তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে টোলমুক্ত ঘোষণা

তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে টোলমুক্ত ঘোষণা

নিজস্ব প্রতিবেদক

ঢাকা, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫ — দীর্ঘ ১৭ বছরের নির্বাসনের অবসান ঘটিয়ে ২৫ ডিসেম্বর দেশে ফিরছেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনকে ঘিরে রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক আগ্রহ ও প্রস্তুতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে তাকে অভ্যর্থনা জানাতে রাজধানীর পূর্বাচল এলাকার ৩০০ ফিট সড়কসংলগ্ন স্থানে তৈরি করা হয়েছে সুবিশাল সংবর্ধনা মঞ্চ এবং সেখানে নেতাকর্মীদের সমাগম শুরু হয়েছে একদিন আগেই। এদিন ঢাকা শহরে প্রবেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সংযোগপথ বিমানবন্দর এলাকার এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের টোলপ্লাজা ২৫ ডিসেম্বর বেলা ১২টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত সাধারণ যানবাহনের জন্য টোলমুক্ত থাকবে বলে জানিয়েছে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং।

বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) প্রেস উইংয়ের বার্তায় বলা হয়, বড়দিন ও রাজনৈতিক সংবর্ধনা সমাবেশের দিন রাজধানীতে যান চলাচল নির্বিঘ্ন রাখতে এবং জনদুর্ভোগ কমাতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এতে ওই সময়সীমায় এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহারকারী ব্যক্তিগত, গণপরিবহনসহ সাধারণ সব যানবাহন টোল ছাড়াই চলাচল করতে পারবে।

তারেক রহমান ২০০৭ সালে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর দেশ ত্যাগ করেন এবং এরপর থেকে দীর্ঘ সময় যুক্তরাজ্যে অবস্থান করেন। তার প্রত্যাবর্তনকে ‘ঐতিহাসিক’ হিসেবে বিবেচনা করে বিএনপি ২৫ ডিসেম্বর রাজধানীতে ব্যাপক সংবর্ধনার আয়োজন করেছে। পূর্বাচলের ৩০০ ফিট এলাকায় তৈরি সংবর্ধনা মঞ্চটি প্রায় ৫০০ ফুট দীর্ঘ ও ৮০ ফুট প্রশস্ত, যেখানে কেন্দ্রীয় নেতাদের পাশাপাশি বিভিন্ন জেলা–মহানগর শাখার নেতারা উপস্থিত থেকে তাকে স্বাগত জানাবেন।

সমাবেশের মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, ২৪ ডিসেম্বর রাত থেকেই নেতাকর্মীদের আগমন বাড়তে শুরু করেছে। কেউ এসেছেন বাস, পিকআপ ও মাইক্রোবাসে; কেউবা মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা নিয়ে। সমাবেশস্থলে হাতে লেখা প্ল্যাকার্ড, জাতীয় ও দলীয় পতাকা, তারেক রহমানের প্রতিকৃতি–সংবলিত ব্যানার এবং বিভিন্ন স্লোগানে মুখর হয়ে উঠেছে পুরো এলাকা। উপস্থিত নেতাকর্মীরা জানান, ২৫ ডিসেম্বর সকাল থেকে সমাবেশস্থলে জনসমাগম আরও বাড়বে এবং দুপুরে তারেক রহমান মঞ্চে উপস্থিত হয়ে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) পক্ষ থেকে সমাবেশকে কেন্দ্র করে নিরাপত্তা পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে পূর্বাচল, ৩০০ ফিট সড়ক, বিমানবন্দর এলাকা এবং এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের আশপাশে অতিরিক্ত পুলিশ, ট্রাফিক ইউনিট, সিসিটিভি পর্যবেক্ষণ এবং নিয়ন্ত্রণ কক্ষ সক্রিয় রাখা হয়েছে। ট্রাফিক বিভাগ জানিয়েছে, সমাবেশের দিন ৩০০ ফিট সড়ক ও কুড়িল–পূর্বাচল অংশে যান চলাচলে সাময়িক নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হতে পারে এবং বিকল্প রুট ব্যবহারের নির্দেশনা দেওয়া হবে পরিস্থিতি অনুযায়ী।

