গণভোটে ব্যাপক জনসম্পৃক্ততা নিশ্চিত করাই সরকারের প্রধান লক্ষ্য: রিজওয়ানা হাসান

গণভোটে ব্যাপক জনসম্পৃক্ততা নিশ্চিত করাই সরকারের প্রধান লক্ষ্য: রিজওয়ানা হাসান

জাতীয় ডেস্ক

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট ২০২৬ সামনে রেখে গণভোটে বিপুলসংখ্যক মানুষের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করাই সরকারের প্রধান লক্ষ্য বলে জানিয়েছেন তথ্য ও সম্প্রচার, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তিনি বলেন, জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণ ছাড়া কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তনের ধারা সূচিত হওয়া সম্ভব নয় এবং গণভোটের মাধ্যমেই সেই অংশগ্রহণ কার্যকরভাবে নিশ্চিত করা যাবে।

সোমবার ভোটারদের সচেতন ও উদ্বুদ্ধ করতে ‘ভোটের গাড়ি’ প্রচারণার উদ্বোধন অনুষ্ঠানের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, এবারের গণভোট কোনো আনুষ্ঠানিক বা প্রতীকী উদ্যোগ নয়; বরং এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যপূর্ণ সুযোগ, যার মাধ্যমে রাষ্ট্র পরিচালনা ও ক্ষমতার ভারসাম্য সংক্রান্ত বিষয়ে জনগণের মতামত প্রতিফলিত হবে। তিনি জানান, এ লক্ষ্য সামনে রেখেই সরকার দেশব্যাপী ধারাবাহিক ও বিস্তৃত সচেতনতামূলক কর্মসূচি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে।

রিজওয়ানা হাসান বলেন, নির্বাচন ও গণভোটকে সুষ্ঠু, অবাধ ও গ্রহণযোগ্য করতে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। তবে একই সঙ্গে তিনি উল্লেখ করেন, কিছু গোষ্ঠী আইনবহির্ভূত কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে জনমতকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। এ ধরনের ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে বলে তিনি জানান।

তিনি আরও বলেন, চলমান সংস্কার কার্যক্রম সফল করতে হলে গণভোটে ব্যাপক জনসম্পৃক্ততা অপরিহার্য। সাধারণ মানুষের কাছে স্পষ্টভাবে তুলে ধরা হবে কেন পরিবর্তন প্রয়োজন এবং সেই পরিবর্তন তাদের দৈনন্দিন জীবন, সামাজিক কাঠামো ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ওপর কী ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে। এ জন্য প্রতিটি জেলা ও উপজেলার জন্য পৃথক প্রচার ক্যালেন্ডার প্রণয়ন করা হবে। পাশাপাশি স্থানীয় পর্যায়ের গণ্যমান্য ব্যক্তি, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রতিনিধিদের সম্পৃক্ত করে ধারাবাহিক প্রচারণা চালানো হবে বলে জানান তিনি।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় ভিডিও বার্তার মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস ‘দেশের চাবি, আপনার হাতে’ স্লোগানে ‘ভোটের গাড়ি’ প্রচারণার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। এ সময় তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ এবং প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব মোহাম্মদ শফিকুল আলম ফিতা কেটে কর্মসূচির সূচনা করেন।

অনুষ্ঠানে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সচিব মাহবুবা ফারজানা, অতিরিক্ত প্রধান তথ্য কর্মকর্তা (প্রেস ও মনিটরিং) ইয়াকুব আলীসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এ সময় সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় নির্মিত গণভোট ও নির্বাচন বিষয়ে জনসচেতনতামূলক পাঁচটি টেলিভিশন বিজ্ঞাপনচিত্র প্রদর্শন করা হয়, যেখানে ভোটাধিকার প্রয়োগের গুরুত্ব ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণের বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এবারের নির্বাচন ও গণভোটকে সামনে রেখে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় সারা দেশে মোট ১০টি ‘ভোটের গাড়ি’ পরিচালনা করবে। এসব গাড়ির মাধ্যমে প্রত্যন্ত অঞ্চলসহ বিভিন্ন জনসমাগমস্থলে গিয়ে ভোটারদের মধ্যে তথ্যভিত্তিক বার্তা পৌঁছে দেওয়া হবে। প্রচারণায় অডিও-ভিজ্যুয়াল উপকরণ, লিফলেট এবং স্থানীয় পর্যায়ের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড যুক্ত করার পরিকল্পনাও রয়েছে।

এর আগে উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান সাম্প্রতিক সহিংসতায় ক্ষতিগ্রস্ত কয়েকটি স্থাপনা পরিদর্শন করেন এবং এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে সরকারের কঠোর অবস্থানের কথা পুনর্ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, নির্বাচন ও গণভোটকে কেন্দ্র করে যে কোনো ধরনের সহিংসতা বা আইনবিরোধী তৎপরতা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার জন্য ক্ষতিকর এবং এসব ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, ‘ভোটের গাড়ি’সহ বিভিন্ন সচেতনতামূলক কর্মসূচির মাধ্যমে ভোটারদের অংশগ্রহণ বাড়ানো গেলে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক ও অংশগ্রহণমূলক প্রক্রিয়ায় রূপ নিতে পারে, যা ভবিষ্যৎ রাষ্ট্র পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে।

জাতীয় শীর্ষ সংবাদ