জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান হাদির রাষ্ট্রীয় জানাজা সম্পন্ন হয়েছে। জানাজা শেষে তার মরদেহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্দেশে নেওয়া হয়। জানাজার নামাজে ইমামতি করেন তার বড় ভাই আবু বকর সিদ্দিক।
মঙ্গলবার দুপুরে অনুষ্ঠিত জানাজায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস, উপদেষ্টা পরিষদের একাধিক সদস্য, তিন বাহিনীর প্রধান, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ এবং বিপুলসংখ্যক সাধারণ মানুষ অংশ নেন। উপস্থিত রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) প্রতিনিধিরা ছিলেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে জানাজার সময় সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়।
এর আগে সকাল থেকে জাতীয় সংসদ ভবন এলাকা ও আশপাশে মানুষের উপস্থিতি বাড়তে থাকে। দুপুর একটার দিকে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ের ফার্মগেট, বিজয় স্মরণী ও আসাদগেটসহ আশপাশের এলাকায় উল্লেখযোগ্য জনসমাগম লক্ষ্য করা যায়। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষ জানাজায় অংশ নিতে আসেন।
শরীফ ওসমান হাদির মরদেহ মঙ্গলবার সকালে সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করা হয়। ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহটি জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে নেওয়া হয়। সেখানে ধর্মীয় বিধান অনুযায়ী গোসল ও কাফনের পর সহযোদ্ধা ও সমর্থকদের অংশগ্রহণে একটি মিছিলসহ মরদেহটি মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ের জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় আনা হয়।
ইনকিলাব মঞ্চের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, পরিবারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী হাদির জানাজা জাতীয় সংসদ ভবন এলাকায় অনুষ্ঠিত হয়। একই সঙ্গে তাকে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের কবরের পাশে সমাহিত করার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। জানাজার সময়সূচি ও দাফনের স্থান নির্ধারণে পরিবারের মতামতকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
ঘটনার পটভূমিতে জানা যায়, গত ১২ ডিসেম্বর রাজধানীর বিজয়নগর ও পুরানা পল্টন এলাকায় নির্বাচনী প্রচারণা ও গণসংযোগ কার্যক্রমে অংশ নিতে গিয়ে শরীফ ওসমান হাদি হামলার শিকার হন। সে সময় একটি চলন্ত মোটরসাইকেল থেকে তাকে লক্ষ্য করে গুলি করা হয়। গুলিটি তার মাথায় আঘাত করে। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে জরুরি অস্ত্রোপচার শেষে অবস্থার অবনতি হলে তাকে ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।
চিকিৎসকদের পরামর্শে পরবর্তীতে উন্নত চিকিৎসার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে তাকে সিঙ্গাপুরে পাঠানো হয়। সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৮ ডিসেম্বর রাতে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তার মৃত্যুর খবরে রাজনৈতিক অঙ্গনসহ বিভিন্ন মহলে শোকের প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।
মরদেহ দেশে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে ১৯ ডিসেম্বর বাংলাদেশ সময় দুপুর ২টা ৩ মিনিটে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে সিঙ্গাপুরের চাঙ্গি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে মরদেহটি ঢাকার উদ্দেশে রওনা হয়। একই দিন সন্ধ্যা ৫টা ৪৮ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে মরদেহবাহী ফ্লাইটটি অবতরণ করে। বিমানবন্দরে আনুষ্ঠানিকতা শেষে মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
শরীফ ওসমান হাদির মৃত্যু ঘিরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় এসেছে। হামলার ঘটনার তদন্ত ও দায়ীদের শনাক্তে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কাজ করছে বলে জানা গেছে। রাজনৈতিক কর্মসূচি ও গণসংযোগকালে নিরাপত্তা জোরদারের প্রয়োজনীয়তার বিষয়টিও আলোচনায় এসেছে।


