নিজস্ব প্রতিবেদক
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য সংসদ সদস্য প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদিকে গুলি করে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় রাজধানীর পল্টন থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) সকালে এ তথ্য নিশ্চিত করে পুলিশ জানিয়েছে, এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ছয়জনকে আটক করা হয়েছে, যাদের মধ্যে চারজনকে ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। বাকি দুজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
পল্টন থানার ডিউটি অফিসার উপ-সহকারী পরিদর্শক (এএসআই) রকিবুল হাসান জানান, গুলির ঘটনার পর ভুক্তভোগীর পক্ষ থেকে মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলার পরপরই পুলিশ তদন্ত কার্যক্রম জোরদার করে এবং সংশ্লিষ্ট সন্দেহভাজনদের শনাক্তে অভিযান শুরু করে। এ পর্যন্ত আটক ছয়জনের মধ্যে চারজনের বিরুদ্ধে মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হলেও তদন্তের স্বার্থে অন্যদের জিজ্ঞাসাবাদ অব্যাহত রয়েছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের মিডিয়া উইংয়ের প্রধান মুহাম্মদ তালেবুর রহমান জানান, প্রাথমিক তদন্তে কয়েকজনের সম্পৃক্ততার তথ্য পাওয়া গেছে। গ্রেপ্তারদের মধ্যে রয়েছেন ফয়সাল করিম ওরফে দাউদ খানের স্ত্রী, তার শ্যালক, কথিত এক বান্ধবী এবং মোটরসাইকেলের মালিক আব্দুল হান্নান। তাঁদের বিরুদ্ধে মামলার প্রাথমিক অভিযোগের ভিত্তিতে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। তিনি আরও জানান, বাকি দুইজনকে ঘটনার বিভিন্ন দিক যাচাইয়ের জন্য জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, হামলার মূল সন্দেহভাজন এখনো গ্রেপ্তার হয়নি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রাথমিক ধারণা, অভিযুক্তরা ঘটনার পর পার্শ্ববর্তী একটি দেশে পালিয়ে গেছে। এ বিষয়ে বিভিন্ন সূত্র থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে এবং আন্তর্জাতিক যোগাযোগের মাধ্যমে তাদের অবস্থান শনাক্তের চেষ্টা চলছে। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা অভিযুক্তদের ধরিয়ে দিতে ৫০ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছেন বলেও জানিয়েছে পুলিশ।
এর আগে গত ১২ ডিসেম্বর দুপুরে রাজধানীর বিজয়নগর এলাকায় প্রকাশ্যে শরিফ ওসমান হাদির ওপর গুলি চালানো হয়। দুপুর আনুমানিক আড়াইটার দিকে বক্স কালভার্ট এলাকার সামনে এ ঘটনা ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য অনুযায়ী, হাদি তখন রিকশায় করে যাচ্ছিলেন। এ সময় একটি মোটরসাইকেলে থাকা দুর্বৃত্তরা তাঁকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে এবং দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, দুপুর ২টা ২৫ মিনিটের দিকে মোটরসাইকেল থেকে গুলি ছোড়া হয়। হামলার সময় রিকশায় তাঁর সঙ্গে অন্য কেউ ছিলেন কি না, সে বিষয়ে নিশ্চিত তথ্য পাওয়া যায়নি। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তাঁকে তাৎক্ষণিকভাবে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়, যেখানে চিকিৎসকেরা জরুরি চিকিৎসা প্রদান করেন। পরবর্তী সময়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে একটি বেসরকারি হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয় বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
ঘটনার পরপরই রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়। পুলিশ সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ, মোবাইল ফোনের কল ডিটেইলস রেকর্ড (সিডিআর) বিশ্লেষণ এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য নেওয়ার মাধ্যমে হামলার পরিকল্পনা ও পেছনের উদ্দেশ্য উদ্ঘাটনের চেষ্টা করছে। তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, হামলাটি পূর্বপরিকল্পিত ছিল কি না এবং এর সঙ্গে কোনো রাজনৈতিক বা ব্যক্তিগত বিরোধ জড়িত রয়েছে কি না, সে বিষয়গুলো গুরুত্ব দিয়ে খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
রাজনৈতিক অঙ্গনে এ ঘটনার পর নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানিয়েছে, চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও আসন্ন নির্বাচনী পরিবেশ বিবেচনায় রেখে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নিরাপত্তা জোরদার করার বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি, হামলার সঙ্গে জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় আনতে তদন্ত কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
পুলিশ আশা করছে, তদন্তের অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে মূল পরিকল্পনাকারী ও পলাতক সন্দেহভাজনদের দ্রুত শনাক্ত ও গ্রেপ্তার করা সম্ভব হবে। এ ঘটনায় আদালতে দাখিল করা মামলার পরবর্তী আইনগত কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।


