নিজস্ব প্রতিবেদক
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে যে বাংলাদেশ গড়ে ওঠার প্রত্যাশা ছিল, বাস্তবে দেশ সেই পথে এগোচ্ছে না। তিনি স্পষ্ট করে জানান, জুলাই গণঅভ্যুত্থান কোনোভাবেই মবক্রেসি বা বিশৃঙ্খল জনতার শাসনের প্রতীক নয় এবং এ ধরনের কর্মকাণ্ডকে এনসিপি সমর্থন করে না। বরং অভ্যুত্থানের নামে পরিকল্পিতভাবে কিছু গোষ্ঠী সহিংসতা ও নাশকতার পথ বেছে নিচ্ছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।
সোমবার (২২ ডিসেম্বর) সকালে রাজধানীর একটি হোটেলে সম্পাদক পরিষদ ও সংবাদপত্র মালিকদের সংগঠন নোয়াবের উদ্যোগে আয়োজিত এক প্রতিবাদ সভায় এসব কথা বলেন নাহিদ ইসলাম। সভায় বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপটে গণমাধ্যমের ভূমিকা, চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং সাম্প্রতিক সহিংসতার বিষয়ে আলোচনা হয়।
সভায় বক্তব্যে নাহিদ ইসলাম বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থান ছিল একটি গণতান্ত্রিক আন্দোলন, যার মূল লক্ষ্য ছিল রাষ্ট্রব্যবস্থায় জবাবদিহি, সুশাসন ও জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেই আন্দোলনের স্লোগান ও প্রতীককে বিকৃতভাবে ব্যবহার করে একটি সংঘবদ্ধ গোষ্ঠী সহিংসতা ও অরাজকতা সৃষ্টি করছে। তার ভাষায়, “জুলাই অভ্যুত্থান মবক্রেসি নয়। এটি কোনো উচ্ছৃঙ্খল জনতার কর্মকাণ্ডকে বৈধতা দেয় না।”
তিনি অভিযোগ করেন, সাম্প্রতিক সময়ে জুলাইয়ের স্লোগানের অপব্যবহার করে পরিকল্পিতভাবে ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরীফ ওসমান হাদিকে সামনে রেখে নাশকতা চালানো হয়েছে। এতে গণআন্দোলনের মূল দর্শন ও লক্ষ্য প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি হচ্ছে। নাহিদ ইসলাম বলেন, এসব কর্মকাণ্ড আন্দোলনের আদর্শের সঙ্গে সাংঘর্ষিক এবং এর দায় আন্দোলনের ওপর চাপানো অনুচিত।
এনসিপি আহ্বায়ক আরও বলেন, দেশে বর্তমানে যে রাজনৈতিক পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে, সেখানে মবক্রেসিকে একটি কৌশল হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। তার মতে, পুরো দেশের রাজনীতি ও আসন্ন নির্বাচনকে একদিকে প্রভাবিত করার লক্ষ্যেই এই ধরনের বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হচ্ছে। তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া দুর্বল করার জন্য সহিংসতা ও ভয়ভীতি ছড়ানো হলে তা দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ায়।
নাহিদ ইসলাম স্পষ্ট করে জানান, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের নামে যেকোনো ধরনের সহিংসতা, নাশকতা বা বিশৃঙ্খলার সঙ্গে এনসিপির কোনো সম্পর্ক নেই। দলটি এসব কর্মকাণ্ডকে সমর্থন করে না এবং ভবিষ্যতেও করবে না। তিনি বলেন, রাজনৈতিক পরিবর্তন আসতে হলে তা অবশ্যই শান্তিপূর্ণ, সংগঠিত ও গণতান্ত্রিক উপায়ে হতে হবে।
সভায় আলোচনায় উঠে আসে, সাম্প্রতিক সময়ে রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে বিভিন্ন স্থানে সংঘাত, ভাঙচুর ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি জনমনে উদ্বেগ তৈরি করেছে। বক্তারা বলেন, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও দায়িত্বশীল ভূমিকা এ ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক তথ্য উপস্থাপন ও অপপ্রচার রোধের মাধ্যমে গণমাধ্যম সমাজে স্থিতিশীলতা রক্ষায় ভূমিকা রাখতে পারে।
নাহিদ ইসলাম বলেন, গণমাধ্যমকে চাপের মুখে ফেলে বা ভয় দেখিয়ে সত্য আড়াল করা সম্ভব নয়। বরং দায়িত্বশীল সাংবাদিকতা গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করে এবং সহিংস রাজনীতির বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তুলতে সহায়ক ভূমিকা রাখে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, গণমাধ্যম সত্য ও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনের মাধ্যমে বিভ্রান্তি দূর করতে কার্যকর ভূমিকা রাখবে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের আদর্শ নিয়ে বিভ্রান্তি ও বিতর্ক বাড়লে তা ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় প্রভাব ফেলতে পারে। সহিংসতা ও মবচাপের সংস্কৃতি যদি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পায়, তবে তা নির্বাচন, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
এই প্রেক্ষাপটে এনসিপির পক্ষ থেকে মবক্রেসির বিরুদ্ধে অবস্থান স্পষ্ট করা রাজনৈতিক অঙ্গনে একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা হিসেবে দেখা হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সহিংসতা পরিহার এবং গণতান্ত্রিক চর্চায় ঐকমত্য তৈরি হলে দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও সুশাসনের পথ সুগম হতে পারে।


