স্পট মার্কেট থেকে এক কার্গো এলএনজি কেনার অনুমোদন

স্পট মার্কেট থেকে এক কার্গো এলএনজি কেনার অনুমোদন

অর্থনীতি ডেস্ক
দেশের ক্রমবর্ধমান জ্বালানি চাহিদা পূরণ এবং শীত মৌসুমে গ্যাস সরবরাহ স্থিতিশীল রাখতে স্পট মার্কেট থেকে এক কার্গো তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) ক্রয়ের প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে সরকার। আন্তর্জাতিক কোটেশন পদ্ধতি অনুসরণ করে এ ক্রয় সম্পন্ন করা হবে।

আজ সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির সভায় এ অনুমোদন দেওয়া হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পাবলিক প্রকিউরমেন্ট রুলস ২০২৫ অনুসরণ করে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ এ প্রস্তাব উত্থাপন করে, যা পর্যালোচনা শেষে অনুমোদন পায়।

অনুমোদিত প্রস্তাব অনুযায়ী, আগামী বছরের ৯ থেকে ১০ জানুয়ারির মধ্যে সরবরাহের জন্য দক্ষিণ কোরিয়াভিত্তিক প্রতিষ্ঠান পোস্কো ইন্টারন্যাশনাল করপোরেশন থেকে এক কার্গো এলএনজি কেনা হবে। এ ক্রয়ের মোট মূল্য ধরা হয়েছে ৪২০ কোটি ৯ লাখ টাকা। এতে প্রতি এমএমবিটিইউ এলএনজির দাম পড়বে ৯ দশমিক ৯৯ মার্কিন ডলার, যা আন্তর্জাতিক স্পট মার্কেটের চলমান কোটেশনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, দেশের প্রাকৃতিক গ্যাস উৎপাদন চাহিদার তুলনায় কম থাকায় শিল্প, বিদ্যুৎ উৎপাদন ও আবাসিক খাতে সরবরাহ ঘাটতির ঝুঁকি তৈরি হয়, বিশেষ করে শীত মৌসুমে। এ সময় বিদ্যুৎ উৎপাদনে গ্যাসচালিত কেন্দ্রগুলোর ওপর চাপ বৃদ্ধি পায় এবং শিল্প কারখানায় উৎপাদন অব্যাহত রাখতে অতিরিক্ত গ্যাসের প্রয়োজন দেখা দেয়। এই প্রেক্ষাপটে স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি আমদানির মাধ্যমে স্বল্পমেয়াদে ঘাটতি সামাল দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

সরকারি কর্মকর্তারা জানান, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ উৎপাদন নিশ্চিত করা অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সচল রাখার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শিল্প খাতের উৎপাদন ব্যাহত হলে রপ্তানি আয় ও কর্মসংস্থানে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। একইভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহে বিঘ্ন ঘটলে সামগ্রিক অর্থনৈতিক কার্যক্রমে চাপ সৃষ্টি হয়। এ কারণে সময়োপযোগী এলএনজি আমদানি দেশের জ্বালানি নিরাপত্তা রক্ষায় সহায়ক ভূমিকা রাখবে।

বর্তমানে বাংলাদেশ দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির পাশাপাশি স্পট মার্কেট থেকেও এলএনজি আমদানি করে থাকে। দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির মাধ্যমে নির্দিষ্ট পরিমাণ এলএনজি তুলনামূলক স্থিতিশীল দামে পাওয়া গেলেও, হঠাৎ চাহিদা বৃদ্ধি বা সরবরাহ ঘাটতির সময়ে স্পট মার্কেট নির্ভরতা বাড়ে। সংশ্লিষ্টরা জানান, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম তুলনামূলক সহনীয় থাকায় এ সময়ে স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি কেনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

জ্বালানি খাত সংশ্লিষ্ট নীতিনির্ধারকদের মতে, ভবিষ্যতে দেশীয় গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলন বাড়ানোর পাশাপাশি নবায়নযোগ্য জ্বালানির অংশ বৃদ্ধি না করা গেলে আমদানি নির্ভরতা অব্যাহত থাকবে। তবে স্বল্পমেয়াদে বিদ্যুৎ ও শিল্প খাতে স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে এলএনজি আমদানির বিকল্প নেই। এ ধরনের ক্রয় সিদ্ধান্তের মাধ্যমে সরকার তাৎক্ষণিক চাহিদা পূরণের পাশাপাশি অর্থনৈতিক কার্যক্রমে ধারাবাহিকতা নিশ্চিত করার চেষ্টা করছে।

অর্থ মন্ত্রণালয় ও জ্বালানি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, অনুমোদিত এ ক্রয় প্রক্রিয়া নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করা হলে জানুয়ারি মাসে গ্যাস সরবরাহ ব্যবস্থায় অতিরিক্ত চাপ কিছুটা কমবে বলে আশা করা হচ্ছে। এর ফলে বিদ্যুৎ উৎপাদন ও শিল্প খাতে গ্যাস সংকটের ঝুঁকি হ্রাস পেতে পারে এবং সামগ্রিকভাবে জ্বালানি ব্যবস্থাপনায় স্বস্তি আসবে।

অর্থ বাণিজ্য শীর্ষ সংবাদ