সাংবাদিক আনিস আলমগীর ও অভিনেত্রী মেহের আফরোজ শাওনসহ চারজনের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে অভিযোগ

সাংবাদিক আনিস আলমগীর ও অভিনেত্রী মেহের আফরোজ শাওনসহ চারজনের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর উত্তরা পশ্চিম থানায় সাংবাদিক আনিস আলমগীর, অভিনেত্রী মেহের আফরোজ শাওনসহ চারজনের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। রোববার (১৪ ডিসেম্বর) রাতে জুলাই রেভ্যুলেশনারি অ্যালায়েন্সের কেন্দ্রীয় সংগঠক আরিয়ান আহমেদ থানায় উপস্থিত হয়ে অভিযোগটি দায়ের করেন। অভিযোগ দায়েরের পর সাংবাদিক আনিস আলমগীরকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) কার্যালয়ে নেওয়া হয়।

অভিযোগপত্রে সাংবাদিক আনিস আলমগীর ও অভিনেত্রী মেহের আফরোজ শাওন ছাড়াও আরও দুইজনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। তারা হলেন মারিয়া কিশপট্ট এবং ইমতু রাতিশ ইমতিয়াজ। অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগ আনা হয়েছে। পুলিশ সূত্র জানায়, অভিযোগটি গ্রহণ করে আইনানুগ প্রক্রিয়ায় বিষয়টি যাচাই-বাছাই শুরু করা হয়েছে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগ জানায়, অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সাংবাদিক আনিস আলমগীরকে কিছু বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডিবি কার্যালয়ে আনা হয়েছে। গোয়েন্দা পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, জিজ্ঞাসাবাদের সময় কয়েকটি প্রশ্নের সন্তোষজনক উত্তর দিতে না পারায় তার বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য যাচাই শেষে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, সাংবাদিক আনিস আলমগীরকে কিছু বিষয়ে বক্তব্য জানার জন্য ডিবি কার্যালয়ে নেওয়া হয়েছে। তদন্ত ও জিজ্ঞাসাবাদ শেষে প্রয়োজনীয় তথ্য যাচাই করে জনসংযোগ শাখার মাধ্যমে বিস্তারিত জানানো হবে। তিনি আরও জানান, অভিযোগটি প্রাথমিকভাবে পর্যালোচনা করা হচ্ছে এবং তদন্তের স্বার্থে এ মুহূর্তে এর বেশি কিছু বলা সম্ভব নয়।

অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়, ২০২৪ সালের জুলাই মাসে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশত্যাগ করলেও তার অনুসারীরা বিভিন্ন কৌশলে দেশে অবস্থান করে রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত রয়েছে। অভিযোগে বলা হয়েছে, এসব ব্যক্তি দেশের স্থিতিশীলতা ও গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত করার উদ্দেশ্যে সংঘবদ্ধভাবে পরিকল্পনা ও ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। তারা নিজেদের কর্মকাণ্ড বাস্তবায়নের জন্য বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচারণা চালিয়ে আসছে।

অভিযোগে আরও বলা হয়, অভিযুক্তরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং বিভিন্ন টেলিভিশন টকশোতে অংশ নিয়ে নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠনকে পুনরুজ্জীবিত করার পক্ষে বক্তব্য ও প্রচারণা চালিয়ে আসছেন। এর মাধ্যমে তারা একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলকে পুনর্বাসনের চেষ্টা করছে বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে। অভিযোগকারী পক্ষের দাবি, এসব কর্মকাণ্ড রাষ্ট্রের নিরাপত্তা ও জনশৃঙ্খলার জন্য হুমকিস্বরূপ।

পুলিশ সূত্র জানায়, সন্ত্রাসবিরোধী আইনের আওতায় দায়ের করা অভিযোগের ভিত্তিতে প্রাথমিক অনুসন্ধান শুরু হয়েছে। অভিযুক্তদের ভূমিকা, বক্তব্য ও সংশ্লিষ্ট কার্যক্রম আইন অনুযায়ী বিশ্লেষণ করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। তদন্তের অংশ হিসেবে প্রয়োজন হলে অন্যান্য অভিযুক্তদের বিরুদ্ধেও জিজ্ঞাসাবাদ ও আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হতে পারে বলে জানা গেছে।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডের অভিযোগ অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। অভিযোগের সত্যতা যাচাই, প্রমাণ সংগ্রহ এবং আইনগত প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার পরই পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত কাউকে দোষী বা নির্দোষ হিসেবে চিহ্নিত না করার আহ্বান জানিয়েছে পুলিশ।

এই ঘটনায় সংশ্লিষ্ট মহল ও সাধারণ মানুষের মধ্যে নানা আলোচনা শুরু হয়েছে। তবে পুলিশ ও তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, আইনের শাসন নিশ্চিত করতে সব অভিযোগ নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করা হবে এবং প্রমাণের ভিত্তিতেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

আইন আদালত শীর্ষ সংবাদ