টোলমুক্ত ঘোষণার ফলে ২৫ ডিসেম্বর ১২টা থেকে ২টা পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের টোলপ্লাজাগুলোতে নগদ লেন ও ইলেকট্রনিক টোল সংগ্রহ ব্যবস্থা বন্ধ রেখে যানবাহন নিরবচ্ছিন্নভাবে পারাপার করতে দেওয়া হবে। টোল কর্তৃপক্ষ বলেছে, ওই দুই ঘণ্টায় লেন ব্যবস্থাপনা, সাইনেজ নির্দেশনা এবং জরুরি সহায়তার জন্য অতিরিক্ত কর্মী মোতায়েন থাকবে, যাতে যানজট তৈরি না হয়।

রাজধানীর বিমানবন্দর এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে সাধারণত কুড়িল থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত সংযোগ তৈরি করে এবং দৈনিক কয়েক হাজার যানবাহন এই পথ ব্যবহার করে। রাজনৈতিক সমাবেশের মতো বড় আয়োজনের দিনে টোলমুক্ত ব্যবস্থা যান চলাচলে গতি বাড়াবে এবং কুড়িল–বিমানবন্দর–পূর্বাচল অংশে অতিরিক্ত চাপ কমাতে সহায়তা করবে বলে মনে করছেন যোগাযোগ বিশ্লেষকরা।

সমাবেশস্থলে উৎসবমুখর পরিবেশ থাকলেও সংশ্লিষ্ট প্রশাসন জানিয়েছে, আয়োজনের ব্যবস্থাপনা হবে শৃঙ্খলাপূর্ণ এবং জনস্বার্থকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে। বিএনপির দায়িত্বশীল নেতারা ইতোমধ্যে স্বেচ্ছাসেবক টিম গঠন করেছেন, যারা সমাবেশে আসা নেতাকর্মীদের সারিবদ্ধ প্রবেশ, যানবাহন পার্কিং, জরুরি চিকিৎসা সহায়তা, পানি বিতরণ ও তথ্য নির্দেশনায় কাজ করবে।

২৫ ডিসেম্বর দুপুরে তারেক রহমানের আগমনের সময় মঞ্চে তার প্রতি আনুষ্ঠানিক ফুলেল অভিবাদন, সাংস্কৃতিক পরিবেশনা এবং সংক্ষিপ্ত বক্তব্যের মাধ্যমে সংবর্ধনা সমাবেশ শেষ হবে বলে জানা গেছে। সমাবেশ শেষে জনসমাগম ধাপে ধাপে বের করার পরিকল্পনাও রাখা হয়েছে, যাতে রাজধানীর সড়ক ব্যবস্থায় দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব না পড়ে।

প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়, ২৫ ডিসেম্বর টোলমুক্ত সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে জনদুর্ভোগ এড়াতে; এর সঙ্গে কোনো নির্দিষ্ট গোষ্ঠী বা রাজনৈতিক বার্তা যুক্ত নয়। নিরাপত্তা, ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা এবং নাগরিক চলাচলের স্বাভাবিকতা নিশ্চিত করাই এর মূল লক্ষ্য।

দেশে প্রত্যাবর্তনের দিন তারেক রহমানের সংবর্ধনা সমাবেশ ও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে টোলমুক্ত ব্যবস্থার প্রভাবে রাজধানীতে মানুষের চলাচল স্বাভাবিক রাখতে সংশ্লিষ্ট সব বিভাগ সমন্বিতভাবে কাজ করছে বলে নিশ্চিত করেছে প্রেস উইং ও ট্রাফিক কর্তৃপক্ষ।

রাজধানী শীর্ষ সংবাদ