খেলাধুলা ডেস্ক
পর্তুগাল জাতীয় ফুটবল দলের প্রধান কোচ রবার্তো মার্টিনেজ আবারও দলে ক্রিস্তিয়ানো রোনালদোর ভূমিকা ও প্রভাবের বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেছেন। তার মতে, রোনালদোর অবদান কেবল গোলসংখ্যার মাধ্যমে বিচার করলে বিষয়টি অসম্পূর্ণ থেকে যায়। মাঠে তার অবস্থান, প্রতিপক্ষের ওপর চাপ সৃষ্টি এবং দলের অন্য খেলোয়াড়দের জন্য সুযোগ তৈরি করার সক্ষমতা পর্তুগাল দলের সামগ্রিক কৌশলে বড় ভূমিকা রাখছে।
বর্তমানে ৪০ বছর বয়সী ক্রিস্তিয়ানো রোনালদো সৌদি আরবের প্রো লিগে খেললেও জাতীয় দলে তার অবস্থান এখনও গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন কোচিং স্টাফ। ক্যারিয়ারে ক্লাব ও জাতীয় দল মিলিয়ে ৯৫০টি গোল করা এই ফরোয়ার্ডকে ঘিরে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাও স্পষ্ট করেছে পর্তুগাল ফুটবল ফেডারেশন। ২০২৬ সালে অনুষ্ঠিতব্য ফিফা বিশ্বকাপে তিনি পর্তুগাল দলের নেতৃত্ব দিতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। রোনালদো নিজেও একাধিকবার জানিয়েছেন, সেটিই হতে পারে তার শেষ বিশ্বকাপ।
রোনালদোর আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার শুরু হয় ২০০৩ সালে, মাত্র ১৮ বছর বয়সে। সে সময় থেকেই টানা ২১ বছর ধরে তিনি পর্তুগাল জাতীয় দলের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে খেলছেন। দীর্ঘ এই সময়ে তিনি দলের অধিনায়কত্ব করেছেন, গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে নেতৃত্ব দিয়েছেন এবং মাঠে ও মাঠের বাইরে দলের মানসিক দৃঢ়তা গড়ে তুলতে ভূমিকা রেখেছেন। তার নেতৃত্বেই পর্তুগাল প্রথমবারের মতো বড় আন্তর্জাতিক সাফল্যের স্বাদ পায়।
সম্প্রতি পর্তুগালের একটি টেলিভিশন চ্যানেলের ফুটবলবিষয়ক বিশেষ অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে কোচ রবার্তো মার্টিনেজ রোনালদোর কৌশলগত গুরুত্ব ব্যাখ্যা করেন। তিনি বলেন, রোনালদো মাঠে থাকলে প্রতিপক্ষ দলকে বাড়তি সতর্ক থাকতে হয় এবং সাধারণত অন্তত দুইজন ডিফেন্ডারকে তার দিকে মনোযোগ দিতে হয়। এর ফলে মাঠের অন্য অংশে জায়গা তৈরি হয়, যা দলের আক্রমণভাগ কাজে লাগাতে পারে। মার্টিনেজের মতে, এই জায়গা ও সময় ব্যবহারের দক্ষতাই আধুনিক ফুটবলে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
কোচ আরও উল্লেখ করেন, বক্সের ভেতরে রোনালদোর অভিজ্ঞতা এবং পরিস্থিতি বোঝার ক্ষমতা পর্তুগাল দলের জন্য বড় সম্পদ। চাপের মুহূর্তে তার সিদ্ধান্ত নেওয়ার সক্ষমতা এবং সঠিক অবস্থান নির্বাচন দলের আক্রমণকে কার্যকর করে তোলে। এসব দিক পরিসংখ্যানের বাইরেও দলের খেলায় প্রভাব ফেলে বলে মনে করেন তিনি।
রোনালদোকে ঘিরে সময় সময়ে ওঠা সমালোচনার প্রসঙ্গেও কথা বলেন মার্টিনেজ। তার ভাষ্য অনুযায়ী, অনেক সময় শুধুমাত্র ব্যক্তিগত পারফরম্যান্স বা গোলসংখ্যা দিয়ে বিচার করা হয়, কিন্তু পুরো ম্যাচ বিশ্লেষণ করা হয় না। তিনি জানান, কোচিং স্টাফ সব খেলোয়াড়কে একই মানদণ্ডে মূল্যায়ন করে এবং বর্তমান সময়ে রোনালদোর মানসিকতা ও পেশাদার আচরণ দলটির জন্য ইতিবাচক উদাহরণ হিসেবে কাজ করছে।
নতুন প্রজন্মের খেলোয়াড়দের ওপর রোনালদোর প্রভাবের বিষয়টিও তুলে ধরেন মার্টিনেজ। তার মতে, জাতীয় দলে রোনালদোর উপস্থিতি তরুণ ফুটবলারদের মধ্যে অনুপ্রেরণা সৃষ্টি করে এবং দায়িত্ববোধ ও শৃঙ্খলার একটি মানদণ্ড স্থাপন করে। অনুশীলন থেকে শুরু করে ম্যাচ প্রস্তুতি পর্যন্ত প্রতিটি ধাপে তার পেশাদার মনোভাব দলের সামগ্রিক পরিবেশে প্রভাব ফেলে।
পর্তুগাল জাতীয় দলের ইতিহাসে রোনালদোর আগমনের আগে বড় কোনো আন্তর্জাতিক শিরোপা ছিল না। তার জাতীয় দলে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর ২০১৬ সালে ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপ জিতে প্রথমবারের মতো ইউরোপ সেরা হওয়ার গৌরব অর্জন করে দলটি। এরপর উয়েফা নেশনস লিগে দুইবার শিরোপা জেতে পর্তুগাল। সর্বশেষ চলতি বছরের জুনে দ্বিতীয়বারের মতো নেশনস লিগ জিতে দেশটির ফুটবল ইতিহাসে নতুন অধ্যায় যোগ হয়।
আসন্ন বড় আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টগুলোকে সামনে রেখে অভিজ্ঞতা ও তরুণদের সমন্বয়ে দল গঠনের পথে হাঁটছে পর্তুগাল। সেই পরিকল্পনায় রোনালদোর ভূমিকা কী হবে, তা নির্ভর করবে তার ফিটনেস, ফর্ম ও দলের কৌশলগত চাহিদার ওপর। তবে কোচিং স্টাফের বক্তব্যে স্পষ্ট, অভিজ্ঞ এই ফরোয়ার্ডের উপস্থিতি এখনও পর্তুগাল দলের জন্য কৌশলগত ও মানসিক দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ বিবেচিত হচ্ছে।


