আন্তর্জাতিক ডেস্ক
গাজা উপত্যকায় মানবিক সংকট আরও প্রকট আকার ধারণ করেছে। শীতকালীন ঝড়ে হাজার হাজার বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনির দুর্দশা বাড়তে শুরু করেছে, যেখানে জরুরি আশ্রয়, খাদ্য ও ত্রাণ সামগ্রী এখনও প্রবেশ করতে পারছে না। জাতিসংঘ এবং বিভিন্ন ত্রাণ সংস্থা সতর্ক করেছেন, ইসরায়েলি বিধিনিষেধের কারণে মানবিক সহায়তা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
জাতিসংঘ জানিয়েছে, তাদের কাছে ত্রাণ হিসেবে তাঁবু, কম্বল এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী প্রস্তুত থাকলেও সীমান্ত ক্রসিংয়ে প্রবেশে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ বাধা দিচ্ছে বা প্রবেশ কঠোরভাবে সীমিত করছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, শীতকালে অপর্যাপ্ত আশ্রয়ে থাকা শিশু এবং বয়স্কদের ঝুঁকি বৃদ্ধি পেয়েছে। সম্প্রতি দুই সপ্তাহ বয়সী এক ফিলিস্তিনি শিশুর তীব্র শীতে মৃত্যু সংঘটিত হয়েছে।
জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের মুখপাত্র ফারহান হক বলেন, ঝড়ে গাজার বহু আশ্রয়কেন্দ্র এবং ব্যক্তিগত সম্পদ ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়েছে। এতে প্রায় ৩০ হাজার শিশু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত কার্যক্রম দ্রুত পুনরায় চালু করতে জরুরি মেরামতের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
গাজার ফিলিস্তিনি সিভিল ডিফেন্স এক বিবৃতিতে উল্লেখ করেছে, গাজা উপত্যকায় বর্তমান পরিস্থিতি একটি মানবিক বিপর্যয়ের রূপ নিয়েছে।
মানবিক সংকটের মধ্যেই কাতারের প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আবদুর রহমান আল থানি সম্প্রতি ওয়াশিংটন ডিসিতে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর সঙ্গে বৈঠক করেছেন। বৈঠকে গাজায় ভঙ্গুর যুদ্ধবিরতি স্থিতিশীল করা, ত্রাণ প্রবেশ নিশ্চিত করা এবং যুদ্ধবিরতি বাস্তবায়নের দ্বিতীয় ধাপের অগ্রগতি নিশ্চিত করার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
কাতারের প্রধানমন্ত্রী বৈঠকে জোর দিয়ে বলেছেন, গাজায় মানবিক সহায়তা ‘নিঃশর্তভাবে’ প্রবেশ করতে দিতে হবে। তিনি যুদ্ধ-পরবর্তী গাজায় একটি আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতা বাহিনী মোতায়েনের সম্ভাবনাও তুলে ধরেছেন, যা নিরপেক্ষভাবে কাজ করবে।
যুদ্ধবিরতির মধ্যেও গাজায় সহিংসতা থেমে নেই। চিকিৎসা সূত্র জানিয়েছে, গাজা সিটির কেন্দ্রে ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ১১ জন ফিলিস্তিনি আহত হয়েছেন। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী দাবি করেছে, একটি মর্টার শেল লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়েছে। এছাড়া দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসের পূর্বে গোলাবর্ষণের এবং পূর্ব গাজার তুফাহ এলাকায় আরও দুজনের আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। অধিকৃত পশ্চিম তীরে ক্বালকিলিয়ায় ইসরায়েলি সেনারা এক যুবককে গুলি করে আহত করেছে বলে ফিলিস্তিনি বার্তা সংস্থা ওয়াফা জানিয়েছে।
২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ৭০ হাজার ৬৬৮ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন এবং এক লাখ ৭১ হাজার ১৫২ জন আহত হয়েছে। একই সময়ে হামাসের ৭ অক্টোবরের হামলায় ইসরায়েলে ১ হাজার ১৩৯ জন নিহত হয়েছেন।
মানবিক সহায়তার প্রবেশ সীমাবদ্ধতা, চলমান সহিংসতা এবং শীতকালীন ঝড়ের প্রভাবে গাজার পরিস্থিতি সংকটাপন্ন এবং ত্রাণ কার্যক্রম দ্রুত পুনরায় কার্যকর করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।


