নিজস্ব প্রতিবেদক
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান বিন হাদির মৃত্যুতে আজ শনিবার সারাদেশে একদিনের রাষ্ট্রীয় শোক পালন করা হচ্ছে। রাষ্ট্রীয় শোক পালনের অংশ হিসেবে দেশের সব সরকারি, আধা সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশের কূটনৈতিক মিশনগুলোতে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়েছে। শোক দিবস উপলক্ষে সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠানে মরহুমের আত্মার মাগফিরাত কামনা করা হয়।
এর আগে বৃহস্পতিবার রাতে জাতির উদ্দেশে দেওয়া এক ভাষণে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস এই রাষ্ট্রীয় শোক পালনের ঘোষণা দেন। ভাষণের শুরুতে তিনি শরিফ ওসমান বিন হাদির আত্মার শান্তি কামনা করেন এবং তার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেন। একই সঙ্গে শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানান।
ভাষণে অধ্যাপক ড. ইউনূস বলেন, ফ্যাসিবাদ ও আধিপত্যবিরোধী আন্দোলনে শরিফ ওসমান বিন হাদির সক্রিয় ভূমিকা রাজনৈতিক অঙ্গনে উল্লেখযোগ্য হয়ে থাকবে। তিনি জানান, বিভিন্ন সময় নাগরিক অধিকার, গণতান্ত্রিক চর্চা ও রাষ্ট্রীয় স্বচ্ছতার প্রশ্নে ওসমান হাদি সোচ্চার অবস্থান নিয়েছিলেন। তার আকস্মিক মৃত্যু দেশের রাজনৈতিক ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় একটি গুরুত্বপূর্ণ শূন্যতা তৈরি করেছে বলেও ভাষণে উল্লেখ করা হয়।
রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণার প্রেক্ষাপট তুলে ধরে প্রধান উপদেষ্টা জানান, শনিবার একদিনের জন্য এই শোক পালন করা হবে। এ উপলক্ষে সরকারি-বেসরকারি গুরুত্বপূর্ণ ভবন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং বিদেশে বাংলাদেশের দূতাবাস ও হাইকমিশনগুলোতে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়েছে। পাশাপাশি রাষ্ট্রীয়ভাবে মরহুমের স্মরণে দোয়া ও প্রার্থনার আয়োজন করা হয়।
প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের তফসিল ঘোষণার পরদিন রাজধানীর বিজয়নগর এলাকায় সংঘটিত এক হামলায় গুরুতর আহত হন শরিফ ওসমান বিন হাদি। ঘটনার পরপরই তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার পর তার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটলে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।
পরবর্তীতে চিকিৎসকদের পরামর্শে সরকারিভাবে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে পাঠানো হয়। সেখানে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃহস্পতিবার রাতে তিনি মারা যান। তার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার পর বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও পেশাজীবী সংগঠনের পক্ষ থেকে শোক প্রকাশ করা হয়। একই সঙ্গে হামলার ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও দায়ীদের বিচারের দাবিও উঠে আসে।
মরহুমের মৃত্যুর পর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানায়, ঘটনার তদন্ত কার্যক্রম চলমান রয়েছে এবং দোষীদের চিহ্নিত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
শুক্রবার সন্ধ্যায় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে শরিফ ওসমান বিন হাদির মরদেহ ঢাকায় আনা হয়। বর্তমানে তার মরদেহ জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের হিমঘরে সংরক্ষিত রয়েছে। আজ জোহরের নামাজের পর রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। জানাজা শেষে তাকে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের কবরের পাশে দাফন করা হবে।
রাষ্ট্রীয় শোক পালন ও জানাজা উপলক্ষে সংশ্লিষ্ট এলাকায় নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা বজায় রাখতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।


