অর্থ বাণিজ্য ডেস্ক
বঙ্গোপসাগরে তেল ও গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য প্রস্তুত করা ‘উৎপাদন বণ্টন চুক্তি (পিএসসি)-২০২৫’ পুনরায় পর্যালোচনা করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ। এ উদ্দেশ্যে নতুনভাবে একটি ৯ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে, যা খসড়া পিএসসি-২০২৫ পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় সুপারিশ দেবে। বৃহস্পতিবার বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খানের নির্দেশনায় এ সংক্রান্ত একটি দাপ্তরিক আদেশ জারি করা হয়েছে।
কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ডস কোম্পানি লিমিটেডের (বিজিএফসিএল) পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মহসিনকে। কমিটিতে রয়েছেন ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম তামিম, সিলেট গ্যাস ফিল্ডস লিমিটেডের চেয়ারম্যান আবুল মনির মো. ফয়েজ উল্লাহ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. এস এম মাইকেল কবির, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ড. সিনথিয়া ফরিদ, পেট্রোবাংলার পরিচালক প্রকৌশলী মো. শোয়েব, মহাব্যবস্থাপক হাসান মাহমুদুল ইসলাম, মেহেরুল হাসান এবং সদস্য সচিব ফারহানা শাওন।
দাপ্তরিক আদেশ অনুযায়ী, কমিটি খসড়া পিএসসি-২০২৫ পর্যালোচনা করে ২০২৫ সালের ১৫ জানুয়ারির মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেবে। পেট্রোবাংলা কমিটিকে সচিবালয় ও লজিস্টিক সহায়তা প্রদান করবে। প্রয়োজনে কমিটি নতুন সদস্য কো-অপ্ট করতে পারবে।
এর আগে ২০২৩ সালের ১১ মার্চ সমুদ্রের ২৪টি ব্লকের জন্য আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করা হলেও কোনো কোম্পানি তা জমা দেয়নি। পরবর্তীতে পেট্রোবাংলা সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলোর মতামত নেন। মডেল পিএসসি-২০২৫ নতুনভাবে সংশোধনের জন্য পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান উড ম্যাকেঞ্জি নিয়োগ করা হয়।
দেশীয় গ্যাস অনুসন্ধান জোরদারের লক্ষ্যে প্রায় এক দশক পর গভীর সমুদ্র অঞ্চলে কার্যক্রম শুরুর উদ্যোগ নেওয়া হলেও উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। তাই মডেল চুক্তি সংশোধনের প্রক্রিয়া আবার শুরু করা হয়েছে। নতুন খসড়ায় গ্যাস বিক্রয়মূল্য, পাইপলাইন ব্যয় পুনরুদ্ধার, কাজের শর্তাবলি এবং পেমেন্ট পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনা হয়েছে। গ্যাসের দাম এখন ব্রেন্ট ক্রুড অয়েলের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে, পূর্বে যা HFO ভিত্তিক ছিল। পেমেন্টের ক্ষেত্রে লাইবারের পরিবর্তে সোফার ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এছাড়া ডাটার মূল্য, ওয়ার্কার্স প্রফিট বোনাস এবং কস্ট রিকভারি নীতিতেও সংশোধন আনা হয়েছে।
পেট্রোবাংলার কর্মকর্তারা জানান, দরপত্র আহ্বানের আগে একাধিক বহুজাতিক কোম্পানি, যেমন—এক্সনমবিল, শেভরন, পেট্রোনাস, টিজিএস অ্যান্ড স্লামবার্জার, ইনপেক্স, জোগম্যাক, সিনোক, ক্রিস এনার্জি এবং ওএনজিসি আগ্রহ প্রকাশ করেছে। তবে নির্ধারিত সময়ে কেউ দরপত্র জমা দেয়নি। এক্সনমবিল তাদের আপত্তি হিসেবে জানিয়েছে, গভীর সমুদ্র থেকে গ্যাস সরবরাহে পাইপলাইন খরচে সঞ্চালন চার্জ অন্তর্ভুক্ত না থাকা এবং ওয়ার্কার্স প্রফিট পার্টিসিপেশন ফান্ড (ডব্লিউপিপিএফ) নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে। বর্তমান আইনে কোম্পানির মুনাফার ৫ শতাংশ ডব্লিউপিপিএফে দিতে হয়। এ নিয়ে শেভরনের সঙ্গে সরকারের আলোচনার প্রক্রিয়া চলছে।
চীনা কোম্পানি সিএনওওসি জানিয়েছে, পেট্রোবাংলা ডাটা বিক্রির প্যাকেজ মূল্য অতিমূল্যায়িত। একই সঙ্গে একাধিক কোম্পানি গ্যাসের বর্তমান দাম ও পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের প্রস্তাবিত মূল্যের মধ্যে পার্থক্যকে অগ্রহণযোগ্য বলে মনে করছে।
ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রসীমা বিরোধ নিষ্পত্তির পর ১ লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গকিলোমিটার বঙ্গোপসাগরীয় এলাকা বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রণে আসে। ২০১০ সালে গভীর সমুদ্রের ডিএস-১০ ও ডিএস-১১ ব্লকে যুক্তরাষ্ট্রের কনোকো ফিলিপস কাজ শুরু করে। জরিপের পর গ্যাসের দাম বাড়ানোর দাবি না মানায় তারা কাজ ছেড়ে চলে যায়। পরে অস্ট্রেলিয়ার সান্তোস এবং দক্ষিণ কোরিয়ার পস্কো দাইয়ু বাংলাদেশ থেকে সরিয়ে নেয়।
২০২৩ সালের ৭ জানুয়ারির আগে, সংসদ নির্বাচনের পূর্বে এক্সনমবিল বঙ্গোপসাগরের সব ব্লকের ইজারা চেয়ে প্রস্তাব দিয়েছিল। তবে তখনকার সরকার ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় সব ব্লক একযোগে ইজারা দিতে রাজি হয়নি। পরে এক্সনমবিলের একটি প্রতিনিধি দল ঢাকায় এসে আলোচনায় অংশ নেয়।


