২৯ ঘণ্টায় ৪৭ লাখ টাকার অনুদান তাসনিম জারার নির্বাচনি তহবিল সংগ্রহে

২৯ ঘণ্টায় ৪৭ লাখ টাকার অনুদান তাসনিম জারার নির্বাচনি তহবিল সংগ্রহে

নিজস্ব প্রতিবেদক

ঢাকা-৯ আসনের সংসদ সদস্য প্রার্থী ডা. তাসনিম জারা ২৯ ঘণ্টার ব্যবধানে ৪৭ লাখ টাকার নির্বাচনি অনুদান সংগ্রহ করে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এসেছেন। জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) মনোনীত এই প্রার্থী মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) মধ্যরাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক বিবৃতিতে জানান, নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হওয়ায় তিনি নতুন করে আর কোনো অনুদান গ্রহণ করবেন না।

ফান্ডরেইজিং কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর থেকে ২৯ ঘণ্টার মধ্যে অনুদানের এই পরিমাণ জমা পড়ে একটি নির্দিষ্ট মোবাইল আর্থিক সেবা (বিকাশ) ও একটি নতুন ব্যাংক অ্যাকাউন্টে। প্রার্থীর বিবৃতি অনুযায়ী, অনুদান গ্রহণে কোনো নগদ লেনদেন (ক্যাশ ডোনেশন) গ্রহণ করা হয়নি এবং পুরো প্রক্রিয়াটি ডিজিটাল আর্থিক মাধ্যমে পরিচালিত হয়েছে। তিনি দাবি করেন, অ্যাকাউন্ট দুটিতে ব্যক্তিগত কোনো আর্থিক লেনদেন করা হয়নি, উভয় অ্যাকাউন্ট নতুনভাবে খোলা হয়েছে এবং ব্যালেন্স শূন্য থেকে অনুদান সংগ্রহ শুরু হয়। বিবৃতিতে তিনি আরও উল্লেখ করেন, অনুদানকৃত অর্থের রেকর্ড বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত এবং এসব নথি ভবিষ্যতে যাচাইযোগ্য থাকবে।

বিবৃতিতে প্রার্থী জানান, নির্বাচনে অনেক প্রার্থী ১০ থেকে ৫০ কোটি টাকা পর্যন্ত প্রচারণা ব্যয় করতে পারেন—এমন ধারণা প্রচলিত থাকলেও তার প্রচারণা কার্যক্রম পেইড কর্মী-নির্ভর হবে না। তিনি জানান, প্রচারণার মূল ভিত্তি হবে স্বেচ্ছাসেবক এবং সমমনা নাগরিকদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ। তার বিবৃতিতে স্বেচ্ছাসেবকদের জন্য সপ্তাহে ৪–৮ ঘণ্টা সময় দিয়ে বাড়ি-বাড়ি প্রচারণায় যুক্ত হওয়ার, পোলিং এজেন্ট হিসেবে কাজ করার এবং নির্বাচনের দিন ভোটার সহায়তা কার্যক্রমে প্রশিক্ষণ নিয়ে অংশগ্রহণের আহ্বান জানানো হয়েছে।

ঢাকা-৯ আসনের আনুমানিক ভোটার সংখ্যা প্রায় ৫ লাখ উল্লেখ করে প্রার্থী জানান, ব্যক্তিগতভাবে হাঁটাপথে ১২ ঘণ্টা প্রচারণা চালিয়ে প্রতিটি পরিবারকে ৫ মিনিট সময় দিলেও দিনে সর্বোচ্চ ১০০–১১০টি পরিবারের কাছে পৌঁছানো সম্ভব। পুরো প্রচারণা সময়ে সর্বোচ্চ ৪০০০ পরিবারের কাছে সরাসরি পৌঁছানো সম্ভব হতে পারে, ফলে বাকি কয়েক লাখ পরিবারের কাছে বার্তা পৌঁছাতে নাগরিক-ভিত্তিক যোগাযোগ, ফোন কল ও পরিচিতজনের সুপারিশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে তিনি মনে করেন। প্রার্থীর বক্তব্যে পোস্টার-ব্যানার নির্ভর প্রচারণায় অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্তের কথাও উঠে এসেছে। বিবৃতিতে বলা হয়, প্রচারণায় অন্যান্য প্রার্থীর পোস্টার-ব্যানার দৃশ্যমান থাকলেও তার ক্যাম্পেইন দৃশ্যত পোস্টার-বিহীন ছিল, ফলে ভোটার-ভিত্তিক পরিচিতজনের সরাসরি যোগাযোগ এ অসমতা কমাতে সহায়ক হতে পারে।

