টিএফআই সেলে গুম-নির্যাতন: ১৭ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনে আদেশ আজ

টিএফআই সেলে গুম-নির্যাতন: ১৭ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনে আদেশ আজ

আইন আদালত ডেস্ক

আওয়ামী লীগের দীর্ঘ শাসনামলে টাস্কফোর্স ফর ইন্টারোগেশন সেল (টিএফআই)-এ সংঘটিত গুম ও নির্যাতনের অভিযোগে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গ্রেপ্তার ১০ জন সেনা কর্মকর্তাসহ মোট ১৭ জনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের বিষয়ে আদেশ দেওয়ার দিন আজ নির্ধারিত রয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ আজ এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানাবেন। অভিযোগ গঠনের আদেশ হলে এ মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক বিচার কার্যক্রম শুরু হবে।

রোববার (২১ ডিসেম্বর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল এ বিষয়ে আদেশ দেবেন। এর মাধ্যমে মামলাটি বিচার পর্যায়ে যাবে কি না, সে বিষয়ে স্পষ্টতা আসবে। মামলাটি টিএফআই সেলে গুম ও নির্যাতনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে দায়ের করা হয়, যা মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে গণ্য করে প্রসিকিউশন আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করেছে।

এ মামলায় মোট আসামির সংখ্যা ১৭ জন। তাঁদের মধ্যে গ্রেপ্তার রয়েছেন ১০ জন সেনা কর্মকর্তা। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন— র‌্যাবের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তোফায়েল মোস্তফা সারোয়ার, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. কামরুল হাসান, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাহাবুব আলম, কর্নেল কেএম আজাদ, কর্নেল আবদুল্লাহ আল মোমেন, কর্নেল আনোয়ার লতিফ খান (অবসর প্রস্তুতিমূলক ছুটিতে), র‌্যাবের গোয়েন্দা শাখার সাবেক পরিচালক কর্নেল মো. মশিউর রহমান, লেফটেন্যান্ট কর্নেল সাইফুল ইসলাম সুমন এবং লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. সারওয়ার বিন কাশেম।

এ ছাড়া মামলার অপর আসামিদের মধ্যে কয়েকজন পলাতক রয়েছেন। পলাতক আসামিরা হলেন— ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিরক্ষাবিষয়ক সাবেক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল, সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক বেনজির আহমেদ, র‌্যাবের সাবেক মহাপরিচালক এম খুরশিদ হোসেন, র‌্যাবের সাবেক মহাপরিচালক ব্যারিস্টার হারুন অর রশিদ এবং র‌্যাবের সাবেক পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) মো. খায়রুল ইসলাম।

ট্রাইব্যুনাল সূত্রে জানা যায়, গত ১৪ ডিসেম্বর অভিযোগ গঠনের বিষয়ে শুনানিতে গ্রেপ্তার তিন আসামির পক্ষে আইনজীবী হামিদুল মিসবাহ এবং সাতজনের পক্ষে আইনজীবী তাবারক হোসেন অংশ নেন। পলাতক আসাদুজ্জামান খাঁন কামালসহ তিনজনের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী এম হাসান ইমাম শুনানি করেন। আরও তিনজনের পক্ষে আইনজীবী সুজাদ মিয়া এবং শেখ হাসিনার পক্ষে আইনজীবী মো. আমির হোসেন শুনানিতে অংশ নেন। আসামিপক্ষের আইনজীবীরা পৃথক পৃথক যুক্তি উপস্থাপন করে তাঁদের মক্কেলদের অব্যাহতি চেয়ে আবেদন করেন।

অন্যদিকে, প্রসিকিউশনের পক্ষে প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামিম আসামিদের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরুর আবেদন জানান। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে ট্রাইব্যুনাল অভিযোগ গঠনের বিষয়ে আদেশ ঘোষণার জন্য আজকের দিন ধার্য করেন।

এর আগে, গত ৩ ডিসেম্বর চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম অভিযোগ গঠনের ওপর শুনানি শেষ করেন। শুনানিকালে প্রসিকিউশন পক্ষ থেকে টিএফআই সেলে সংঘটিত গুম ও নির্যাতনের ঘটনাবলি, সংশ্লিষ্ট কাঠামো এবং এসব ঘটনার ধারাবাহিকতা তুলে ধরা হয়। প্রসিকিউশনের অভিযোগে বলা হয়, নির্দিষ্ট একটি সময়কালে টিএফআই সেলে আটক ব্যক্তিদের গোপনে আটকে রেখে নির্যাতন করা হতো এবং তাঁদের অনেকের অবস্থান দীর্ঘ সময় অজানা থাকত।

মামলার নথি অনুযায়ী, চলতি বছরের ৮ অক্টোবর প্রসিকিউশন এ মামলায় আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করে। অভিযোগ আমলে নিয়ে ট্রাইব্যুনাল ১৭ জনের বিরুদ্ধেই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। পরে ২২ অক্টোবর সেনা হেফাজতে থাকা ১০ জন কর্মকর্তাকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। শুনানি শেষে তাঁদের গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেওয়া হয়। একই সঙ্গে পলাতক আসামিদের হাজির নিশ্চিত করতে সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দেন ট্রাইব্যুনাল।

নির্ধারিত সময়ে পলাতক আসামিরা হাজির না হওয়ায় আদালত তাঁদের পক্ষে রাষ্ট্রীয় প্রতিরক্ষা আইনজীবী নিয়োগ দেন। আজ অভিযোগ গঠনের বিষয়ে ট্রাইব্যুনালের আদেশের ওপর নির্ভর করবে এ মামলায় আনুষ্ঠানিক বিচার কার্যক্রম শুরুর পরবর্তী ধাপ ও সময়সূচি।

আইন আদালত শীর্ষ সংবাদ