সুদানে জাতিসংঘ মিশনে নিহত ছয় বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীর আত্মত্যাগ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রশংসিত: নৌপরিবহন উপদেষ্টা

সুদানে জাতিসংঘ মিশনে নিহত ছয় বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীর আত্মত্যাগ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রশংসিত: নৌপরিবহন উপদেষ্টা

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক

সুদানে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে দায়িত্ব পালনকালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ছয় সদস্য নিহত হওয়ার ঘটনায় গভীর শোক ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন নৌপরিবহন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন। তিনি বলেছেন, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশের অবদান আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে অত্যন্ত প্রশংসিত এবং বিশ্ব শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষায় বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীরা দীর্ঘদিন ধরে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছেন।

শনিবার দেওয়া এক শোকবার্তায় নৌপরিবহন উপদেষ্টা এ মন্তব্য করেন। শোকবার্তায় তিনি সুদানে সংঘটিত নৃশংস হামলায় প্রাণ হারানো বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান এবং ঘটনার তীব্র নিন্দা প্রকাশ করেন। একই সঙ্গে তিনি এ ঘটনায় গুরুতর আহত অন্যান্য শান্তিরক্ষীদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করেন।

শোকবার্তায় ড. এম সাখাওয়াত হোসেন উল্লেখ করেন, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে নিয়োজিত বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীরা সবসময় সাহস, পেশাদারিত্ব ও আত্মনিবেদনের মাধ্যমে বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করে আসছেন। সুদানে কর্তব্যরত অবস্থায় ছয়জন বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীর শহীদ হওয়া দেশের জন্য গভীর বেদনার এবং জাতির জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি। বিশ্বশান্তি ও মানবতার সেবায় নিয়োজিত অবস্থায় তাঁদের এই আত্মত্যাগ আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশের ভূমিকার গুরুত্বকে আরও স্পষ্টভাবে তুলে ধরে।

সরকারি সূত্রে জানা গেছে, গত ১৩ ডিসেম্বর সুদানের আবেই এলাকায় এক অনাকাঙ্ক্ষিত ও সহিংস হামলার ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে দায়িত্ব পালনরত বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ছয়জন সদস্য নিহত হন এবং আরও আটজন শান্তিরক্ষী মারাত্মকভাবে আহত হন। আহতদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা গুরুতর বলে জানা গেছে। তাঁদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ও সেবার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

সুদানে চলমান সহিংস পরিস্থিতি দীর্ঘদিন ধরেই জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের জন্য বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষ, নিরাপত্তাহীনতা এবং মানবিক সংকটের কারণে শান্তিরক্ষীদের দায়িত্ব পালন ক্রমেই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে। এমন বাস্তবতায় বাংলাদেশসহ শান্তিরক্ষা মিশনে অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর সদস্যরা জীবনবাজি রেখে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে কাজ করে যাচ্ছেন।

নৌপরিবহন উপদেষ্টা তাঁর শোকবার্তায় বলেন, বাংলাদেশ শান্তিরক্ষা মিশনে অংশগ্রহণের মাধ্যমে বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। শান্তিরক্ষীরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আস্থার প্রতীক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। তাঁদের আত্মত্যাগ শুধু বাংলাদেশের জন্য নয়, বরং আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষার ক্ষেত্রেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

তিনি শহীদ শান্তিরক্ষীদের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং তাঁদের শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। পাশাপাশি আহত আটজন শান্তিরক্ষীর দ্রুত আরোগ্য কামনা করে তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে তাঁদের সর্বোচ্চ চিকিৎসা ও সহায়তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানান।

শোকবার্তায় নৌপরিবহন উপদেষ্টা সুদানে চলমান সহিংসতা অবিলম্বে বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, শান্তিরক্ষা মিশনের সদস্যদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের যৌথ দায়িত্ব। এ ধরনের হামলা বন্ধে এবং শান্তিপূর্ণ সমাধানের পথে এগিয়ে যেতে সংশ্লিষ্ট দেশ ও পক্ষগুলোর সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশ বর্তমানে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ শান্তিরক্ষা বাহিনী প্রেরণকারী দেশ। আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীর সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছেন। সুদানে সাম্প্রতিক এই ঘটনা আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বিদ্যমান ঝুঁকি এবং শান্তিরক্ষীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি নতুন করে সামনে নিয়ে এসেছে।

জাতীয় শীর্ষ সংবাদ