সব বাংলাদেশির বুকে শরিফ ওসমান হাদি আছেন এবং ভবিষ্যতেও তিনি মানুষের মাঝে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন: প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস

সব বাংলাদেশির বুকে শরিফ ওসমান হাদি আছেন এবং ভবিষ্যতেও তিনি মানুষের মাঝে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন: প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস

জাতীয় ডেস্ক

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদির জানাজাপূর্ব সমাবেশে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, সব বাংলাদেশির বুকে শরিফ ওসমান হাদি আছেন এবং ভবিষ্যতেও তিনি মানুষের মাঝে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। শনিবার (২০ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় অনুষ্ঠিত জানাজাপূর্ব বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, আজকের এই আয়োজন কেবল বিদায়ের জন্য নয়, বরং হাদির স্মৃতি ও আদর্শ মানুষের মধ্যে বহন করার অঙ্গীকারের প্রতিফলন। তিনি উল্লেখ করেন, সমাজে ন্যায়, মানবিকতা ও অধিকার প্রতিষ্ঠার যে বার্তা হাদি তুলে ধরেছিলেন, তা ভবিষ্যতেও প্রাসঙ্গিক থাকবে। এ সময় তিনি হাদির আত্মত্যাগের কথা স্মরণ করেন এবং উপস্থিত সবাইকে শান্তিপূর্ণ ও শৃঙ্খলাবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান।

এর আগে শনিবার সকালে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে শরিফ ওসমান হাদির মরদেহের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ নেওয়া হয় জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে। সেখানে প্রয়োজনীয় ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা শেষে সহযোদ্ধা ও সমর্থকদের অংশগ্রহণে একটি শৃঙ্খলাবদ্ধ মিছিলের মাধ্যমে মরদেহ নিয়ে আসা হয় মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ের জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায়। পুরো কার্যক্রমে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করে।

শনিবার সকাল থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষ সংসদ ভবন এলাকায় জড়ো হতে শুরু করেন। দুপুর ১টার দিকে ফার্মগেট, বিজয় সরণি, আসাদগেটসহ আশপাশের সড়কগুলোতে মানুষের উপস্থিতি বাড়তে দেখা যায়। জানাজাকে কেন্দ্র করে এলাকায় যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হয় এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়। উপস্থিত মানুষদের একটি অংশ বিভিন্ন স্লোগান দেন, যা হাদির স্মৃতি ও তার প্রতি শ্রদ্ধা প্রকাশের অংশ হিসেবে বিবেচিত হয়।

ইনকিলাব মঞ্চের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, পরিবারে সদস্যদের দাবির ভিত্তিতে শরিফ ওসমান হাদিকে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের কবরের পাশে সমাহিত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, জানাজা শেষে মরদেহ দাফনের জন্য নিয়ে যাওয়া হবে নির্ধারিত স্থানে। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে হাদির প্রতি রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক মর্যাদা প্রদর্শনের বিষয়টি গুরুত্ব পেয়েছে।

শরিফ ওসমান হাদির জানাজার নামাজ পরিচালনার বিষয়ে পরিবারের পক্ষ থেকে আগেই সিদ্ধান্ত জানানো হয়। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিউরোসার্জারি বিভাগের চিকিৎসক এবং ন্যাশনাল হেলথ অ্যালায়েন্সের (এনএইচএ) সদস্য সচিব ডা. মো. আব্দুল আহাদ জানান, জানাজার নামাজ পড়াবেন হাদির বড় ভাই আবু বকর সিদ্দিক। তিনি আরও জানান, জানাজা শেষে মরদেহ দাফন করা হবে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের কবরের পাশেই।

শরিফ ওসমান হাদির মৃত্যু এবং জানাজাকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংগঠন শোক প্রকাশ করেছেন। অনেকেই তার অবদান স্মরণ করে বলেন, তিনি সমাজে ন্যায়বিচার ও মানবিক মূল্যবোধের পক্ষে সক্রিয় ছিলেন। বিশ্লেষকদের মতে, হাদির মৃত্যু সমসাময়িক সামাজিক আন্দোলন ও নাগরিক উদ্যোগের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রেক্ষাপট তৈরি করেছে, যা ভবিষ্যতে সংশ্লিষ্ট আন্দোলনগুলোর দিকনির্দেশনায় প্রভাব ফেলতে পারে।

সার্বিকভাবে জানাজা ও দাফন কার্যক্রম শান্তিপূর্ণ পরিবেশে সম্পন্ন করার জন্য প্রশাসন, স্বেচ্ছাসেবক ও আয়োজকদের সমন্বিত উদ্যোগ লক্ষ করা গেছে। সংশ্লিষ্টরা আশা প্রকাশ করেছেন, এই আয়োজন থেকে সামাজিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখার পাশাপাশি প্রয়াত শরিফ ওসমান হাদির স্মৃতি যথাযথ মর্যাদায় সংরক্ষিত থাকবে।

জাতীয় শীর্ষ সংবাদ