ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট সামনে রেখে নিরাপত্তা প্রস্তুতি পর্যালোচনায় সশস্ত্র বাহিনীর শীর্ষ পর্যায়ের বৈঠক

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট সামনে রেখে নিরাপত্তা প্রস্তুতি পর্যালোচনায় সশস্ত্র বাহিনীর শীর্ষ পর্যায়ের বৈঠক

নিজস্ব প্রতিবেদক

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও আসন্ন গণভোটকে কেন্দ্র করে সুষ্ঠু, অবাধ ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিত করতে প্রতিরক্ষা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে জরুরি বৈঠকে বসছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এন নাসির উদ্দিন। রোববার (২১ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে এই উচ্চপর্যায়ের সভা অনুষ্ঠিত হবে বলে নির্বাচন কমিশন (ইসি) সূত্রে নিশ্চিত করা হয়েছে।

নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, বৈঠকটি দুই ধাপে অনুষ্ঠিত হবে। প্রথম ধাপে দুপুর ১২টায় সিইসি এ এম এন নাসির উদ্দিন সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমান বাহিনীর প্রধানদের সঙ্গে একান্ত বৈঠকে অংশ নেবেন। এই পর্বে মূলত নির্বাচনকালীন সময়ে সশস্ত্র বাহিনীর ভূমিকা, নিরাপত্তা সহায়তার ধরন, সম্ভাব্য ঝুঁকি মোকাবিলার কৌশল এবং প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা হবে। নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখতে বাহিনীগুলোর মধ্যে সমন্বয় ও দায়িত্ব বণ্টনের বিষয়টিও আলোচনায় গুরুত্ব পাবে।

দ্বিতীয় ধাপে দুপুর আড়াইটায় নির্বাচন কমিশন ভবনের সম্মেলন কক্ষে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত পূর্ণাঙ্গ সভা অনুষ্ঠিত হবে। এতে সভাপতিত্ব করবেন সিইসি। এই সভায় পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ছাড়াও র‍্যাব, বিজিবি ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন। একই সঙ্গে নির্বাচন কমিশনাররাও সভায় অংশ নেবেন।

ইসি সূত্র জানায়, সভার মূল লক্ষ্য হলো ভোটের আগে ও ভোটগ্রহণের সময় দেশের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পর্যালোচনা করা এবং প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি জোরদার করা। বিশেষ করে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার কার্যক্রম, সন্ত্রাসী বা সহিংস কর্মকাণ্ড প্রতিরোধ, সংবেদনশীল এলাকা চিহ্নিতকরণ এবং যৌথ বাহিনীর চলমান কার্যক্রম আরও কার্যকর করার বিষয়গুলো বিস্তারিতভাবে আলোচনা হবে।

সভায় অতীতের নির্বাচনগুলোর অভিজ্ঞতা পর্যালোচনা করে কোথায় কী ধরনের চ্যালেঞ্জ তৈরি হতে পারে, সে বিষয়ে বিশ্লেষণ করা হবে। পাশাপাশি দ্রুত প্রতিক্রিয়া ব্যবস্থা, গোয়েন্দা তথ্যের সমন্বয়, ভোটকেন্দ্র ও আশপাশের এলাকার নিরাপত্তা জোরদার এবং ভোটারদের নিরাপদ পরিবেশে ভোটাধিকার প্রয়োগ নিশ্চিত করার কৌশল নিয়েও আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে।

নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নির্বাচনের বিশ্বাসযোগ্যতা ও গ্রহণযোগ্যতা অনেকাংশেই নির্ভর করে নিরাপত্তা ব্যবস্থার ওপর। সে কারণে সশস্ত্র বাহিনী, পুলিশ ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যে সমন্বিত পরিকল্পনা গ্রহণকে কমিশন বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে। প্রয়োজনে নির্বাচনকালীন সময়ে সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েনের আইনগত কাঠামো ও কার্যপরিধি নিয়েও সভায় আলোচনা হতে পারে।

এ ছাড়া প্রার্থী ও রাজনৈতিক দলের জন্য প্রণীত আচরণবিধি বাস্তবায়নের বিষয়টিও আলোচ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত থাকবে। আচরণবিধি লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ, মাঠপর্যায়ে নজরদারি জোরদার এবং প্রশাসনের ভূমিকা আরও সক্রিয় করার বিষয়গুলো সভায় গুরুত্ব পাবে বলে ইসি সূত্র জানিয়েছে।

নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, সভা শেষে তিন বাহিনীর প্রধান এবং পুলিশ প্রধানের উপস্থিতিতে গণমাধ্যমকে ব্রিফ করা হবে। ব্রিফিংয়ে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটকে ঘিরে দেশব্যাপী যে নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে, সে বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হবে। পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, যৌথ বাহিনীর ভূমিকা এবং নির্বাচনকালীন নিরাপত্তা পরিকল্পনার সার্বিক চিত্র তুলে ধরবেন সিইসি ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

ইসি কর্মকর্তাদের মতে, এই উচ্চপর্যায়ের বৈঠক নির্বাচনী প্রস্তুতির একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। এর মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট সব সংস্থার মধ্যে সমন্বয় আরও দৃঢ় হবে এবং নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে কার্যকর সিদ্ধান্ত গ্রহণ সম্ভব হবে। নির্বাচন কমিশন আশা করছে, সবার সম্মিলিত উদ্যোগে ভোটাররা নিরাপদ ও নির্বিঘ্ন পরিবেশে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন।

জাতীয় শীর্ষ সংবাদ