নিজস্ব প্রতিবেদক
৫৫তম মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জামায়াতে ইসলামীর উদ্যোগে শহীদ ও আহত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বিশেষ দোয়া ও আলোচনা অনুষ্ঠানে দলের শীর্ষ নেতারা দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব বিষয়ে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরেছেন। মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) রাজধানীর ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জামায়াত কার্যালয়ের হলরুমে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ও সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেন, বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্ম কোনো ভিনদেশি আধিপত্য বা হস্তক্ষেপ মেনে নেয়নি এবং ভবিষ্যতেও নেবে না।
অনুষ্ঠানে অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেন, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে নয় মাস ধরে বাংলাদেশের জনগণ পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে। তাঁর বক্তব্যে তিনি মুক্তিযুদ্ধের শেষ পর্যায়ে পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণ প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তোলেন এবং এ বিষয়ে ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটের আলোচনা করেন। তিনি দাবি করেন, ওই সময়ের কিছু আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক সিদ্ধান্তের ফলে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব যথাযথভাবে প্রতিফলিত হয়নি বলে তাদের রাজনৈতিক বিশ্লেষণে উঠে আসে।
তিনি আরও বলেন, স্বাধীনতা অর্জনের পরও বাংলাদেশ বিভিন্ন সময়ে বহিরাগত প্রভাব ও আধিপত্যের মুখোমুখি হয়েছে বলে জামায়াতে ইসলামীর অবস্থান। তাঁর ভাষ্য অনুযায়ী, দেশের তরুণ সমাজ এসব প্রভাব প্রত্যাখ্যান করে এসেছে এবং রাষ্ট্রের স্বাধীন অবস্থান বজায় রাখার দাবিতে সোচ্চার রয়েছে।
অনুষ্ঠানে বক্তব্যে তিনি সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতির কথাও উল্লেখ করেন। তাঁর মতে, সাম্প্রতিক সময়ে দেশে ঘটে যাওয়া গণআন্দোলন ও রাজনৈতিক পরিবর্তনকে তরুণ সমাজের সক্রিয় অংশগ্রহণের একটি উদাহরণ হিসেবে দেখা যায়। তিনি বলেন, এসব আন্দোলনের মাধ্যমে জনগণ তাদের রাজনৈতিক অধিকার ও রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্তে অংশগ্রহণের আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করেছে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান মুক্তিযুদ্ধকালীন আঞ্চলিক ভূরাজনৈতিক বাস্তবতা নিয়ে কথা বলেন। তিনি বলেন, ১৯৭১ সালে পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্রগুলো বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে বিভিন্নভাবে যুক্ত ছিল এবং সে সময়ের আন্তর্জাতিক রাজনীতির প্রভাব দেশটির ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। তাঁর বক্তব্যে তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের সম্পদ, অর্থনীতি ও অবকাঠামো নিয়ে নানা আলোচনা ও বিতর্ক তৈরি হয়েছে, যা ইতিহাস পর্যালোচনার ক্ষেত্রে বিবেচনায় নেওয়া প্রয়োজন।
তিনি আরও বলেন, সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর আঞ্চলিক রাজনীতিতে নতুন বাস্তবতা তৈরি হয়েছে বলে তাদের দল মনে করে। তাঁর বক্তব্যে তিনি গত কয়েক দশকের রাজনৈতিক শাসনামল, উন্নয়ন কার্যক্রম ও দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে আলোচনার প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেন।
অনুষ্ঠানের সভাপতির বক্তব্যে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ও কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য আব্দুস সবুর ফকির বলেন, প্রতি বছর বিজয় দিবস উপলক্ষে আলোচনা হলেও মুক্তিযুদ্ধের কিছু ঐতিহাসিক প্রশ্ন নতুন প্রজন্মের সামনে স্পষ্টভাবে উপস্থাপিত হয় না। তাঁর মতে, ইতিহাসের বিভিন্ন অধ্যায় নিয়ে খোলামেলা ও তথ্যভিত্তিক আলোচনা না হলে তরুণ সমাজ সঠিকভাবে ইতিহাস অনুধাবন করতে পারবে না।
তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধে সাধারণ মানুষের ত্যাগ, জীবনদান ও ক্ষয়ক্ষতির বিষয়গুলো যথাযথভাবে মূল্যায়ন করা জরুরি। একই সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক সিদ্ধান্তগুলোর প্রভাব নিয়ে গবেষণা ও আলোচনা প্রয়োজন বলে তিনি মত দেন।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের নায়েবে আমির অ্যাডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন, কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য ও সহকারী সেক্রেটারি মোহাম্মদ কামাল হোসেন ও মুহাম্মদ শামছুর রহমান, মহানগর কর্মপরিষদ সদস্য ও শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সভাপতি আব্দুস সালাম এবং মহানগর কর্মপরিষদ সদস্য মুহাম্মদ শরিফুল ইসলাম। বক্তারা তাঁদের বক্তব্যে বিজয় দিবসের তাৎপর্য, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং সমসাময়িক রাজনৈতিক বাস্তবতা নিয়ে আলোচনা করেন।
দোয়া ও আলোচনা অনুষ্ঠানে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জামায়াতে ইসলামীর বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরাও উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মার মাগফিরাত এবং আহত মুক্তিযোদ্ধাদের সুস্থতা কামনা করে বিশেষ দোয়া করা হয়।


