বিনোদন ডেস্ক
বলিউডের বহুল আলোচিত ও বক্স অফিসে ধারাবাহিক সাফল্য পাওয়া ‘দৃশ্যম’ ফ্র্যাঞ্চাইজির তৃতীয় কিস্তি ‘দৃশ্যম ৩’ নিয়ে যখন দর্শকদের মধ্যে উন্মাদনা তুঙ্গে, ঠিক সেই সময় চলচ্চিত্রসংশ্লিষ্ট মহলে আলোড়ন তুলেছে এক গুরুত্বপূর্ণ কাস্টিং–সংক্রান্ত খবর। জানা গেছে, ছবিটির অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছেন অভিনেতা অক্ষয় খান্না। বিষয়টি নিয়ে এখনো পর্যন্ত অভিনেতা কিংবা প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো বিবৃতি না এলেও, বলিউডের অন্দরমহলে এ নিয়ে জোর আলোচনা চলছে।
নির্মাতা সূত্রে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০২৬ সালের ২ অক্টোবর ‘দৃশ্যম ৩’ মুক্তি দেওয়ার পরিকল্পনা চূড়ান্ত করা হয়েছে। ছবির শুটিং–পূর্ব প্রস্তুতি, চিত্রনাট্য উন্নয়ন ও কাস্টিং–প্রক্রিয়া প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে এগোচ্ছিল। কিন্তু এরই মধ্যে অক্ষয় খান্না ও পরিচালক–প্রযোজক পক্ষের মধ্যে সৃজনশীল মতপার্থক্য প্রকল্পটির গতিপথে বড় ধরনের বাধা তৈরি করে। প্রাথমিক আলোচনায় অক্ষয়ের পারিশ্রমিক নিয়ে কোনো জটিলতা ছিল না বলে নিশ্চিত করেছেন সংশ্লিষ্টরা। বরং ছবিতে নিজের অনস্ক্রিন উপস্থিতি, চরিত্রের মানসিক গভীরতা ও নাটকীয় গুরুত্ব বাড়াতে চিত্রনাট্যে কিছু নির্দিষ্ট পরিবর্তনের প্রস্তাব দিয়েছিলেন তিনি।
অক্ষয়ের প্রস্তাবগুলোর মূল লক্ষ্য ছিল, তার চরিত্রটিকে গল্পের কেন্দ্রীয় সাসপেন্স–ড্রাইভ ও তদন্ত–কেন্দ্রিক আবহে আরও শক্তিশালীভাবে উপস্থাপন করা, যাতে কাহিনির উত্তেজনা, মনস্তাত্ত্বিক টানাপোড়েন ও চরিত্র–বিকাশে নতুন মাত্রা যুক্ত হয়। তবে পরিচালক ও প্রযোজকরা চিত্রনাট্যের মৌলিক কাঠামো ও সৃজনশীল দৃষ্টিভঙ্গিতে কোনো পরিবর্তন আনতে রাজি হননি। তাদের মতে, ‘দৃশ্যম’ সিরিজের মূল শক্তি এর টানটান সাসপেন্স, বুদ্ধিদীপ্ত পারিবারিক নাটক ও নির্দিষ্ট চরিত্র–গাঁথুনি; যা ইতোমধ্যে দর্শক–মনে গভীর প্রভাব ফেলেছে। তাই চিত্রনাট্যের নির্ধারিত গতিপথে হঠাৎ বড় পরিবর্তন গল্পের ভারসাম্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। এই সৃজনশীল দ্বিমতের জেরেই, উভয় পক্ষ আলোচনায় সমঝোতায় পৌঁছাতে ব্যর্থ হন। একপর্যায়ে অক্ষয় খান্না এই মেগা প্রকল্প থেকে সরে দাঁড়ানোর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেন।
