আন্তর্জাতিক ডেস্ক
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার একটি ধ্বংসপ্রাপ্ত ভবনের ধ্বংসস্তূপ থেকে সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) ৪৫টি মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এই ধ্বংসস্তূপের নিচে দীর্ঘদিন ধরে আটকা পড়ে থাকা নিহতদের দেহ উদ্ধার অভিযানে স্থানীয় সিভিল ডিফেন্স বাহিনী অংশ নিয়েছে।
গাজা সিভিল ডিফেন্সের মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল মঙ্গলবার সাংবাদিকদের বলেন, উদ্ধার অভিযানে বড় ধরনের যান্ত্রিক সরঞ্জামের অভাব আছে। তিনি জানান, যদি বড় এক্সকেভেটর ব্যবহার করা যেত, তবে উদ্ধার কার্যক্রম দ্রুত সম্পন্ন করা যেত। এ ধরনের সীমিত সরঞ্জামের কারণে বর্তমানে উদ্ধার অভিযান দীর্ঘায়িত হচ্ছে এবং প্রাথমিক হিসাব অনুযায়ী, সব মৃতদেহ উদ্ধার করতে তিন বছরের মতো সময় লাগতে পারে।
আবু মুহাম্মদ সালেম নামে একজন নিহত ব্যক্তির আত্মীয় জানান, বোমাবর্ষণের ফলে তাদের বাড়িটি ধ্বংস হয়ে যায়। বাড়ির মধ্যে থাকা পরিবারের সদস্যরা ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে মারা যান। তিনি আশা প্রকাশ করেছেন যে, ধ্বংসস্তূপ থেকে তার পরিবারের সকল সদস্যের মরদেহ উদ্ধার করা সম্ভব হবে এবং তাদেরকে দেইর এল-বালাহ কবরস্থানে সমাহিত করা হবে। তিনি বলেন, এতে তাদের স্মৃতির অন্তিম চিহ্ন সংরক্ষিত থাকবে।
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকা দীর্ঘদিন ধরে বিরোধপূর্ণ সহিংসতার সঙ্গে জড়িত। স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা উল্লেখ করেছেন, নিয়মিত বিমান হামলা এবং গোলাবর্ষণের ফলে উপত্যকায় বাস করা সাধারণ মানুষজনের জীবনযাত্রা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ধ্বংসপ্রাপ্ত ভবন ও অবকাঠামোর সংখ্যা ক্রমবর্ধমান এবং জীবনাবস্থা সংকটজনক।
এছাড়া, স্থানীয় কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ইসরায়েলি সেনারা গাজার বিভিন্ন এলাকা থেকে সরানোর পর মৃতদেহ উদ্ধার ও আহতদের চিকিৎসা কার্যক্রম শুরু হয়েছে। দীর্ঘদিনের অবরুদ্ধতা এবং সীমিত সংস্থান মূলত উদ্ধার কার্যক্রমে বড় বাধা সৃষ্টি করছে। বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, এ ধরনের ধ্বংসস্তূপ থেকে মৃতদেহ উদ্ধার প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করতে দীর্ঘ সময় লাগবে এবং এ সময়ে তত্ত্বাবধায়ক নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়তে পারে।
গত দুই বছর ধরে গাজায় চলমান সংঘর্ষ ও বোমাবর্ষণের ফলে অসংখ্য ভবন ধসে পড়েছে। এতে সাধারণ মানুষজন ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং শিশু ও বৃদ্ধরা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো উদ্ধার অভিযান এবং নাগরিকদের সুরক্ষার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে বারবার সতর্কবার্তা জারি করেছে।
গাজা উপত্যকার মানবিক অবস্থা এখনও সংকটজনক। ধ্বংসস্তূপের নিচে থাকা নিহতদের দেহ উদ্ধার, আহতদের চিকিৎসা এবং প্রাথমিক মানবিক সহায়তা কার্যক্রম চালু রাখা জরুরি। স্থানীয় সিভিল ডিফেন্সের পক্ষ থেকে উল্লেখ করা হয়েছে, আন্তর্জাতিক সহায়তা ও প্রযুক্তিগত সহায়তা পেলে উদ্ধার কার্যক্রম দ্রুততর ও কার্যকরভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব।


