মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে জাতীয় স্মৃতিসৌধ প্রস্তুত, চারস্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা

মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে জাতীয় স্মৃতিসৌধ প্রস্তুত, চারস্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা

নিজস্ব প্রতিবেদক
মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধ সম্পূর্ণ প্রস্তুত করা হয়েছে। গণপূর্ত অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে ধোয়া-মোছা, রং ও আলোকসজ্জাসহ সার্বিক সংস্কারকাজ শেষে স্মৃতিসৌধ এলাকা বর্ণিল রূপ ধারণ করেছে। দিবসটি ঘিরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে চারস্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

বিজয় দিবস সামনে রেখে লাল-সবুজের আভায় সাজানো হয়েছে জাতীয় স্মৃতিসৌধের বেদি ও আশপাশের এলাকা। বেদিসংলগ্ন সিঁড়িতে রং-তুলির কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে, যা স্মৃতিসৌধের নান্দনিকতাকে আরও উজ্জ্বল করেছে। স্মৃতিসৌধের অভ্যন্তরীণ সড়ক, প্রবেশপথ, সবুজ চত্বর ও লেক এলাকায় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে। আলোকসজ্জার মাধ্যমে সন্ধ্যা ও রাতের সময় দর্শনার্থীদের জন্য পর্যাপ্ত আলো নিশ্চিত করা হয়েছে।

গণপূর্ত অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত এ কার্যক্রমে নিয়োজিত শ্রমিকরা জানান, প্রতিবছরের মতো এবারও জাতীয় স্মৃতিসৌধকে ফুলের গাছ, রঙিন আলপনা ও নান্দনিক সাজে সাজানো হয়েছে। বেদি ও স্মৃতিস্তম্ভের আশপাশে নতুন ফুলগাছ রোপণ করা হয়েছে এবং বিদ্যমান গাছপালার পরিচর্যা করা হয়েছে, যাতে দিবসটি উপলক্ষে আগত দর্শনার্থীরা একটি সুশৃঙ্খল ও সৌন্দর্যবর্ধিত পরিবেশ পান।

গণপূর্ত অধিদপ্তর সাভারের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. আনোয়ার খান আনু জানান, বিজয় দিবস উপলক্ষে জাতীয় স্মৃতিসৌধ এলাকায় ব্যাপক প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। তিনি বলেন, ধোয়া-মোছা ও পরিষ্কারকরণ কার্যক্রমের পাশাপাশি ফুলগাছ রোপণ, রং-তুলির কাজ, সিসি ক্যামেরা স্থাপন এবং লেক সংস্কারসহ প্রয়োজনীয় সব কাজ শেষ করা হয়েছে। স্মৃতিসৌধ এলাকায় দর্শনার্থীদের চলাচল নির্বিঘ্ন রাখতে অবকাঠামোগত প্রস্তুতিও সম্পন্ন রয়েছে।

বিজয় দিবসে রাষ্ট্রীয়ভাবে শ্রদ্ধা নিবেদনের অংশ হিসেবে প্রথমে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। তাঁদের শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সর্বসাধারণের জন্য স্মৃতিসৌধ উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে। এদিন দেশের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ, মুক্তিযোদ্ধা, রাজনৈতিক দল, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনসহ সর্বস্তরের জনগণ শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে স্মৃতিসৌধে উপস্থিত হবেন।

দিবসটি উপলক্ষে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী চারস্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি রেজাউল করিম মল্লিক জানান, বিজয় দিবসে জাতীয় স্মৃতিসৌধসহ আশপাশের এলাকায় সার্বিক নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। তাঁর ভাষ্য অনুযায়ী, পুলিশের সর্বোচ্চ পর্যায়ের নির্দেশনা অনুযায়ী চেকপোস্ট স্থাপন, টহল কার্যক্রম বৃদ্ধি এবং নজরদারি অব্যাহত রাখা হয়েছে। নিরাপত্তা ব্যবস্থার অংশ হিসেবে সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ এবং প্রবেশপথে তল্লাশি কার্যক্রম পরিচালিত হবে।

জাতীয় স্মৃতিসৌধ বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের সর্বোচ্চ স্মারক হিসেবে বিবেচিত। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে আত্মদানকারী শহিদদের স্মরণে নির্মিত এ স্মৃতিসৌধে প্রতি বছর বিজয় দিবসে লাখো মানুষ শ্রদ্ধা নিবেদন করতে আসেন। এ প্রেক্ষাপটে প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো সমন্বিতভাবে প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে, যাতে শ্রদ্ধা নিবেদনের কার্যক্রম সুশৃঙ্খল ও নিরাপদ পরিবেশে সম্পন্ন হয়।

সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আশা করছে, গৃহীত প্রস্তুতি ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার ফলে মহান বিজয় দিবসে জাতীয় স্মৃতিসৌধে আগত মানুষেরা নির্বিঘ্নে শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে পারবেন এবং দিবসটির তাৎপর্য যথাযথ মর্যাদায় উদযাপিত হবে।

জাতীয় শীর্ষ সংবাদ