রাজনীতি ডেস্ক
নিরাপত্তা ঝুঁকিতে থাকা ২০ জন রাজনৈতিক ব্যক্তিকে ব্যক্তিগত নিরাপত্তা হিসেবে গানম্যান দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। সোমবার (২২ ডিসেম্বর) দুপুরে সচিবালয়ে আইন-শৃঙ্খলা সংক্রান্ত কমিটির বৈঠক শেষে এক ব্রিফিংয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী এ তথ্য জানান। ঘোষিত তালিকায় গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি ও ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরের নাম থাকলেও তিনি সরকারের দেওয়া গানম্যান গ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন।
সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ভবনের সামনে ডাকসুতে হামলার ছয় বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত এক প্রতিবাদ সভায় অংশ নিয়ে নুরুল হক নুর তার অবস্থান স্পষ্ট করেন। তিনি বলেন, সরকারের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে জনসমক্ষে হামলার অভিযোগের বিচার না হওয়া পর্যন্ত তিনি সরকারের দেওয়া কোনো নিরাপত্তা গ্রহণ করবেন না। তার বক্তব্যে তিনি উল্লেখ করেন, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ উঠেছে, সেগুলোর সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার নিশ্চিত না হলে ব্যক্তিগত নিরাপত্তা গ্রহণ করা তার কাছে গ্রহণযোগ্য নয়।
নুরুল হক নুর আরও বলেন, একজন বা কয়েকজন ব্যক্তিকে গানম্যান দেওয়ার মাধ্যমে সামগ্রিকভাবে দেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতির উন্নয়ন সম্ভব নয়। তার মতে, জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কাঠামোগত সংস্কার প্রয়োজন। তিনি বলেন, শুধুমাত্র নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী প্রার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করলে সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হবে না এবং এতে সাধারণ মানুষের মধ্যে নিরাপত্তাবোধ তৈরি হবে না।
তিনি আসন্ন নির্বাচন প্রসঙ্গে বলেন, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন এবং নিরাপদ ভোটের পরিবেশ নিশ্চিত করা না গেলে ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে উপস্থিতি বাধাগ্রস্ত হতে পারে। তার বক্তব্যে নির্বাচনকালীন নিরাপত্তা ও রাজনৈতিক পরিবেশের গুরুত্বের বিষয়টি উঠে আসে, যা ভোটারদের অংশগ্রহণের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত বলে তিনি উল্লেখ করেন।
প্রতিবাদ সভায় নুরুল হক নুর চলতি বছরের ২৯ আগস্টের একটি ঘটনার প্রসঙ্গ তোলেন। তিনি অভিযোগ করেন, ওইদিন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা পোশাক পরিহিত অবস্থায় জনসমক্ষে হামলা চালান। তার ভাষ্য অনুযায়ী, এ ঘটনার তদন্তের জন্য ৪ সেপ্টেম্বর একটি বিচার বিভাগীয় কমিটি গঠন করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয় এবং ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশের কথা বলা হয়েছিল। তবে নির্ধারিত সময় পার হলেও এখন পর্যন্ত ওই হামলার ঘটনায় জড়িতদের শনাক্ত বা বিচার সংক্রান্ত কোনো অগ্রগতি দৃশ্যমান হয়নি বলে তিনি দাবি করেন।
এই প্রেক্ষাপটে নুরুল হক নুর বলেন, হামলার ঘটনায় বিচার না হওয়ায় সরকারের দায় এড়ানোর সুযোগ নেই। তিনি অভিযোগ করেন, ঘটনার পর থেকে কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়ার মাধ্যমে সরকার নীরব ভূমিকা পালন করছে। তার বক্তব্যে তিনি বলেন, হামলার বিচার না হলে তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টাসহ সংশ্লিষ্ট উপদেষ্টাদের দায়ী করবেন।
গানম্যান প্রত্যাখ্যানের সিদ্ধান্ত প্রসঙ্গে নুরুল হক নুর বলেন, ব্যক্তিগত নিরাপত্তা না নেওয়ার ফলে ভবিষ্যতে তার ওপর কোনো ধরনের হামলার ঘটনা ঘটলে এর দায় বর্তমান উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যদের নিতে হবে। তিনি এ বিষয়ে সতর্কবার্তা দেন এবং বলেন, ব্যক্তিগত নিরাপত্তার চেয়ে তার কাছে ন্যায়বিচার ও জবাবদিহি অধিক গুরুত্বপূর্ণ।
অন্যদিকে, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী ব্রিফিংয়ে জানান, সাম্প্রতিক সময়ে কয়েকজন রাজনৈতিক ব্যক্তি নিরাপত্তা শঙ্কার কথা জানানোয় সরকার পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তিনি বলেন, সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর মূল্যায়নের ভিত্তিতেই নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারের অংশ হিসেবে গানম্যান দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবে কোনো ব্যক্তি যদি এই নিরাপত্তা গ্রহণ না করতে চান, সে সিদ্ধান্ত ব্যক্তিগত বলে তিনি উল্লেখ করেন।
এই সিদ্ধান্ত ও নুরুল হক নুরের প্রত্যাখ্যান রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনার সৃষ্টি করেছে। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি, রাজনৈতিক নিরাপত্তা এবং আসন্ন নির্বাচন ঘিরে নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করার বিষয়টি নতুন করে গুরুত্ব পাচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকে নেওয়া পদক্ষেপ এবং রাজনৈতিক নেতাদের প্রতিক্রিয়া আগামী দিনে রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও প্রশাসনিক উদ্যোগের ওপর কী প্রভাব ফেলবে, তা পর্যবেক্ষণ করছেন সংশ্লিষ্ট মহল।


