জাতীয় ডেস্ক
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান বিন হাদি মারা গেছেন। বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) রাতে তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়। তিনি চিকিৎসাধীন অবস্থায় সিঙ্গাপুরে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
পারিবারিক ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত ১২ ডিসেম্বর ঢাকার মতিঝিলে জুমার নামাজ আদায়ের পর তিনি নির্বাচনী প্রচারণা কার্যক্রম শেষ করেন। এরপর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যাওয়ার পথে ওই দিন দুপুর আনুমানিক ২টা ২০ মিনিটে পল্টন মডেল থানাধীন বক্স কালভার্ট এলাকায় পৌঁছালে মোটরসাইকেলযোগে আসা কয়েকজন দুষ্কৃতকারী তার ওপর গুলিবর্ষণ করে। হামলার সময় তিনি একটি অটোরিকশায় ছিলেন। গুলিবিদ্ধ হয়ে তিনি গুরুতর আহত হন এবং হামলাকারীরা দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করে।
গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তাকে প্রথমে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে জরুরি অস্ত্রোপচার সম্পন্ন হওয়ার পর উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে চিকিৎসকদের পরামর্শে সোমবার তাকে সিঙ্গাপুরে পাঠানো হয়। সেখানে নিবিড় চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃহস্পতিবার রাতে তার মৃত্যু হয়।
আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, হামলার আগে কয়েক মাস ধরে শরিফ ওসমান বিন হাদির নিয়মিত চলাচল, বাসস্থান, অফিসের যাতায়াতের পথ এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থার ওপর নজরদারি চালানো হচ্ছিল। তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, এটি একটি পূর্বপরিকল্পিত হামলা ছিল বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।
তদন্তে আরও উঠে এসেছে, গুলিবর্ষণের ঘটনার পর সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খান আগারগাঁও এলাকায় তার বোনের বাসায় আশ্রয় নেন। পরে শ্যুটার ফয়সাল করিম মাসুদ এবং মোটরসাইকেলচালক আলমগীর শেখ দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান বলে তদন্তে তথ্য পাওয়া গেছে। তাদের গ্রেপ্তারে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী আন্তর্জাতিক সহযোগিতার বিষয়টি বিবেচনায় নিচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।
র্যাব ও ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) যৌথ তদন্তে হামলায় ব্যবহৃত অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধারের তথ্যও নিশ্চিত করা হয়েছে। মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) আগারগাঁওয়ের কর্নেল গলির একটি বাসার নিচ থেকে দুটি ম্যাগাজিন ও ১১ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়। পরবর্তীতে নরসিংদী এলাকায় অভিযান চালিয়ে আরও পাঁচটি আগ্নেয়াস্ত্র এবং ৪১ রাউন্ড গোলাবারুদ উদ্ধার করে র্যাব।
এ ঘটনায় পল্টন মডেল থানায় একটি হত্যাচেষ্টা মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলাটি করেন ইনকিলাব মঞ্চের সদস্যসচিব আব্দুল্লাহ আল জাবের। মামলার তদন্তভার ডিএমপির গোয়েন্দা বিভাগকে দেওয়া হয়েছে। তদন্ত কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারের লক্ষ্যে প্রযুক্তিগত বিশ্লেষণ, জিজ্ঞাসাবাদ এবং মাঠপর্যায়ের অনুসন্ধান একযোগে চালানো হচ্ছে।
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সূত্রে জানা গেছে, এ পর্যন্ত র্যাব ও পুলিশ যৌথভাবে এই ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সন্দেহে মোট নয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে। গ্রেপ্তারকৃতদের বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তদন্তে নতুন তথ্য উদ্ঘাটনের ভিত্তিতে মামলার অগ্রগতি সম্পর্কে পরবর্তী সময়ে বিস্তারিত জানানো হবে বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
শরিফ ওসমান বিন হাদির মৃত্যু দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক অঙ্গনে আলোচনার সৃষ্টি করেছে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী জানিয়েছে, মামলার তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত মৃত্যুর পেছনের সব দিক নিশ্চিতভাবে বলা সম্ভব নয়। তবে তারা দ্রুত তদন্ত সম্পন্ন করে দোষীদের আইনের আওতায় আনার বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেছে।


