ঘুমধুম সীমান্তসংলগ্ন মিয়ানমারে মর্টার নিক্ষেপের শব্দ, সীমান্ত এলাকায় উদ্বেগ

ঘুমধুম সীমান্তসংলগ্ন মিয়ানমারে মর্টার নিক্ষেপের শব্দ, সীমান্ত এলাকায় উদ্বেগ

নাইক্ষ্যংছড়ি (বান্দরবান) প্রতিনিধি
কক্সবাজারের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম সীমান্তসংলগ্ন মিয়ানমারের অভ্যন্তরে মর্টার শেল নিক্ষেপের শব্দ শোনা যাওয়ায় সীমান্তবর্তী এলাকায় আতঙ্ক ও উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে। বুধবার (১৭ ডিসেম্বর) দুপুর আনুমানিক ১টার দিকে কক্সবাজার ব্যাটালিয়ন (৩৪ বিজিবি) অধীন নিকুছড়ি বিওপি এলাকার বিপরীতে সীমান্ত থেকে প্রায় দুই হাজার গজ ভেতরে এ শব্দ শোনা যায় বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র নিশ্চিত করেছে।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, হঠাৎ একাধিক বিস্ফোরণ সদৃশ শব্দ শোনা গেলে তারা নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত হয়ে পড়েন। অনেকেই ঘর থেকে বের হয়ে পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করেন, আবার কেউ কেউ সম্ভাব্য ঝুঁকি এড়াতে নিরাপদ স্থানে অবস্থান নেন। সীমান্তবর্তী এই অঞ্চলে অতীতে গোলাগুলির শব্দ শোনা যাওয়ার নজির থাকলেও সাম্প্রতিক সময়ে আবার এমন শব্দ শোনায় নতুন করে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে বলে স্থানীয়দের অভিমত।

বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) জানায়, প্রাথমিকভাবে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, মিয়ানমারের অভ্যন্তরে আরাকান আর্মি নিয়ন্ত্রিত অংজাই ক্যাম্পসংলগ্ন এলাকায় মর্টার ফায়ারের শব্দ পাওয়া গেছে। তবে মর্টার শেল বাংলাদেশের ভূখণ্ডে এসে পড়েছে—এমন কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণে সীমান্ত এলাকায় বিজিবির টহল ও নজরদারি জোরদার করা হয়েছে। পাশাপাশি সীমান্তরেখায় দায়িত্বপ্রাপ্ত ইউনিটগুলোকে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় থাকতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

বিজিবির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, সীমান্ত এলাকায় যেকোনো ধরনের অস্বাভাবিক পরিস্থিতি দ্রুত শনাক্ত ও মোকাবিলার জন্য নিয়মিত টহলের পাশাপাশি গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় রেখে সীমান্তবর্তী জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই তাদের প্রধান লক্ষ্য বলে জানানো হয়।

এ বিষয়ে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাজহারুল ইসলাম চৌধুরী জানান, সীমান্তের ওপারে মর্টার শেল নিক্ষেপের শব্দ শোনার বিষয়টি সম্পর্কে প্রশাসন অবগত রয়েছে এবং খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের অভ্যন্তরে কোনো ক্ষয়ক্ষতি বা হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে এবং প্রয়োজন হলে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সঙ্গে সমন্বয় করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

প্রসঙ্গত, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে দীর্ঘদিন ধরে দেশটির সরকারি বাহিনী ও বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘাত চলমান রয়েছে। এ সংঘাতের প্রভাব মাঝেমধ্যে বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী এলাকাতেও অনুভূত হয়। অতীতে গোলাগুলির শব্দ, মর্টার শেলের আঘাত কিংবা গোলা এসে পড়ার ঘটনা সীমান্ত এলাকায় নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে জটিল করে তুলেছিল। এসব অভিজ্ঞতার কারণে সীমান্তবর্তী জনগণের মধ্যে যেকোনো ধরনের বিস্ফোরণ বা গোলাগুলির শব্দ দ্রুত উদ্বেগ সৃষ্টি করে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সীমান্তের ওপারে সংঘাত তীব্র হলে এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে সীমান্ত এলাকায় নিরাপত্তা ঝুঁকি বাড়তে পারে। এ ধরনের পরিস্থিতিতে সীমান্তরক্ষী বাহিনী ও স্থানীয় প্রশাসনের মধ্যে সমন্বিত তৎপরতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একই সঙ্গে সীমান্তবর্তী জনগণকে গুজব এড়িয়ে চলতে এবং প্রশাসনের নির্দেশনা মেনে চলার পরামর্শ দেওয়া হয়।

বর্তমান পরিস্থিতিতে বিজিবি ও প্রশাসনের তৎপরতায় সীমান্ত এলাকায় আপাতত স্বাভাবিক অবস্থা বিরাজ করছে বলে জানা গেছে। তবে পরিস্থিতির যে কোনো পরিবর্তন মোকাবিলায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। সীমান্তের ওপারের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করা হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।

শীর্ষ সংবাদ সারাদেশ