বলিউডে এটি নতুন কোনো ঘটনা নয়। এর আগেও সৃজনশীল মতানৈক্যের কারণে বড় প্রকল্প থেকে অভিনেতাদের সরে দাঁড়ানোর নজির রয়েছে। যেমন, ‘ডন ৩’ ছবিতে অভিনয়–সংক্রান্ত আলোচনায় সৃজনশীল ও পেশাগত সমীকরণ না মেলায় রণবীর সিংও প্রকল্পটি থেকে সরে দাঁড়িয়েছিলেন। কাকতালীয়ভাবে রণবীর সিং ও অক্ষয় খান্না—দুজনেই সম্প্রতি মুক্তি পাওয়া ‘ধুরন্ধর’ ছবিতে পর্দা শেয়ার করেছেন। ‘ধুরন্ধর’ বক্স অফিসে বিশাল সাফল্য পাওয়ার পর এই দুই তারকা নিজেদের কাজ, চরিত্র–বাছাই, গল্পের গুরুত্ব ও সৃজনশীল নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে আরও বেশি সচেতন ও হিসাবি হয়েছেন বলে মনে করছেন চলচ্চিত্র–বিশ্লেষকরা। বিশেষত, অক্ষয় খান্না বরাবরই চিত্রনাট্য–নির্ভর চরিত্র, সংলাপ–কেন্দ্রিক অভিনয় ও মনস্তাত্ত্বিক গভীরতার জন্য পরিচিত। ফলে তিনি যে চরিত্রের গুরুত্ব ও গল্পে নিজের উপস্থিতি নিয়ে আরও কাজ করতে চাইবেন, সেটি তার অভিনয়–ধারার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ।
‘দৃশ্যম’ ফ্র্যাঞ্চাইজির আগের দুই কিস্তিতে অক্ষয় খান্নার চরিত্র দর্শক–সমালোচকদের প্রশংসা পেয়েছিল। বিশেষত, ‘দৃশ্যম ২’-এ তার তদন্তকারী–কেন্দ্রিক উপস্থিতি গল্পের সাসপেন্স–লাইনকে আরও তীক্ষ্ণ করে তুলেছিল। তাই তৃতীয় কিস্তিতে তার অনুপস্থিতি ছবির কাস্টিং–সমীকরণে বড় পরিবর্তন আনবে—এটি স্পষ্ট। তবে নির্মাতারা এখন বিকল্প কাস্টিং নিয়ে কাজ শুরু করেছেন বলে ইঙ্গিত মিলেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, পরিচালক–প্রযোজকরা এমন একজন অভিনেতাকে খুঁজছেন, যিনি চরিত্রটির নৈতিক দৃঢ়তা, বুদ্ধিদীপ্ত তদন্ত–আবহ ও আবেগহীন পেশাগত শীতলতাকে পর্দায় যথাযথভাবে ধারণ করতে পারবেন, কিন্তু চিত্রনাট্যের নির্ধারিত কাঠামোতে হস্তক্ষেপের প্রয়োজন বোধ করবেন না।
যদিও প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানো হয়নি, তবু বলিউড–সংশ্লিষ্ট মহলে ধারণা করা হচ্ছে, দ্রুতই তারা নতুন কাস্টিং ঘোষণা দেবেন, যাতে প্রকল্পের প্রি–প্রোডাকশন পর্যায়ের সময়সূচি ব্যাহত না হয়। ‘দৃশ্যম ৩’ মুক্তির তারিখ সামনে রেখে ছবির প্রচারণা, কাস্ট–ঘোষণা ও দর্শক–মনস্তত্ত্বে উত্তেজনা ধরে রাখা নির্মাতাদের জন্য কৌশলগত দিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এই ফ্র্যাঞ্চাইজির সাফল্যের মূল চালিকাশক্তি গল্প–কেন্দ্রিক টান, চরিত্র–ঘনত্ব ও সময়োপযোগী বিপণন কৌশল—যা দর্শকদের মধ্যে আগ্রহের পারদ ক্রমাগত উঁচুতে রাখে।
কাস্টিং–সংক্রান্ত এই পরিবর্তন ছবির সৃজনশীল বা বাণিজ্যিক সাফল্যে কী ধরনের প্রভাব ফেলবে—তা এখনই চূড়ান্তভাবে বলা না গেলেও, সংশ্লিষ্ট মহলে আলোচনার কেন্দ্রে রয়েছে একটি বিষয়: বড় ফ্র্যাঞ্চাইজি–প্রকল্পে সৃজনশীল নিয়ন্ত্রণের সীমা, চরিত্রের গুরুত্ব–বৃদ্ধির দাবি ও নির্মাতাদের গল্প–ভারসাম্য ধরে রাখার দর্শন—এই তিন শক্তির সমীকরণ কতটা সূক্ষ্ম, সংবেদনশীল ও সিদ্ধান্ত–নির্ভর। ‘দৃশ্যম ৩’–এর ক্ষেত্রে সেই সমীকরণই নতুন করে আলোচনায় উঠে এলো; যেখানে সৃজনশীল মতানৈক্য শেষ পর্যন্ত বড় কাস্টিং–পরিবর্তনের জন্ম দিল।


