জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সম্মুখভাগের যোদ্ধা ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শহীদ শরিফ ওসমান হাদির মরদেহ দেশে পৌঁছাচ্ছে আজ

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সম্মুখভাগের যোদ্ধা ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শহীদ শরিফ ওসমান হাদির মরদেহ দেশে পৌঁছাচ্ছে আজ

নিজস্ব প্রতিবেদক
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সম্মুখভাগের যোদ্ধা ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শহীদ শরিফ ওসমান হাদির মরদেহ আজ শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় দেশে পৌঁছাচ্ছে। চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) রাত পৌনে ১০টার দিকে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তার মৃত্যুর খবরে রাজনৈতিক অঙ্গনসহ বিভিন্ন মহলে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

ইনকিলাব মঞ্চ সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ বিমানের একটি বাণিজ্যিক ফ্লাইটে শহীদ ওসমান হাদির মরদেহ সিঙ্গাপুর থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হওয়ার কথা রয়েছে শুক্রবার স্থানীয় সময় বিকেল ৩টা ৫০ মিনিটে। নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী ফ্লাইটটি সন্ধ্যা ৬টা ৫ মিনিটে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করবে। বিমানবন্দরে তার মরদেহ গ্রহণের জন্য রাজনৈতিক সহকর্মী, সংগঠনের নেতাকর্মী ও পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত থাকবেন বলে জানানো হয়েছে।

মরদেহ দেশে আনার আগে শুক্রবার সকাল ১০টায় সিঙ্গাপুরের ঐতিহাসিক দ্য আঙ্গুলিয়া মসজিদে শহীদ ওসমান হাদির প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে প্রবাসী বাংলাদেশিসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ জানাজায় অংশগ্রহণ করবেন। দেশে পৌঁছানোর পর তার দ্বিতীয় জানাজা আগামীকাল শনিবার (২০ ডিসেম্বর) বাদ জোহর রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে অনুষ্ঠিত হবে। ইনকিলাব মঞ্চের পক্ষ থেকে জানাজায় অংশগ্রহণের জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।

শহীদ শরিফ ওসমান হাদি সাম্প্রতিক সময়ে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের একজন সক্রিয় সংগঠক ও মুখপাত্র হিসেবে পরিচিত ছিলেন। রাজনৈতিক কর্মসূচি ও আন্দোলনে তিনি নিয়মিতভাবে সম্মুখভাগে থেকে অংশগ্রহণ করতেন। তার বক্তব্য ও সাংগঠনিক ভূমিকা বিভিন্ন সময়ে আন্দোলনের দিকনির্দেশনা নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত হয়েছে।

ওসমান হাদির মৃত্যুর পেছনের ঘটনাপ্রবাহ অনুযায়ী, গত ১২ ডিসেম্বর রাজধানীর পুরানা পল্টন এলাকায় নির্বাচনী প্রচারণা চলাকালে সন্ত্রাসীদের গুলিতে তিনি মাথায় গুরুতর আহত হন। ঘটনার পরপরই তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং পরে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য গত সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) তাকে সিঙ্গাপুরে পাঠানো হয়। সেখানে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা চললেও শেষ পর্যন্ত তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

এই হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এবং রাজনৈতিক সহিংসতার বিষয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে। নির্বাচনী প্রচারণাকালে প্রকাশ্য দিবালোকে হামলার ঘটনা রাজনৈতিক অঙ্গনে নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও সহিংসতা প্রতিরোধের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে হামলার ঘটনায় জড়িতদের শনাক্ত ও আইনের আওতায় আনার আশ্বাস দেওয়া হলেও এ বিষয়ে তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য এখনো জানানো হয়নি।

শহীদ ওসমান হাদির মৃত্যুতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। এক শোকবার্তায় তিনি বলেন, দেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনে ওসমান হাদির অবদান স্মরণীয় হয়ে থাকবে। তার পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে তিনি এই হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত ও দায়ীদের বিচারের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।

এদিকে, সরকারের পক্ষ থেকে শনিবার (২০ ডিসেম্বর) সারাদেশে রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করা হয়েছে। রাষ্ট্রীয় শোক পালনের অংশ হিসেবে সরকারি, আধা-সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হবে এবং বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হবে।

ওসমান হাদির মৃত্যু দেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। রাজনৈতিক সহিংসতা বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ, নির্বাচনী পরিবেশে নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ এবং ভিন্নমত প্রকাশের অধিকার রক্ষার বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের ভূমিকা নতুন করে আলোচনায় এসেছে। তার জানাজা ও দাফনকে কেন্দ্র করে রাজধানীতে উল্লেখযোগ্য জনসমাগম হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে, যা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ হিসেবেও দেখা হচ্ছে।

জাতীয় শীর্ষ সংবাদ