সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সহিংসতা উসকানির অভিযোগে মেটাকে চিঠি এনসিএসএর

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সহিংসতা উসকানির অভিযোগে মেটাকে চিঠি এনসিএসএর

প্রযুক্তি ডেস্ক

বাংলাদেশে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সহিংসতা, ভয়ভীতি প্রদর্শন ও মব অ্যাকশনের আহ্বান ছড়িয়ে পড়া নিয়ে গভীর উদ্বেগ জানিয়ে মেটা কর্তৃপক্ষকে আনুষ্ঠানিক চিঠি দিয়েছে জাতীয় সাইবার সুরক্ষা এজেন্সি (এনসিএসএ)। ফেসবুকসহ মেটার বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে এ ধরনের কনটেন্ট জাতীয় নিরাপত্তা, সামাজিক স্থিতিশীলতা ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার জন্য হুমকি সৃষ্টি করছে বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে। শুক্রবার এনসিএসএর মহাপরিচালক মেটার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে এই চিঠি পাঠান।

এনসিএসএর পক্ষ থেকে জানানো হয়, চিঠিটি মেটার ভাইস প্রেসিডেন্ট (পাবলিক পলিসি) সাইমন মিলনার, পরিচালক (পাবলিক পলিসি, আঞ্চলিক কার্যালয়) সারিম আজিজ এবং হেড অব হিউম্যান রাইটস পলিসি ফ্রেডেরিক রসকিকে পাঠানো হয়েছে। চিঠি পাঠানোর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব।

চিঠিতে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট তুলে ধরে বলা হয়, দেশে চলমান অস্থিরতা ইতোমধ্যে সহিংসতা ও অস্থিতিশীলতা বাড়িয়েছে। ২০২৪ সালের জুলাইয়ে সংঘটিত গণঅভ্যুত্থানে এক হাজার চারশর বেশি শিক্ষার্থী নিহত হন এবং হাজারো মানুষ আহত হন বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশ একটি ভঙ্গুর রাজনৈতিক রূপান্তরের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, যেখানে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আইনশৃঙ্খলা পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে বিশ্বাসযোগ্য ও গ্রহণযোগ্য করার লক্ষ্যে কাজ করছে।

এনসিএসএর অভিযোগ অনুযায়ী, এই সংকটময় সময়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, বিশেষ করে ফেসবুক, সহিংসতা উসকে দেওয়া, ভয়ভীতি প্রদর্শন এবং নির্বাচন ব্যাহত করার আহ্বান ছড়ানোর ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এসব কনটেন্টের প্রভাব বাস্তব জীবনে সহিংসতা বৃদ্ধিতে সহায়ক হচ্ছে বলেও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।

চিঠিতে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের এক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির মর্মান্তিক মৃত্যু এবং বিভিন্ন গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানের ওপর হামলার ঘটনাকে উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরা হয়। সেখানে বলা হয়, সাবেক শাসনব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত কিছু ব্যক্তি প্রকাশ্যে সহিংস কর্মকাণ্ডকে সমর্থন জানিয়েছেন এবং সাংবাদিক ও গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে সরাসরি সহিংসতার আহ্বান জানিয়েছেন। এসব আহ্বানের পরপরই দেশের দুটি গণমাধ্যম কার্যালয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে, যা জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করে এবং সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার জন্য গুরুতর হুমকি হয়ে ওঠে।

এনসিএসএর দাবি, সহিংসতা উসকে দেওয়া ও সংগঠিত করার সঙ্গে জড়িত হিসেবে চিহ্নিত একাধিক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম অ্যাকাউন্ট নিষ্ক্রিয় করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ জানানো হলেও মেটা সময়মতো কার্যকর ব্যবস্থা নেয়নি। চিঠিতে বলা হয়, সহিংসতামূলক কনটেন্টের অনিয়ন্ত্রিত প্রচার জাতীয় স্থিতিশীলতা, সামাজিক সম্প্রীতি, সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর নিরাপত্তা এবং সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার জন্য সরাসরি হুমকি সৃষ্টি করছে।

চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়, মেটার ভূমিকা কেবল প্রযুক্তিগত দায়িত্বের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; বরং এর সঙ্গে একটি গুরুত্বপূর্ণ গণদায়িত্বও জড়িত। বাংলাদেশে মেটার কোনো স্থানীয় কার্যালয় না থাকায় জরুরি নিয়ন্ত্রক ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত যোগাযোগ সাধারণত বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় এবং এনসিএসএর মাধ্যমে পরিচালিত হয় বলেও জানানো হয়েছে।

পরিস্থিতির গুরুত্ব বিবেচনায় এনসিএসএ মেটাকে কয়েকটি নির্দিষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে। এসবের মধ্যে রয়েছে সহিংসতা ও সামাজিক অস্থিতিশীলতা রোধে প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারের ক্ষেত্রে দায়িত্ব স্বীকার, বাংলাদেশসংক্রান্ত কনটেন্টে কমিউনিটি স্ট্যান্ডার্ড দ্রুত ও কঠোরভাবে প্রয়োগ, বাংলা ভাষায় কনটেন্ট মডারেশন ও সেন্টিমেন্ট অ্যানালাইসিস জোরদার করা এবং অন্তত ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে নির্ধারিত জাতীয় নির্বাচন সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশসংক্রান্ত কনটেন্টের ওপর বাড়তি নজরদারি বজায় রাখা।

চিঠিতে বলা হয়, বিষয়টি জাতীয় গুরুত্ব বহন করে। গত ১৭ বছরের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশ একটি প্রকৃত অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দেখেনি। আসন্ন জাতীয় নির্বাচন নাগরিকদের জীবন ও নিরাপত্তা, গণতান্ত্রিক অধিকার, সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা এবং দেশের দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতার সঙ্গে গভীরভাবে সম্পৃক্ত। এই প্রেক্ষাপটে মেটা যথাযথ দায়িত্ববোধ ও জরুরি মনোভাব নিয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নেবে—এমন প্রত্যাশার কথা জানিয়েছে জাতীয় সাইবার সুরক্ষা এজেন্সি।

তথ্য প্রুযুক্তি শীর্ষ সংবাদ