জাতীয় ডেস্ক
আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল জানিয়েছেন, পুলিশের প্রতিবেদন জমা হওয়ার পর সর্বোচ্চ ৯০ দিনের মধ্যে ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদির হত্যার বিচার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে সম্পন্ন হবে। সোমবার (২২ ডিসেম্বর) বেলা দুইটার দিকে তিনি সামাজিক মাধ্যমে ফেসবুকের ভেরিফায়েড পেজে এই তথ্য জানান। তিনি লিখেছেন, “শহীদ শরিফ ওসমান হাদি হত্যার বিচার হবে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে। দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল আইন, ২০০২-এর ১০ ধারা অনুযায়ী পুলিশ রিপোর্ট আসার পর সর্বোচ্চ ৯০ দিনের মধ্যে বিচার সম্পন্ন করা হবে।”
শহীদ শরিফ ওসমান হাদি ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের তফসিল ঘোষণার পরপরই, ১২ ডিসেম্বর রাজধানীর বিজয়নগরের বক্স কালভার্ট রোড এলাকায় মোটরসাইকেলে আসা দুই সন্ত্রাসীর গুলিতে মারাত্মকভাবে আহত হন। রিকশায় থাকা অবস্থায় তার মাথায় গুলি লাগে। আহত অবস্থায় প্রথমে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরবর্তীতে অবস্থার অবনতি হলে তাকে এভারকেয়ার হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। উন্নত চিকিৎসার জন্য ১৮ ডিসেম্বর তাকে সিঙ্গাপুরে পাঠানো হলে সেখানে রাত ৯টা ৪৫ মিনিটে তার মৃত্যু হয়।
ওসমান হাদির মরদেহ ১৯ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ৬টায় হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর আনা হয়। সেখান থেকে সরাসরি জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের হিমঘরে নেওয়া হয়। পরদিন শনিবার মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য সোহরাওয়ার্দী মেডিকেলে পাঠানো হয়। ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ জাতীয় সংসদ সংলগ্ন মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে নেওয়া হয়। জানাজার পর তাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাহিত করা হয়।
হাদির হত্যাচেষ্টার ঘটনায় ১৪ ডিসেম্বর ইনকিলাব মঞ্চের সদস্যসচিব আবদুল্লাহ আল জাবের পল্টন থানায় একটি মামলা দায়ের করেছিলেন। শরিফ ওসমান হাদির মৃত্যুর পর মামলাটি হত্যা মামলায় রূপান্তর করা হয়। মামলাটি বর্তমানে তদন্তাধীন এবং পুলিশের প্রতিবেদন পাওয়ার পর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে তা নিষ্পত্তির জন্য প্রক্রিয়া শুরু হবে।
দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল আইন, ২০০২ অনুযায়ী, পুলিশের প্রতিবেদন জমা হওয়ার পর ন্যূনতম এবং সর্বোচ্চ সময়সীমা নির্ধারণ করা রয়েছে। এই আইন অনুসারে, হত্যার মতো গুরুতর মামলায় প্রাথমিক তদন্ত শেষ হওয়ার পর দ্রুত বিচার নিশ্চিত করার জন্য সর্বোচ্চ ৯০ দিনের মধ্যে বিচার সম্পন্ন করার ব্যবস্থা রয়েছে। এই বিধান নাগরিকদের ন্যায়বিচারের নিশ্চয়তা প্রদান এবং অপরাধীদের শাস্তি দ্রুত কার্যকর করার উদ্দেশ্যে প্রবর্তিত।
শহীদ শরিফ ওসমান হাদির হত্যাকাণ্ডের পর বাংলাদেশে রাজনৈতিক ও সামাজিক মহলে এটি ব্যাপকভাবে সমালোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। হত্যাকাণ্ডের দ্রুত বিচারের আশ্বাস আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং সরকারের পক্ষ থেকে জনগণের ন্যায়বিচারের প্রতি দায়বদ্ধতা প্রদর্শন করছে। অনুসন্ধান ও বিচার প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা বজায় রাখা এবং তদন্তের সকল তথ্যের যথাযথভাবে মূল্যায়ন করা হবে।
এদিকে, হত্যাকাণ্ডের ঘটনা সমগ্র দেশে নিরাপত্তা এবং রাজনৈতিক সহিংসতার বিষয়ে নতুনভাবে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। দ্রুত বিচার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বাংলাদেশে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল ব্যবস্থার লক্ষ্য হলো ন্যায়বিচারের স্বচ্ছতা, সময়সীমার মধ্যে বিচারের সম্পাদন এবং অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা।


