আন্তর্জাতিক ডেস্ক
ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগে এক ব্যক্তির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেছে ইরান। শনিবার (২০ ডিসেম্বর) দেশটির বিচার বিভাগীয় কর্তৃপক্ষ এক ঘোষণায় জানায়, প্রয়োজনীয় আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পর ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে দেওয়া মৃত্যুদণ্ডের রায় কার্যকর করা হয়েছে। চলতি বছরের জুন মাসে ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে সংঘটিত ১২ দিনের সংঘাতের পর থেকেই ইসরায়েলি গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে ধরপাকড় ও বিচার কার্যক্রম জোরদার করে তেহরান।
ইরানের বিচার বিভাগের বার্তা সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তির নাম আঘিল কেশাভার্জ। শনিবার তাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। বিচার বিভাগ জানায়, অভিযুক্ত ব্যক্তি ইরানের সামরিক স্থাপনা ও নিরাপত্তা-সংক্রান্ত স্পর্শকাতর তথ্য সংগ্রহ এবং তা বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার কাছে সরবরাহের সঙ্গে জড়িত ছিলেন বলে আদালতে প্রমাণিত হয়েছে।
বিচার বিভাগীয় নথি অনুযায়ী, ২৭ বছর বয়সী আঘিল কেশাভার্জ পেশায় একজন আর্কিটেকচার ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন। চলতি বছরের শুরুতে তাকে ইরানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের উরমিয়া শহর থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। অভিযোগ অনুযায়ী, তিনি একটি সেনা টহল দলের নজরে আসেন যখন তিনি একটি গুরুত্বপূর্ণ সামরিক সদর দপ্তরের ছবি তুলছিলেন। পরে তাকে আটক করে নিরাপত্তা বাহিনী, এবং প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পর গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়।
ইরানি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, অভিযুক্ত ব্যক্তি এনক্রিপটেড যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে মোসাদ এবং ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতেন। তদন্তে আরও উঠে আসে, নির্ধারিত কাজ সম্পন্ন করার পর তাকে ক্রিপ্টোকারেন্সির মাধ্যমে অর্থ প্রদান করা হতো। এসব তথ্য আদালতে উপস্থাপনের পর বিচারিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ ও বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার হয়ে কাজ করার অভিযোগ প্রমাণিত হয়।
জুন মাসে ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে সংঘাতের পর থেকে দেশটির নিরাপত্তা পরিস্থিতি আরও কঠোর হয়ে ওঠে। ওই সংঘাতের পর ইরান সরকার ঘোষণা দেয়, জাতীয় নিরাপত্তার বিরুদ্ধে যেকোনো ধরনের তৎপরতার বিষয়ে ‘শূন্য সহনশীলতা’ নীতি গ্রহণ করা হবে। এরই অংশ হিসেবে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে একাধিক ব্যক্তির বিচার দ্রুত সম্পন্ন করা হচ্ছে। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, গত সেপ্টেম্বর মাসেই ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে অন্তত ১০ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে।
ইরানের কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে, এর আগে যাদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে, তাদের মধ্যে কয়েকজন ছিলেন দেশটির ইতিহাসে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও সক্রিয় বিদেশি গুপ্তচর। এসব মামলায় আদালত রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা, সামরিক স্থাপনার সুরক্ষা এবং গোপন তথ্য পাচারের বিষয়গুলোকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছে বলে জানানো হয়।
এ প্রেক্ষাপটে গত অক্টোবরে ইরান সরকার গুপ্তচরবৃত্তির বিরুদ্ধে একটি কঠোর আইন প্রণয়ন করে। নতুন আইনে বলা হয়েছে, কেউ যদি যুক্তরাষ্ট্র বা ইসরায়েলের হয়ে কাজ করার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হন, তাহলে তার বিরুদ্ধে স্বয়ংক্রিয়ভাবে মৃত্যুদণ্ডের রায় কার্যকর হবে। এ ধরনের অপরাধের ক্ষেত্রে মৃত্যুদণ্ড ছাড়া অন্য কোনো শাস্তির বিধান রাখা হয়নি। একই সঙ্গে দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তির স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি রাষ্ট্রীয়ভাবে বাজেয়াপ্ত করার ব্যবস্থাও আইনে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
বিশ্লেষকদের মতে, নতুন আইন ও সাম্প্রতিক মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের ঘটনাগুলো ইরানের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা নীতির কঠোরতার প্রতিফলন। ইরান সরকার মনে করছে, আঞ্চলিক উত্তেজনা ও চলমান ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতিতে জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। তবে মানবাধিকার সংগঠনগুলো বরাবরের মতো এসব মৃত্যুদণ্ড ও বিচার প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে।
ইরান সরকার এসব সমালোচনা প্রত্যাখ্যান করে বলছে, দেশের সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তা রক্ষার স্বার্থেই এসব পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে এবং সব ক্ষেত্রেই প্রচলিত আইন ও বিচারিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হচ্ছে। সাম্প্রতিক ঘটনাগুলো মধ্যপ্রাচ্যের ক্রমবর্ধমান উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতিতে ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যকার বৈরিতার আরও একটি দৃষ্টান্ত হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।


