আন্তর্জাতিক ডেস্ক
রাশিয়ার মস্কোয় বাংলাদেশ দূতাবাসে দায়িত্ব পালনকালে অভ্যন্তরীণ প্রশাসনিক সমস্যা সৃষ্টি এবং সহকর্মীদের সঙ্গে অসংগত আচরণের অভিযোগে ‘স্ট্যান্ড রিলিজ’ হওয়া বাংলাদেশের সাবেক ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত (চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স–সিডিএ) মো. ফয়সাল আহমেদকে যুক্তরাজ্যের পুলিশ আটক করেছে। স্থানীয় সময় সোমবার সকালে ইংল্যান্ডের বার্মিংহামে তাকে আটক করা হয় বলে কূটনৈতিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।
সূত্র অনুযায়ী, সোমবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে বার্মিংহাম এলাকায় অবস্থানকালে যুক্তরাজ্যের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাকে হেফাজতে নেয়। আটকের নির্দিষ্ট কারণ সম্পর্কে তাৎক্ষণিকভাবে যুক্তরাজ্যের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো বিবৃতি দেওয়া হয়নি। তবে জানা গেছে, সাম্প্রতিক সময়ে তার বিরুদ্ধে পারিবারিক নির্যাতন, স্থানীয় কমিউনিটিকে ভয়ভীতি প্রদর্শন এবং অস্থির আচরণের একাধিক অভিযোগ ওঠে। এসব অভিযোগের ভিত্তিতেই তাকে আটক করা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে।
মো. ফয়সাল আহমেদ চলতি বছরের মে মাসে রাশিয়ার মস্কোয় অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসে দায়িত্ব পালনকালে প্রশাসনিক জটিলতা ও আচরণগত অভিযোগের মুখে পড়েন। ওই সময় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তাকে ‘স্ট্যান্ড রিলিজ’ দেওয়া হয় এবং দ্রুত ঢাকায় ফিরে আসার নির্দেশ দেওয়া হয়। সাধারণত ‘স্ট্যান্ড রিলিজ’ বলতে কোনো কূটনীতিককে সাময়িকভাবে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়ে দেশে ফিরে রিপোর্ট করার নির্দেশ বোঝায়, যা প্রশাসনিক তদন্ত বা পরবর্তী সিদ্ধান্তের পূর্বধাপ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, নির্দেশ পাওয়ার পরও মো. ফয়সাল আহমেদ নির্ধারিত সময়ে দেশে ফেরেননি। বরং তিনি রাশিয়া ত্যাগ করে যুক্তরাজ্যে চলে যান। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলোর ধারণা, যুক্তরাজ্যে অবস্থানকালে তিনি রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন করেছেন। তবে এ বিষয়ে যুক্তরাজ্যের কর্তৃপক্ষ বা সংশ্লিষ্ট আন্তর্জাতিক সংস্থার পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো তথ্য প্রকাশ করা হয়নি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (পূর্ব ও পশ্চিম) ড. মো. নজরুল ইসলাম বলেন, যুক্তরাজ্যে মো. ফয়সাল আহমেদের গ্রেপ্তারের বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের কাছে নিশ্চিত কোনো তথ্য নেই। তবে তিনি জানান, স্ট্যান্ড রিলিজের পর তাকে দ্রুত ঢাকায় ফিরে আসার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল এবং তিনি সে নির্দেশ মানেননি—এ তথ্য মন্ত্রণালয়ের নথিতে রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে মন্ত্রণালয় পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে বলেও জানান তিনি।
সূত্র আরও জানায়, যুক্তরাজ্যে অবস্থানকালে মো. ফয়সাল আহমেদের বিরুদ্ধে স্থানীয় পর্যায়ে একাধিক অভিযোগ জমা পড়ে। এর মধ্যে পারিবারিক সহিংসতার অভিযোগ ছাড়াও প্রতিবেশী ও কমিউনিটির সদস্যদের সঙ্গে বিরোধ, ভয়ভীতি প্রদর্শন এবং অস্বাভাবিক আচরণের বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এসব অভিযোগের প্রেক্ষাপটে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে নেয়। এর আগেও গত সপ্তাহে তাকে একবার আটক করা হয়েছিল, তবে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পর সেদিন তাকে ছেড়ে দেওয়া হয় বলে জানা গেছে।
কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, একজন সাবেক দায়িত্বপ্রাপ্ত কূটনীতিকের বিরুদ্ধে বিদেশের মাটিতে এ ধরনের অভিযোগ ওঠা এবং পুলিশের হেফাজতে নেওয়ার ঘটনা বাংলাদেশের কূটনৈতিক ভাবমূর্তির জন্য সংবেদনশীল বিষয় হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। পাশাপাশি, স্ট্যান্ড রিলিজের পর দেশে না ফেরা এবং তৃতীয় দেশে অবস্থান নেওয়ার ঘটনা প্রশাসনিক ও আইনগত প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত বিভিন্ন প্রশ্নও উত্থাপন করছে।
বর্তমানে যুক্তরাজ্যের আইনি প্রক্রিয়া অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। তদন্তের অগ্রগতি এবং আইনি সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করে তার ভবিষ্যৎ অবস্থান ও করণীয় নির্ধারিত হবে। এদিকে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে কূটনৈতিক পর্যায়ে বিষয়টি সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ এবং পরিস্থিতি মূল্যায়নের কাজ চলমান রয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে।


