আন্তর্জাতিক ডেস্ক
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও জুলাই যোদ্ধা শরীফ ওসমান বিন হাদি হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে সঠিক বিচার নিশ্চিতের আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার মানদণ্ড অনুযায়ী দ্রুত, নিরপেক্ষ, পুঙ্খানুপুঙ্খ ও স্বচ্ছ তদন্ত পরিচালনার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন তিনি।
শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) নিউইয়র্কে এক সংবাদ সম্মেলনে জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র স্টেফানে দুজারিক এ অবস্থানের কথা জানান। তিনি বলেন, এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মহাসচিব গভীরভাবে উদ্বিগ্ন এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। পাশাপাশি ২০২৬ সালের জাতীয় নির্বাচনের প্রেক্ষাপটে দেশে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে সব পক্ষকে সংযম প্রদর্শনের অনুরোধও জানিয়েছেন মহাসচিব।
জাতিসংঘের মহাসচিবের এই বক্তব্যের সঙ্গে একমত পোষণ করে পৃথকভাবে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন সংস্থাটির মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার তুর্ক। তিনি শরীফ ওসমান বিন হাদি হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দায়ীদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। তার মতে, এ ধরনের সহিংস ঘটনার সঠিক বিচার নিশ্চিত করা শুধু ভুক্তভোগী পরিবার নয়, সামগ্রিকভাবে সমাজে আইনের শাসন ও মানবাধিকারের প্রতি আস্থা প্রতিষ্ঠার জন্যও অপরিহার্য।
এক বিবৃতিতে ভলকার তুর্ক বলেন, প্রতিশোধ ও বিদ্বেষমূলক কর্মকাণ্ড পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলতে পারে এবং এর ফলে সামাজিক বিভাজন বাড়ার পাশাপাশি নাগরিক অধিকার ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়। এ কারণে তিনি কর্তৃপক্ষকে দ্রুত, নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ তদন্ত পরিচালনার পাশাপাশি দায়ীদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানান।
জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান আরও উল্লেখ করেন, শরীফ ওসমান বিন হাদির মৃত্যুর খবর প্রকাশের পর দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভের ঘটনা ঘটেছে। এসব বিক্ষোভ চলাকালে কয়েকটি স্থাপনায় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে বলে তথ্য পাওয়া গেছে। একই সময়ে কিছু সাংবাদিক হামলার শিকার হয়েছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। এসব ঘটনার প্রেক্ষাপটে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা এবং গণমাধ্যমকর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয়টিকে গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করেন তিনি।
আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে ভলকার তুর্ক বলেন, নিরাপদ ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা এবং ভিন্নমত প্রকাশের অধিকার সুরক্ষিত রাখা অত্যন্ত জরুরি। তার মতে, একটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সব নাগরিকের রাজনৈতিক অংশগ্রহণ ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত না হলে নির্বাচন প্রক্রিয়ার গ্রহণযোগ্যতা ক্ষুণ্ন হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
তিনি আরও জানান, জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক কার্যালয় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও অন্যান্য অংশীজনের সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত রয়েছে। মানবাধিকার সুরক্ষা, সহিংসতা প্রতিরোধ এবং পরিস্থিতি শান্ত রাখতে প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদানে জাতিসংঘ সক্রিয় ভূমিকা রাখতে আগ্রহী বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
বিশ্লেষকদের মতে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের এই প্রতিক্রিয়া বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি ও আসন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বৈশ্বিক পর্যায়ে যে নজরদারি রয়েছে, তা আবারও স্পষ্ট করে। একই সঙ্গে এ বক্তব্যগুলো আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা, সহিংসতা নিয়ন্ত্রণ এবং বিচার প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার গুরুত্বকে সামনে নিয়ে এসেছে।


