শাবনূরের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জনের গল্প

শাবনূরের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জনের গল্প

বিনোদন ডেস্ক

ঢাকাই সিনেমার নব্বইয়ের দশকে কোটি মানুষের হৃদয়ের নায়িকা হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছিলেন শাবনূর। দীর্ঘ সময় ধরে পর্দায় তার উপস্থিতি দর্শক ও নির্মাতাদের কাছে বিশেষ গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছিল। যদিও কয়েক বছর ধরেই তিনি অভিনয় থেকে দূরে রয়েছেন, জনপ্রিয়তায় তার কোনও কমতি দেখা যায়নি। বুধবার (১৭ ডিসেম্বর) এই অভিনেত্রীর জন্মদিনে তার অভিনয় জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় এবং জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জনের পেছনের ঘটনা আলোচনা করা হলো।

শাবনূরের অভিনয় যাত্রা শুরু হয় ‘চাঁদনী রাতে’ চলচ্চিত্র দিয়ে। ব্যবসাসফল না হলেও এই সিনেমা তার প্রতিভার সূচনা চিহ্নিত করে। পরবর্তী সময়ে ‘তুমি আমার’, ‘সুজন সখী’, ‘স্বপ্নের ঠিকানা’, ‘স্বপ্নের পৃথিবী’, ‘আনন্দ অশ্রু’, ‘বিয়ের ফুল’, ‘প্রেমের তাজমহল’, ‘মাটির ফুল’সহ একাধিক সিনেমায় অভিনয় করে তিনি সময়ের নির্ভরযোগ্য নায়িকার পরিচয় লাভ করেন। তবে জাতীয় স্বীকৃতি আসে ২০০৫ সালে ‘দুই নয়নের আলো’ সিনেমার মাধ্যমে, যা তার প্রথম ও একমাত্র জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার এনে দেয়।

‘দুই নয়নের আলো’ সিনেমার প্রথম দিকে শাবনূরের তেমন আগ্রহ ছিল না। পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান মানিক তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন এবং বিবিএ অধ্যয়নরত। তরুণ পরিচালকের প্রস্তাব শুরুর দিকে শাবনূরের কাছে গুরুত্ব পায়নি। কিন্তু পরে তিনি দেখেন যে, মাত্র ২৩-২৪ বছরের এই তরুণ অত্যন্ত আত্মবিশ্বাসী ও পরিকল্পিতভাবে সিনেমাটি তৈরি করতে চাইছেন।

শাবনূরের এই প্রতিক্রিয়া পরিচালককে অনুপ্রাণিত করে। শিডিউল সংকুলানের মধ্যে তিনি একটানা ৪০ দিন সিনেমার শুটিংয়ে অংশ নেন। শুটিং চলাকালীন একটি দৃশ্যে সরিষা খাওয়ার দৃশ্যের জন্য দুই দিন কুয়াশার কারণে কাজ স্থগিত থাকে। তৃতীয় দিন সকাল আটটায় শাবনূর সময়মতো উপস্থিত হন এবং শুটিং শেষ হলে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফাইনাল পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য পরিচালককে নিজে পৌঁছে দেন। এই দায়িত্বশীলতা ও সহযোগিতা পরিচালকের মনে গভীর প্রভাব ফেলে।

‘দুই নয়নের আলো’ মুক্তির পর শাবনূরের ক্যারিয়ারকে নতুন মাত্রা প্রদান করে। এই সিনেমার জন্য তিনি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন। এছাড়াও ছবিটি শ্রেষ্ঠ গায়ক ও গায়িকা বিভাগেও পুরস্কৃত হয়। চলচ্চিত্রটি মুক্তির দেড় যুগ পেরিয়ে গেলেও এটি শাবনূরের ক্যারিয়ারে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও উজ্জ্বল অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত।

বর্তমানে শাবনূর অস্ট্রেলিয়ায় বসবাস করছেন। রুপালি পর্দার ব্যস্ত দিনগুলো পেছনে ফেলে অন্য জীবনে থাকলেও ‘দুই নয়নের আলো’ তার অভিনয় জীবনের সর্বোচ্চ স্বীকৃতি হিসেবে থেকে গেছে। এই এক সিনেমা তার জন্য বছরের পর বছর অপেক্ষার পর ফসল হিসেবে এসেছে, যা ঢাকাই সিনেমার ইতিহাসে তার অবদানের অন্যতম প্রতীক।

বিনোদন শীর্ষ সংবাদ