রাজধানীর উত্তর বাড্ডায় চলন্ত বাসে আগুন, পুলিশি তদন্ত শুরু

রাজধানীর উত্তর বাড্ডায় চলন্ত বাসে আগুন, পুলিশি তদন্ত শুরু

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর উত্তর বাড্ডা এলাকায় একটি চলন্ত যাত্রীবাহী বাসে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। রোববার রাত আনুমানিক ৮টার দিকে বাড্ডার এএমজেড হাসপাতালের সামনে অছিম পরিবহনের একটি বাসে এ ঘটনা ঘটে। অগ্নিকাণ্ডে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। তবে বাসটির একটি বড় অংশ আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা অনুযায়ী, ঘটনার সময় বাসটি যাত্রী ওঠানামার জন্য সড়কের পাশে থেমেছিল। এ সময় কয়েকজন ব্যক্তি যাত্রীবেশে বাসে ওঠে। কিছুক্ষণের মধ্যেই তারা বাসের ভেতরে আগুন ধরিয়ে দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। মুহূর্তের মধ্যে বাসের ভেতরে আগুন ছড়িয়ে পড়ে এবং ধোঁয়ায় পুরো এলাকা আচ্ছন্ন হয়ে যায়। আকস্মিক এ ঘটনায় বাসে থাকা যাত্রীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন এবং দ্রুত নেমে নিরাপদ দূরত্বে সরে যান।

খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে। বারিধারা ফায়ার সার্ভিসের পরিদর্শক মাজাহারুল ইসলাম জানান, সংবাদ পাওয়ার পর ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। প্রায় ৪০ মিনিটের চেষ্টায় রাত ৮টা ৫০ মিনিটের দিকে আগুন সম্পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়। তিনি আরও জানান, অগ্নিকাণ্ডে কোনো প্রাণহানি ঘটেনি, যা তাৎক্ষণিক উদ্ধার ও যাত্রীদের দ্রুত সরে যাওয়ার কারণে সম্ভব হয়েছে।

ফায়ার সার্ভিসের প্রাথমিক পর্যবেক্ষণে জানা গেছে, বাসের ভেতরে দাহ্য পদার্থ ব্যবহার করে আগুন লাগানো হতে পারে। তবে আগুনের সুনির্দিষ্ট কারণ এবং ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণে বিস্তারিত তদন্ত প্রয়োজন। আগুন নেভানোর পর বাসটিকে ঘটনাস্থল থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়, যাতে সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক করা যায়।

এ ঘটনায় এলাকায় কিছু সময়ের জন্য যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটে। আগুন লাগার খবর ছড়িয়ে পড়লে আশপাশের লোকজন ভিড় করেন এবং পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কাজে সহায়তা করেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ঘটনাস্থলে অবস্থান নেয়।

বাড্ডা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কাজী মো. নাসিরুল আমীন জানান, অগ্নিসংযোগের ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের শনাক্ত করতে পুলিশ কাজ শুরু করেছে। তিনি বলেন, ঘটনার পেছনে যারা জড়িত, তাদের আইনের আওতায় আনার জন্য প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ ঘটনায় একটি মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে এবং সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহসহ বিভিন্ন দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

রাজধানীতে যাত্রীবাহী বাসে অগ্নিসংযোগের ঘটনা অতীতেও ঘটেছে, যা জননিরাপত্তা ও যান চলাচলের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। বিশেষ করে ব্যস্ত এলাকায় এ ধরনের ঘটনা যাত্রীদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করে এবং যানবাহন ব্যবস্থাপনায় জটিলতা তৈরি করে। সংশ্লিষ্ট মহল মনে করছে, এ ধরনের ঘটনার দ্রুত ও নিরপেক্ষ তদন্ত প্রয়োজন, যাতে অপরাধীদের শনাক্ত করে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেওয়া যায়।

পুলিশ সূত্র জানায়, ঘটনার সময় ও আশপাশের এলাকায় কারা অবস্থান করছিল, তা শনাক্তে প্রযুক্তিগত সহায়তা নেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি বাসচালক, সহকারী ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। তদন্ত শেষে অগ্নিসংযোগের উদ্দেশ্য ও পেছনের কারণ সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

এ ঘটনায় কোনো হতাহতের ঘটনা না ঘটলেও, চলন্ত বাসে আগুন দেওয়ার মতো ঘটনা জননিরাপত্তার জন্য গুরুতর হুমকি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানিয়েছে, নগরীতে এ ধরনের অপরাধ প্রতিরোধে নজরদারি জোরদার করা হবে এবং সন্দেহভাজনদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

রাজধানী শীর্ষ সংবাদ