নিজস্ব প্রতিবেদক
আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশে একটি অনুকূল রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক পরিবেশ বিরাজ করছে বলে জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেছেন, নির্বাচন কমিশন নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পেশাদারিত্বের সঙ্গে প্রয়োজনীয় সব প্রস্তুতিমূলক কার্যক্রম সম্পন্ন করেছে এবং এখন মূল চ্যালেঞ্জ হলো এসব প্রস্তুতি যথাযথভাবে বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা।
বাংলাদেশ সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে উপদেষ্টা পরিষদের অর্থনৈতিক বিষয়ক কমিটি এবং সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত কমিটির দুটি পৃথক বৈঠকে সভাপতিত্ব শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
অর্থ উপদেষ্টা জানান, নির্বাচন কমিশন সময়মতো ভোটার তালিকা প্রণয়ন ও হালনাগাদ করেছে এবং জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে। এসব কার্যক্রম নির্বাচন আয়োজনের প্রাথমিক ও গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হিসেবে বিবেচিত হয়। তাঁর মতে, এখন মাঠপর্যায়ে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে নির্বাচন বাস্তবায়নের বিষয়টি সর্বাধিক গুরুত্ব পাচ্ছে।
তিনি বলেন, মাঠপর্যায়ের পরিস্থিতি মূল্যায়নের ভিত্তিতে নির্বাচন পরিচালিত হবে। যেসব এলাকা তুলনামূলকভাবে বেশি সংবেদনশীল হিসেবে চিহ্নিত, সেখানে নিরাপত্তাসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা জোরদার করা হবে। অন্যদিকে, কম সংবেদনশীল এলাকায় কী ধরনের প্রস্তুতি প্রয়োজন, সে বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের সুস্পষ্ট ধারণা রয়েছে এবং সে অনুযায়ী পরিকল্পনা গ্রহণ করা হচ্ছে।
নির্বাচনের সময়সূচি নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে বড় ধরনের কোনো মতভেদ দেখা যাচ্ছে না বলেও মন্তব্য করেন ড. সালেহউদ্দিন। তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনে অংশগ্রহণের কথা জানিয়েছে এবং ঘোষিত তফসিল নিয়ে কোনো পক্ষ আপত্তি তোলেনি। বরং তফসিলটি উপযুক্ত বলে সর্বসম্মত মত প্রকাশ করা হয়েছে। তাঁর মতে, এটি নির্বাচনকালীন সময়সূচি নিয়ে কোনো বিতর্ক না থাকার ইঙ্গিত দেয় এবং সামগ্রিক রাজনৈতিক পরিবেশকে অনুকূল হিসেবে তুলে ধরে।
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি প্রসঙ্গে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, সার্বিকভাবে পরিস্থিতি সন্তোষজনক রয়েছে। নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসবে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রস্তুতি আরও জোরদার করা হবে। তিনি জানান, বর্তমানে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এবং প্রয়োজনে অতিরিক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের প্রস্তুতি রয়েছে।
সরকারের ঋণ পরিস্থিতি সম্পর্কেও সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ড. সালেহউদ্দিন বলেন, বর্তমান প্রশাসন মূলত পূর্ববর্তী সরকার থেকে উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত চলমান উন্নয়ন প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের জন্য ঋণ গ্রহণ করেছে। তিনি ব্যাখ্যা করেন, এসব প্রকল্পের অনেকগুলো ইতোমধ্যে ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ পর্যন্ত সম্পন্ন হয়েছে। এ অবস্থায় প্রকল্পগুলো পরিত্যাগ করলে রাষ্ট্রের বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।
তিনি বলেন, চলমান প্রকল্পগুলো মাঝপথে বন্ধ করে দিলে তা অর্থনীতিবিদদের ভাষায় ‘ডেডওয়েট লস’ হিসেবে বিবেচিত হবে, অর্থাৎ ইতোমধ্যে ব্যয় করা অর্থ কার্যত অপচয়ে পরিণত হবে। এই বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়ে সরকার বেশ কয়েকটি চলমান প্রকল্প সম্পন্ন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। একই সঙ্গে তিনি জানান, সরকার খুব সীমিত সংখ্যক নতুন প্রকল্প গ্রহণ করেছে।
অর্থ উপদেষ্টা আরও বলেন, সরকার কয়েক বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ করেছে, যা আর্থিক শৃঙ্খলা ও দায়বদ্ধতার প্রতি সরকারের অবস্থানকে প্রতিফলিত করে। তাঁর মতে, ঋণ ব্যবস্থাপনা ও পরিশোধের ক্ষেত্রে সরকারের এই উদ্যোগ অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
নির্বাচন সংক্রান্ত ব্যয় বিষয়ে তিনি জানান, তফসিল ঘোষণার পর এখনো নির্বাচন কমিশন আনুষ্ঠানিকভাবে তহবিলের জন্য বিস্তারিত চাহিদা উপস্থাপন করেনি। কমিশনের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে আনুষ্ঠানিক অনুরোধ এলে সরকার দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম হবে বলে তিনি আশ্বস্ত করেন।
ড. সালেহউদ্দিন বলেন, নির্বাচনী সরবরাহ ও সংশ্লিষ্ট কার্যক্রম নির্বাচন কমিশনের এখতিয়ারভুক্ত এবং সরকারের পক্ষ থেকে আর্থিক প্রয়োজনীয়তার ওপর কোনো ধরনের বিধিনিষেধ আরোপ করা হবে না। ভোটের দিন ও নির্বাচনকালীন কার্যক্রম পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় রসদ, জনবল ও অন্যান্য সহায়তার বিষয়ে কমিশন যখন তাদের চাহিদা জানাবে, তখন তা যাচাই করে সময়মতো বরাদ্দ নিশ্চিত করা হবে।
তিনি আরও বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে নির্বাচন কমিশনের বিভিন্ন প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে সরকার দ্রুত পদক্ষেপ নিয়েছে এবং জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ক্ষেত্রেও একইভাবে সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।


