নিজস্ব প্রতিবেদক
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান আগামী ২৫ ডিসেম্বর যুক্তরাজ্যের লন্ডন থেকে বাংলাদেশে ফেরার ঘোষণা দিয়েছেন। দেশে প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত বিএনপির নেতাকর্মীদের লন্ডনের বিমানবন্দরে উপস্থিত না হওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির ভাবমূর্তি ও শৃঙ্খলার বিষয়টি বিবেচনায় রেখে এ আহ্বান জানানো হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) স্থানীয় সময় রাতে লন্ডনে যুক্তরাজ্য বিএনপি আয়োজিত বিজয় দিবস উপলক্ষে অনুষ্ঠিত এক আলোচনা সভায় বক্তব্য প্রদানকালে তারেক রহমান তার দেশে ফেরার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। একই সঙ্গে তিনি দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে সংযম, শৃঙ্খলা ও দায়িত্বশীল আচরণ বজায় রাখার আহ্বান জানান। সভায় তিনি দীর্ঘদিনের প্রবাসজীবন, রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড এবং দলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নানা অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন।
বক্তব্যে তারেক রহমান জানান, প্রায় ১৮ বছর ধরে তিনি যুক্তরাজ্যে অবস্থান করছেন। এই দীর্ঘ সময়ে তিনি বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও দলীয় কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের মাধ্যমে যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত বিএনপির নেতাকর্মী এবং প্রবাসী বাংলাদেশিদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ বজায় রেখেছেন। প্রবাসজীবনের এই সময়কালে অনেক স্মৃতি, অভিজ্ঞতা ও ঘটনাপ্রবাহ তার জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। এ সময় তিনি যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত দলীয় নেতাকর্মীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং দীর্ঘদিন ধরে দলের প্রতি তাদের অব্যাহত সমর্থনের কথা স্মরণ করেন।
দেশে ফেরার প্রসঙ্গে তারেক রহমান বলেন, আগামী ২৫ ডিসেম্বর তিনি বাংলাদেশে ফিরে যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন এবং এ জন্য তিনি নেতাকর্মীদের দোয়া কামনা করেন। তবে তিনি স্পষ্টভাবে অনুরোধ জানান, ওই দিন যেন কেউ তাকে বিদায় জানাতে লন্ডনের বিমানবন্দরে না যান। তার মতে, বিমানবন্দরে অতিরিক্ত ভিড় বা জমায়েত হলে সেখানে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হতে পারে, যা স্থানীয় প্রশাসন ও সাধারণ মানুষের দৃষ্টিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
তিনি আরও বলেন, বিমানবন্দরে বড় ধরনের সমাগম হলে তা প্রবাসে বসবাসরত বাংলাদেশিদের সামগ্রিক ভাবমূর্তির ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। প্রবাসে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের আচরণ আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে দেশের পরিচয়ের সঙ্গে যুক্ত থাকে উল্লেখ করে তিনি সবাইকে এ বিষয়ে সচেতন থাকার আহ্বান জানান। তারেক রহমানের ভাষায়, এ ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে বাংলাদেশ এবং বিএনপির সুনাম ক্ষুণ্ন হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
বক্তব্যে তিনি উল্লেখ করেন, তার অনুরোধকে সম্মান জানিয়ে যারা বিমানবন্দরে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেবেন, তিনি তাদেরকে দলীয় শৃঙ্খলা ও দেশের সম্মানের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হিসেবে বিবেচনা করবেন। একই সঙ্গে তিনি বলেন, অনুরোধ উপেক্ষা করে যারা সেখানে উপস্থিত হওয়ার সিদ্ধান্ত নেবেন, তিনি ধরে নেবেন যে তারা ব্যক্তিগত উদ্যোগে সেখানে গেছেন।
আলোচনা সভায় তারেক রহমান দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে শান্তিপূর্ণ ও দায়িত্বশীল আচরণ বজায় রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, রাজনৈতিক মতাদর্শ ও দলীয় পরিচয়ের বাইরে দেশের সম্মান রক্ষা করা সবার দায়িত্ব। প্রবাসে অবস্থানরত নেতাকর্মীদের কর্মকাণ্ড যেন কোনোভাবেই বাংলাদেশের ভাবমূর্তিকে ক্ষতিগ্রস্ত না করে, সে বিষয়ে তিনি বিশেষভাবে সতর্ক থাকতে বলেন।
দীর্ঘ সময় বিদেশে অবস্থানের পর তারেক রহমানের দেশে প্রত্যাবর্তন বিএনপির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ঘটনা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। তার দেশে ফেরার মাধ্যমে দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম, নেতৃত্বের উপস্থিতি এবং ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক পরিকল্পনায় নতুন মাত্রা যোগ হতে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। তবে আলোচ্য বক্তব্যে তিনি দেশে ফেরার পর নির্দিষ্ট কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি বা ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করেননি।
সব মিলিয়ে, দেশে ফেরার ঘোষণা দেওয়ার পাশাপাশি তারেক রহমান প্রবাসে অবস্থানরত বিএনপির নেতাকর্মীদের শৃঙ্খলাপূর্ণ ও দায়িত্বশীল ভূমিকার ওপর জোর দিয়েছেন। তার বক্তব্যে প্রবাসী বাংলাদেশিদের আচরণ, দেশের ভাবমূর্তি এবং দলীয় শৃঙ্খলার বিষয়টি গুরুত্ব পেয়েছে, যা তার দেশে প্রত্যাবর্তনকে কেন্দ্র করে দলীয় প্রস্তুতির একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।


