে।
তিনি আরও বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সব রাজনৈতিক শক্তির দায়িত্ব হচ্ছে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিত করা এবং জনগণের ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ সৃষ্টি করা। একটি গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের মাধ্যমে দেশ একটি শক্তিশালী গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের দিকে অগ্রসর হতে পারবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। তাঁর বক্তব্য অনুযায়ী, এ ধরনের নির্বাচনই জনগণের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা পূরণ এবং গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের আত্মত্যাগের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের পথ তৈরি করতে পারে।
সালাহউদ্দিন আহমদের বক্তব্যে বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে ঐক্য, সহনশীলতা ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের গুরুত্ব বিশেষভাবে উঠে আসে। তিনি মনে করেন, এসব বিষয় নিশ্চিত করা গেলে ভবিষ্যতে রাষ্ট্র পরিচালনায় স্থিতিশীলতা বজায় থাকবে এবং গণতন্ত্রের ভিত্তি আরও দৃঢ় হবে।


