বিশ্ব প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে ডিগ্রির পাশাপাশি দক্ষতা ও প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতার ওপর জোর

বিশ্ব প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে ডিগ্রির পাশাপাশি দক্ষতা ও প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতার ওপর জোর

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিশ্ব প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে কেবল একাডেমিক ডিগ্রি অর্জন যথেষ্ট নয়; এর পাশাপাশি ব্যক্তিগত দক্ষতা, শৃঙ্খলা, সততা ও বিশ্বাসযোগ্যতা গড়ে তোলার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল। তিনি বলেন, টেকসই উন্নয়ন ও রাষ্ট্র গঠনের জন্য শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান এবং নৈতিক মূল্যবোধসম্পন্ন মানবসম্পদ অপরিহার্য।

রোববার (২১ ডিসেম্বর) পূর্বাচল নতুন শহরে অবস্থিত স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের সপ্তম সমাবর্তন অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। এবারের সমাবর্তন এক প্রয়াত নাগরিক নেতার স্মরণে উৎসর্গ করা হয়।

সমাবর্তন বক্তৃতায় অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল বলেন, দক্ষতাকে লক্ষ্য হিসেবে না দেখে অভ্যাসে পরিণত করতে হবে। একইভাবে সততাকে কেবল নীতির মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে ব্যক্তিগত পরিচয়ের অংশ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে এবং দেশপ্রেমকে আবেগ নয়, দৈনন্দিন আচরণে প্রতিফলিত করতে হবে। তিনি উল্লেখ করেন, বৈশ্বিক কর্মক্ষেত্রে টিকে থাকতে হলে শিক্ষার্থীদের প্রযুক্তিগত দক্ষতার পাশাপাশি নৈতিকতা ও দায়িত্বশীলতার চর্চা জরুরি।

দেশের প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, স্বাধীনতার দীর্ঘ সময় অতিক্রান্ত হলেও ব্যক্তি পর্যায়ে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অগ্রগতি হলেও টেকসই ও শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এখনো কাঙ্ক্ষিত সাফল্য অর্জন করতে পারেনি। তিনি জানান, এক সময় পুলিশ, বিচার ও প্রশাসনের মতো রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো কাঠামোগতভাবে অগ্রসর অবস্থানে থাকলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এসব প্রতিষ্ঠানের ভিত্তি দুর্বল হয়ে পড়েছে, যা কার্যকর ও স্বচ্ছ পরিচালনার পথে বড় বাধা সৃষ্টি করেছে।

আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট তুলে ধরে তিনি বলেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী ইউরোপের পুনর্গঠন প্রক্রিয়া প্রমাণ করে যে শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান ছাড়া টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয়। যেসব দেশ প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বাড়াতে পেরেছে, তারাই দীর্ঘমেয়াদে উন্নতি করেছে। বিপরীতে, ব্যক্তি বা পরিবারের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরশীলতা উন্নয়নকে স্থায়ী করতে ব্যর্থ হয়। এই বাস্তবতা থেকে শিক্ষা নিয়ে বাংলাদেশকেও প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার ও সক্ষমতা বৃদ্ধির পথে এগোতে হবে বলে তিনি মত দেন।

সমাবর্তনে বিশেষ বক্তব্যে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এস এম এ ফায়েজ বলেন, বর্তমান প্রজন্মের গ্র্যাজুয়েটরা এমন এক সময়ে শিক্ষা সম্পন্ন করছেন, যখন জ্ঞান আহরণ কেবল পাঠ্যবইয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। প্রযুক্তির দ্রুত অগ্রগতির ফলে শিক্ষার পরিসর যেমন বিস্তৃত হচ্ছে, তেমনি সৃষ্টি হচ্ছে নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ। তিনি বলেন, এই চ্যালেঞ্জকে সম্ভাবনায় রূপান্তর করতে হলে শিক্ষার্থীদের উদ্ভাবনী চিন্তা, সমালোচনামূলক বিশ্লেষণ ক্ষমতা ও আজীবন শেখার মানসিকতা গড়ে তুলতে হবে।

তিনি আরও বলেন, নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে তরুণদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মানবিক মূল্যবোধ, সহনশীলতা ও দায়িত্ববোধের শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে তরুণদের দেশ গঠনে সক্রিয় ভূমিকা রাখতে হবে। উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে কেবল ডিগ্রি প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে নয়, বরং দক্ষ ও দায়িত্বশীল নাগরিক তৈরির কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার ওপরও তিনি গুরুত্ব দেন।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতার হোসেন খান। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম, গবেষণা উদ্যোগ এবং শিক্ষার্থীদের সহশিক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণের বিষয়ে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন। এ ছাড়া ট্রাস্টি বোর্ডের সভাপতি, সহ-সভাপতি, উপ-উপাচার্য এবং বিভিন্ন অনুষদের ডিনরা শিক্ষার মানোন্নয়ন ও শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ প্রস্তুতির বিষয়ে বক্তব্য দেন।

সমাবর্তনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০টি বিভাগের মোট ৬৭২ জন শিক্ষার্থীকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি প্রদান করা হয়। একই সঙ্গে শিক্ষাগত কৃতিত্বের স্বীকৃতি হিসেবে তিনজন শিক্ষার্থীকে চ্যান্সেলরস গোল্ড মেডেল, চারজনকে ভাইস-চ্যান্সেলর সিলভার মেডেল এবং ২০ জন শিক্ষার্থীকে ডিনস অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়।

অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান শিক্ষার্থী, শিক্ষক, অ্যালামনাই, নিবন্ধিত গ্র্যাজুয়েট, সিন্ডিকেট ও একাডেমিক কাউন্সিলের সদস্য, সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তা এবং বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার বিশিষ্ট ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।

২০০২ সালে প্রতিষ্ঠিত স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ দেশের বেসরকারি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে একটি। এর আগে অনুষ্ঠিত ছয়টি সমাবর্তনে ১৫ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছেন। সর্বশেষ সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২০২২ সালে। সপ্তম সমাবর্তনের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রমে নতুন গ্র্যাজুয়েটদের যুক্ত হওয়া দেশের মানবসম্পদ উন্নয়নে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে সংশ্লিষ্টরা আশা প্রকাশ করেন।

জাতীয় শীর্ষ সংবাদ