শ্রীদেবী–মাধুরী সম্পর্ক নিয়ে দীর্ঘদিনের গুঞ্জন প্রসঙ্গে মুখ খুললেন মাধুরী দীক্ষিত

শ্রীদেবী–মাধুরী সম্পর্ক নিয়ে দীর্ঘদিনের গুঞ্জন প্রসঙ্গে মুখ খুললেন মাধুরী দীক্ষিত

বিনোদন ডেস্ক

বলিউডের নব্বইয়ের দশকে শ্রীদেবী ও মাধুরী দীক্ষিত ছিলেন দর্শকপ্রিয়তার শীর্ষে থাকা দুই সুপারস্টার। একসঙ্গে না হলেও একই সময়ে তাঁদের ছবি মুক্তি পেত, বক্স অফিসে চলত তীব্র প্রতিযোগিতা। সেই সময় থেকেই চলচ্চিত্র অঙ্গনে এবং দর্শকমহলে দীর্ঘদিন ধরে প্রচলিত ছিল—এই দুই তারকার ব্যক্তিগত সম্পর্ক নাকি খুব একটা সৌহার্দ্যপূর্ণ ছিল না। ‘ক্যাটফাইট’ বা নায়িকাদের পারস্পরিক দ্বন্দ্ব নিয়ে প্রচলিত ধারণার সঙ্গে যুক্ত হয়ে বিষয়টি নানা সময়ে আলোচনায় এসেছে।

সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে এই দীর্ঘদিনের গুঞ্জন প্রসঙ্গে সরাসরি বক্তব্য দিয়েছেন মাধুরী দীক্ষিত। শ্রীদেবী সম্পর্কে কথা বলতে গিয়ে তিনি জানান, তাঁদের মধ্যে কখনোই অসম্মান বা ব্যক্তিগত বিরোধের কোনো কারণ ছিল না। মাধুরীর ভাষায়, শ্রীদেবী ছিলেন অত্যন্ত পরিশ্রমী একজন অভিনেত্রী, যিনি তাঁর দীর্ঘ ক্যারিয়ারে কঠোর শ্রম দিয়ে নিজের অবস্থান তৈরি করেছেন। একইভাবে তিনি নিজেও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করে গেছেন। একে অপরের পরিশ্রম ও পেশাদারিত্ব সম্পর্কে দুজনেই সচেতন ছিলেন এবং সেটিকে সম্মান করতেন।

মাধুরীর এই বক্তব্যের মধ্য দিয়ে স্পষ্ট হয়, নব্বইয়ের দশকে বলিউডে তাঁদের মধ্যে যে প্রতিযোগিতা ছিল, তা পেশাগত পরিসরের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। ব্যক্তিগত সম্পর্কের ক্ষেত্রে শত্রুতা বা বৈরিতার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় না। চলচ্চিত্র শিল্পে একই সময়ে জনপ্রিয় দুই অভিনেত্রীর উপস্থিতি স্বাভাবিকভাবেই তুলনা ও প্রতিযোগিতার জন্ম দেয়। তবে মাধুরীর বক্তব্য অনুযায়ী, সেই প্রতিযোগিতা কখনো ব্যক্তিগত পর্যায়ে গড়ায়নি।

শ্রীদেবী ও মাধুরীর সম্পর্কের আলোচনায় আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রসঙ্গ হলো করণ জোহর পরিচালিত চলচ্চিত্র ‘কলঙ্ক’। ছবিটি নির্মাণের প্রাথমিক পর্যায়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয়ের জন্য শ্রীদেবীর সঙ্গে কথা হয়েছিল। তবে ২০১৮ সালে তাঁর আকস্মিক মৃত্যুর পর সেই চরিত্রে অভিনয়ের প্রস্তাব দেওয়া হয় মাধুরী দীক্ষিতকে। বিষয়টি নিয়ে তখন চলচ্চিত্র অঙ্গনে আবেগঘন প্রতিক্রিয়া দেখা যায়।

শ্রীদেবীর কন্যা জাহ্নবী কাপুর সে সময় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি আবেগপূর্ণ বার্তায় জানান, ‘কলঙ্ক’ তাঁর মায়ের হৃদয়ের খুব কাছের একটি চলচ্চিত্র ছিল। তিনি উল্লেখ করেন, তাঁর বাবা বনি কাপুর, বোন খুশি কাপুর এবং তিনি নিজে মাধুরী দীক্ষিতের প্রতি কৃতজ্ঞ—এই ছবির অংশ হওয়ার জন্য। এই বক্তব্য থেকে বোঝা যায়, শ্রীদেবীর পরিবারও মাধুরীর প্রতি সম্মান ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছে, যা দুই অভিনেত্রীর সম্পর্ক নিয়ে নেতিবাচক ধারণাকে আরও প্রশ্নবিদ্ধ করে।

উল্লেখ্য, শ্রীদেবী ২০১৮ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি দুবাইয়ে আকস্মিকভাবে মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর প্রয়াণে পুরো ভারতীয় চলচ্চিত্র অঙ্গনে গভীর শোক নেমে আসে। দীর্ঘ চার দশকেরও বেশি সময় ধরে হিন্দি, তামিল, তেলুগু ও মালয়ালম চলচ্চিত্রে অভিনয় করে তিনি নিজেকে একজন ব্যতিক্রমী অভিনেত্রী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। তাঁর মৃত্যু বলিউডের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ের সমাপ্তি হিসেবে বিবেচিত হয়।

অন্যদিকে, মাধুরী দীক্ষিত এখনও সক্রিয়ভাবে অভিনয়ের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। সাম্প্রতিক সময়ে মুক্তি পাওয়া তাঁর নতুন ওয়েব সিরিজ ‘মিসেস দেশপান্ডে’ নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন তিনি। সিরিজটিতে তিনি এমন একটি চরিত্রে অভিনয় করেছেন, যিনি একটি খুনের মামলায় পুলিশের তদন্তে সহায়তা করেন। চরিত্রটি দেখতে গিয়ে দর্শকরা মাধুরীর অভিনয়ের নতুন এক দিক দেখতে পাচ্ছেন বলে সংশ্লিষ্ট মহল থেকে জানা গেছে।

সব মিলিয়ে, মাধুরী দীক্ষিতের সাম্প্রতিক বক্তব্য শ্রীদেবী–মাধুরী সম্পর্ক নিয়ে দীর্ঘদিনের প্রচলিত গুঞ্জনের বাস্তবতা নিয়ে নতুন করে আলোচনার সুযোগ তৈরি করেছে। পেশাগত প্রতিযোগিতার মধ্যেও পারস্পরিক সম্মান ও সৌজন্য বজায় রাখার বিষয়টি এই দুই অভিনেত্রীর সম্পর্কের ক্ষেত্রে প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে।

বিনোদন শীর্ষ সংবাদ