সংসদ নির্বাচন ও গণভোটে অনিয়ম অনুসন্ধানে বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের নিয়ে ৩০০ কমিটি গঠন

সংসদ নির্বাচন ও গণভোটে অনিয়ম অনুসন্ধানে বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের নিয়ে ৩০০ কমিটি গঠন

নিজস্ব প্রতিবেদক
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটে সম্ভাব্য অনিয়ম অনুসন্ধান এবং বিচারিক কার্যক্রম পরিচালনার লক্ষ্যে বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে ৩০০টি অনুসন্ধান ও বিচারিক কমিটি গঠন করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। রোববার এ বিষয়ে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে কমিশন জানায়, এসব কমিটি মাঠপর্যায়ে নির্বাচন সংক্রান্ত অভিযোগ অনুসন্ধান করবে এবং আইন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, নির্বাচনী অনুসন্ধান ও বিচারিক কমিটিগুলো সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকায় দায়িত্ব পালন করবে। ভোটগ্রহণের আগে, ভোটের দিন এবং ভোটগ্রহণ-পরবর্তী সময়ে উদ্ভূত অভিযোগ, অনিয়ম, আচরণবিধি লঙ্ঘন ও নির্বাচনী অপরাধের বিষয়ে এসব কমিটি তদন্ত করবে। প্রয়োজনে তারা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ, সাক্ষ্য গ্রহণ এবং আইনানুগ নির্দেশনা দিতে পারবে।

নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনায় আরও উল্লেখ করা হয়, অনুসন্ধান ও বিচারিক কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং নির্বাচনী কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে এসব কমিটিকে প্রয়োজনীয় সহায়তা দিতে হবে। মাঠপর্যায়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তাদের সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমেও কমিটিগুলো কাজ করবে।

ইসি সূত্রে জানা গেছে, বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের নিয়ে কমিটি গঠনের উদ্দেশ্য হলো নির্বাচনী অনিয়মের অভিযোগ দ্রুত, নিরপেক্ষ ও আইনসম্মতভাবে নিষ্পত্তি করা। নির্বাচনের সময় কোনো ধরনের জাল ভোট, কেন্দ্র দখল, ভোটারদের বাধা প্রদান, প্রার্থীর আচরণবিধি লঙ্ঘন বা নির্বাচনী সহিংসতার অভিযোগ উঠলে এসব কমিটি তাৎক্ষণিক অনুসন্ধান করতে পারবে। অভিযোগের সত্যতা প্রমাণিত হলে আইন অনুযায়ী সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ থাকবে।

আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি দেশে জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও একটি গণভোট অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ইতোমধ্যে প্রশাসনিক ও নিরাপত্তামূলক প্রস্তুতি জোরদার করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, ভোটগ্রহণকে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করতে তারা একাধিক স্তরের নজরদারি ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। অনুসন্ধান ও বিচারিক কমিটি গঠন সেই ব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

আইন বিশেষজ্ঞদের মতে, বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের সম্পৃক্ততায় গঠিত এসব কমিটি নির্বাচনী অভিযোগ নিষ্পত্তিতে একটি প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো তৈরি করে। এর ফলে অভিযোগ তদন্তে প্রশাসনিক পক্ষপাতের অভিযোগ কমে আসতে পারে এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণে আইনি ভিত্তি আরও সুদৃঢ় হয়। নির্বাচন কমিশনের আইনগত ক্ষমতার আওতায় এসব কমিটি কাজ করবে বলে প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে।

নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কমিটিগুলোর কার্যক্রমের ওপর কমিশনের সরাসরি তদারকি থাকবে। প্রতিটি কমিটিকে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে অনুসন্ধান প্রতিবেদন দাখিল করতে হবে। প্রয়োজনে কমিশন অতিরিক্ত নির্দেশনা দিতে পারবে এবং গুরুতর অভিযোগের ক্ষেত্রে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আগের নির্বাচনগুলোতে অনিয়মের অভিযোগ নিয়ে বিতর্কের প্রেক্ষাপটে এবার আগাম প্রস্তুতি হিসেবে এই কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, নির্বাচন সংক্রান্ত যে কোনো অনিয়মের অভিযোগ গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হবে এবং আইনের শাসন বজায় রেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

নির্বাচন কমিশন আশা করছে, এই উদ্যোগের মাধ্যমে নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি বাড়বে। ভোটারদের আস্থা রক্ষায় এবং নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিশ্চিত করতে অনুসন্ধান ও বিচারিক কমিটিগুলোর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ হবে বলে কমিশন মনে করছে।

জাতীয় শীর্ষ সংবাদ