জাতীয় ডেস্ক
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদিকে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় অন্তত পাঁচটি দেশি-বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার বা ব্যবহারের উদ্দেশ্যে রাখা হয়েছিল। মূল অভিযুক্ত ফয়সাল করিম মাসুদ এই ঘটনায় জড়িত থাকার পাশাপাশি দুইটি অস্ত্র সঙ্গে নিয়ে পালিয়েছে। বাকি তিনটি অস্ত্র তার বাবা হুমায়ুন কবিরের কাছে পাঠানো হয়েছিল। রাজধানীর আগারগাঁওয়ে ফয়সালের বোনের বাসা থেকে উদ্ধার হওয়া দুটি ম্যাগাজিন ও গুলির ব্যাগের সূত্র ধরে বাকি তিনটি অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, হত্যাচেষ্টার ঘটনায় হাদির অবস্থার গুরুতরতা সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছে। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. ভিভিয়ান বালাকৃষ্ণান প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে ফোনে হাদির স্বাস্থ্যসংক্রান্ত তথ্য প্রদান করেছেন। প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানিয়েছেন, হাদির অবস্থা অত্যন্ত সংকটাপন্ন।
তদন্তে জানা গেছে, হাদিকে গুলি করার পর ফয়সাল আগারগাঁওয়ে বোনের বাসায় গিয়ে অস্ত্রভর্তি ব্যাগটি তার বাবার তত্ত্বাবধানে রাখে। পরে তার স্ত্রী ও মা জিজ্ঞাসাবাদের পর স্বীকার করেন যে অস্ত্রগুলো নরসিংদীর গ্রামের একটি পুকুরে ফেলে দেওয়া হয়েছে। এই তথ্যের ভিত্তিতে র্যাব অস্ত্রগুলো উদ্ধার করেছে।
র্যাব সূত্র আরও জানায়, উদ্ধারকৃত অস্ত্রগুলোর মধ্যে একটি শরিফ ওসমান হাদিকে গুলি করার কাজে ব্যবহৃত হতে পারে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে এবং ফরেনসিক পরীক্ষার মাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত করা হবে। অস্ত্রগুলো ময়মনসিংহের উদ্দেশে রওনা দেওয়ার সময় ফয়সাল ও মোটরসাইকেলচালক আলমগীর শেখ দুটি অস্ত্র সঙ্গে নিয়েছিলেন। বাকি তিনটি অস্ত্র শ্যালকের মাধ্যমে বন্ধুর কাছে পাঠানো হয় এবং পরে পুকুরে ফেলে দেওয়া হয়।
ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) জানিয়েছে, হাদির ওপর হামলায় ব্যবহৃত ভুয়া নম্বর প্লেটসহ মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়েছে। এটি আগারগাঁওয়ের বনলতা আবাসিক এলাকার একটি বাড়ির পার্কিং থেকে উদ্ধার করা হয়। ভুয়া নম্বর প্লেট পরিত্যক্ত অবস্থায় একটি ম্যানহোল থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। মোটরসাইকেলের মালিকানা শনাক্তকরণের জন্য নিবিড় তদন্ত চলছে। জানা গেছে, মোটরসাইকেলটি একাধিকবার হস্তান্তর হয়ে ফয়সাল করিম মাসুদের সহযোগী মো. কবিরের জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার করে মাইনুদ্দিন ইসলামের নামে কেনা হয়েছিল।
গত শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর বিজয়নগরে ব্যাটারিচালিত রিকশায় যাওয়ার সময় শরিফ ওসমান হাদিকে লক্ষ্য করে মোটরসাইকেল আরোহী এক দুর্বৃত্ত গুলি ছোড়ে। পুলিশ এই ঘটনার মূল অভিযুক্ত হিসেবে ফয়সাল করিম মাসুদকে চিহ্নিত করেছে। হত্যাচেষ্টার পর তাকে গ্রেপ্তারের অভিযান চললেও জানা গেছে, ফয়সাল দেশ ত্যাগ করেছে।
হামলার পর প্রথমে হাদিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। পরে তাকে এভারকেয়ার হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয় এবং উন্নত চিকিৎসার জন্য সরকার তাকে সিঙ্গাপুর পাঠায়। সেখানেই তিনি চিকিৎসাধীন আছেন। হাদির চিকিৎসা সংক্রান্ত তথ্য অনুযায়ী, তার মস্তিষ্ক সচল রাখতে অস্ত্রোপচার প্রয়োজন, তবে অস্ত্রোপচারের আগে স্বাস্থ্য পুরোপুরি স্থিতিশীল হওয়া জরুরি। হাদির চিকিৎসা সিঙ্গাপুর বা যুক্তরাজ্যে করা হতে পারে।
তদন্ত ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সূত্র অনুযায়ী, এই হত্যাচেষ্টা দেশি-বিদেশি অস্ত্র ব্যবহারের একটি সুপরিকল্পিত ঘটনা এবং এটি রাজনৈতিক পরিপ্রেক্ষিতেও গুরুত্ব বহন করে। উদ্ধারকৃত অস্ত্র ও সরঞ্জামের ফরেনসিক বিশ্লেষণ, অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার এবং মূল ঘটনার কারণ নির্ধারণে চলমান তদন্তের ওপর ভবিষ্যতে প্রয়োজনীয় আইনগত পদক্ষেপ নির্ভর করবে।


