অর্থনীতি ডেস্ক
দেশে গ্যাসের চাহিদা ক্রমবর্ধমান, আর দেশীয় উৎপাদন কমছে। এই পরিস্থিতিতে ভবিষ্যতের জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকার এলএনজি আমদানির ওপর নির্ভরতা বাড়াচ্ছে এবং তৃতীয় সমান্তরাল গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে।
মহেশখালী/মাতারবাড়ী-বাখরাবাদ তৃতীয় পাইপলাইন প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই ইতোমধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে। প্রাথমিক উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবও প্রস্তুত। এটি বাস্তবায়ন করবে গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেড (জিটিসিএল)। প্রকল্পের মোট প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ২৪ হাজার ৩২০ কোটি টাকা। কাজ শুরু হবে ২০২৬ সালের জুলাইয়ে এবং সমাপ্তি হবে ২০৩১ সালের জুনে।
বর্তমানে মহেশখালীতে দুটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল থেকে দৈনিক ১১০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ হয়। ভবিষ্যতে ৬০০ মিলিয়ন ঘনফুট কুতুবজোমে একটি নতুন ভাসমান টার্মিনাল এবং ১০০০ মিলিয়ন ঘনফুট মাতারবাড়ীতে স্থলভিত্তিক টার্মিনাল থেকে যোগ হবে। ফলে মহেশখালী ও মাতারবাড়ী অঞ্চলের মোট সরবরাহ দাঁড়াবে ২৭০০ মিলিয়ন ঘনফুট, যা বিদ্যমান পাইপলাইনের মাধ্যমে পরিবহন সম্ভব নয়।
তৃতীয় সমান্তরাল পাইপলাইন নির্মাণের জন্য মহেশখালী সিটিএমএস থেকে কুমিল্লার বাখরাবাদ পর্যন্ত ৪৬ ইঞ্চি ব্যাসের ৩২৬ কিলোমিটার এবং মাতারবাড়ী থেকে উত্তর নলবিলা ভাল্ব স্টেশন পর্যন্ত ৪০ ইঞ্চি ব্যাসের ৯ কিলোমিটার পাইপলাইন স্থাপন করা হবে। যেহেতু জিটিসিএলের নিজস্ব অর্থায়নে প্রকল্প বাস্তবায়ন সম্ভব নয়, তাই আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।
দেশীয় উৎপাদন কমার সঙ্গে সঙ্গে সবচেয়ে বড় গ্যাসক্ষেত্র বিবিয়ানার মজুতও দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছে। আগে দৈনিক ১৩৫০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উৎপাদিত হতো, যা বর্তমানে ৮৫৫ মিলিয়ন ঘনফুটে নেমে এসেছে। ২০২৬ সালের শেষে এটি ৫০০ মিলিয়নের নিচে নেমে গেলে দেশীয় উৎপাদন ১৫০০ মিলিয়নেরও কমে যেতে পারে।
নতুন টার্মিনাল স্থাপন গুরুত্বপূর্ণ। দরপত্র প্রক্রিয়ার খসড়া প্রস্তুত, তবে সরকার সময় বাঁচাতে জিটুজি ভিত্তিতে প্রকল্প বাস্তবায়নের দিকে মনোযোগ দিচ্ছে। সৌদি আরব, কাতার ও আজারবাইজানসহ চারটি দেশ প্রকল্পে আগ্রহ দেখিয়েছে। পূর্বের চুক্তি বাতিল হওয়ায় প্রস্তাবিত কুতুবজোম টার্মিনালকে ‘চতুর্থ টার্মিনাল’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান জানিয়েছেন, দেশীয় গ্যাস উৎপাদন বছরে গড়ে ২০০ মিলিয়ন ঘনফুট হারে কমছে। ঘাটতি পূরণের জন্য এলএনজি আমদানি ব্যয়বহুল হলেও অপরিহার্য। নতুন পাইপলাইন ও টার্মিনাল দেশের জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত এবং গ্যাস সরবরাহ বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।


