ধীপ চন্দ্র দাস হত্যাকাণ্ড: ফ্লোর ম্যানেজারসহ গ্রেপ্তার ১০

ধীপ চন্দ্র দাস হত্যাকাণ্ড: ফ্লোর ম্যানেজারসহ গ্রেপ্তার ১০

আইন আদালত ডেস্ক

ময়মনসিংহের ভালুকায় ধর্ম অবমাননার অভিযোগকে কেন্দ্র করে পোশাক শ্রমিক দীপু চন্দ্র দাসকে হত্যা করার ঘটনায় পুলিশের এবং র‌্যাবের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। র‌্যাব-১৪-এর পরিচালক নাইমুল হাসান শনিবার (২০ ডিসেম্বর) সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, হত্যার আগে কারখানার ফ্লোর ম্যানেজার তাকে চাকরি থেকে ইস্তফা দিতে বাধ্য করেন এবং এরপর উত্তেজিত জনতার হাতে তুলে দেন। এই ঘটনায় এ পর্যন্ত ১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

পুলিশ ও র‌্যাবের তথ্য অনুযায়ী, নিহত দিপু চন্দ্র দাসের বয়স ২৮ বছর। তিনি পাইওনিয়ার নিটওয়্যারস বিডি লিমিটেডে কর্মরত ছিলেন। হত্যার ঘটনার সূত্রপাত হয় গত বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টার দিকে, যখন কারখানার ফ্লোর ম্যানেজার আলমগীর হোসেন (৩৮) দিপুকে চাকরি থেকে ইস্তফা দিতে বাধ্য করেন। ইস্তফা দেওয়ার পর আলমগীর দিপুকে উত্তেজিত জনতার হাতে হস্তান্তর করেন। র‌্যাব জানায়, পুলিশকে সরাসরি হস্তান্তর না করার কারণে এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত না করার কারণে ফ্লোর ম্যানেজারসহ কারখানার দুটি পদে কর্মরতকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

গ্রেপ্তারদের মধ্যে ফ্লোর ম্যানেজার আলমগীর হোসেনের সঙ্গে রয়েছেন কারখানার কোয়ালিটি ইনচার্জ এবং মিরাজ হোসেন আকন (৪৬)। এছাড়া হত্যাকাণ্ডে যুক্ত অন্যান্য আটজন হলেন: তারেক হোসেন (১৯), লিমন সরকার, মানিক মিয়া (২০), এরশাদ আলী (৩৯), নিঝুম উদ্দিন (২০), আজমল হাসান সগীর (২৬), শাহিন মিয়া (১৯) এবং মো. নাজমুল। শেষ তিনজনকে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। র‌্যাব জানিয়েছে, গ্রেপ্তার সকলেই কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত নয়। বাকি আসামিদেরও গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

র‌্যাব-১৪-এর পরিচালক নাইমুল হাসান আরও জানিয়েছেন, ঘটনার পেছনে উত্তেজিত জনতা বা পূর্বের কোনো ব্যক্তিগত শত্রুতার বিষয়টি তদন্তের অংশ হিসেবে খতিয়ে দেখা হবে। তিনি বলেন, ‘‘একজনকে মেরে ফেলা এবং গাছের সঙ্গে ঝুলিয়ে আগুন দিয়ে হত্যা করা কোনোভাবেই আইন দ্বারা অনুমোদিত নয়। সরকার ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীও এটিকে গ্রহণযোগ্য মনে করে না।’’

পুলিশের বরাতে জানা গেছে, হত্যার ঘটনায় মৃতদেহে আগুন দেওয়া হয় এবং ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক প্রায় দুই ঘণ্টা বন্ধ থাকে। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে এবং অর্ধপোড়া দেহ ময়নাতদন্তের জন্য ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠায়।

ঘটনার প্রেক্ষিতে, নিহত দিপুর ছোট ভাই অপু চন্দ্র দাস শুক্রবার বিকেলে ভালুকা মডেল থানায় ১৫০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন। পুলিশ এই মামলার তদন্ত ছাড়াও র‌্যাব ‘ছায়া-তদন্ত’ কার্যক্রম পরিচালনা করছে।

এ হত্যাকাণ্ডের প্রভাব স্থানীয় সামাজিক ও আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির ওপর স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। নিহতের প্রতি ক্ষোভ ও প্রতিক্রিয়ায় স্থানীয় মানুষদের মধ্যে উত্তেজনা লক্ষ্য করা যায়। নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ও আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের ক্ষেত্রে প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে। এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে কর্মক্ষেত্রে শ্রমিক ও ব্যবস্থাপনা সম্পর্কের ঝুঁকি, স্থানীয় জনতার প্রতিক্রিয়া এবং প্রশাসনিক সজাগতা নিয়ে বিভিন্ন পর্যালোচনা হতে পারে।

আইন আদালত শীর্ষ সংবাদ