প্রার্থীর বিবৃতিতে তহবিলের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে ৪টি সুনির্দিষ্ট শর্ত ও পরিকল্পনা তুলে ধরা হয়েছে—

১. ক্যাশ ডোনেশন বন্ধ ও ডিজিটাল লেনদেন:
অনুদান গ্রহণে কোনো নগদ অর্থ নেওয়া হয়নি। একটি মাত্র বিকাশ ও একটি নির্দিষ্ট ব্যাংক অ্যাকাউন্টে সব অনুদান জমা হয়েছে। প্রার্থীর দাবি অনুযায়ী, এসব লেনদেনের রেকর্ড বাংলাদেশ ব্যাংকের আওতায় নিয়ন্ত্রিত।

২. অনুদানের মাধ্যমভিত্তিক হিসাব প্রকাশ:
কোন আর্থিক মাধ্যমে কত অর্থ এসেছে, তার বিবরণ নিয়মিতভাবে জনসমক্ষে প্রকাশ করা হয়েছে বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়। সব আর্থিক নথি নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়ার পরিকল্পনার কথাও জানানো হয়।

৩. ব্যক্তিগত লেনদেন-মুক্ত নতুন অ্যাকাউন্ট:
অনুদানের জন্য ব্যবহৃত বিকাশ ও ব্যাংক অ্যাকাউন্ট—দুটিই নতুনভাবে খোলা, যেখানে ব্যক্তিগত কোনো লেনদেন হয়নি। বিবৃতিতে বলা হয়, অ্যাকাউন্টের ১০০% ব্যালেন্সই অনুদান, ফলে অন্য অর্থ মিশে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।

৪. ব্যয় খাতভিত্তিক পরিকল্পনা প্রকাশ:
সংগৃহীত ৪৭ লাখ টাকা কোন কোন খাতে ব্যয় হবে, তার খাতভিত্তিক পরিকল্পনা স্পষ্টভাবে প্রকাশ করা হবে বলে প্রার্থী জানান।

নির্বাচনি অনুদান সংগ্রহে এত স্বল্প সময়ে লক্ষ্যমাত্রা পূরণের ঘটনা বাংলাদেশে বিরল। বিশেষজ্ঞদের মতে, নির্বাচনি তহবিল ডিজিটাল লেনদেনের মাধ্যমে পরিচালনা ও নগদ লেনদেন প্রত্যাখ্যানের ঘোষণা তহবিল ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতার দাবিকে সামনে নিয়ে এসেছে। তবে অনুদান-পরবর্তী ব্যয়, প্রচারণার কার্যকারিতা, ভোটার-সম্পৃক্ততা এবং নির্বাচনি বুথ পর্যায়ে পোলিং এজেন্ট ব্যবস্থাপনার মতো বিষয়গুলো আগামী দিনে এ উদ্যোগের বাস্তব ফলাফল নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

বাংলাদেশের নির্বাচন কাঠামোয় ফান্ডিং, প্রচারণা ব্যয়, পোলিং এজেন্ট নিয়োগ ও প্রশিক্ষণ—সবকিছুই নির্বাচন কমিশনের আচরণবিধি, রাজনৈতিক দলগুলোর ঘোষিত নীতিমালা এবং আর্থিক লেনদেন-সংক্রান্ত বিদ্যমান আইন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। ফান্ডরেইজিং সংক্রান্ত বিবৃতিতে প্রার্থী যে স্বচ্ছতার দাবি তুলেছেন, তা বাস্তবায়নে যথাযথ নথি সংরক্ষণ, নিরীক্ষা-প্রস্তুতি, আইনসম্মত ব্যয়, নির্বাচন কমিশনে নিয়মমাফিক দাখিল, এবং সংশ্লিষ্ট নিয়ন্ত্রক সংস্থার যাচাই-প্রক্রিয়াই চূড়ান্ত মানদণ্ড হিসেবে বিবেচিত হবে।

এদিকে ঢাকা-৯ আসন রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ একটি সংসদীয় এলাকা। এখানে জনসংযোগ, ভোটার আস্থা, প্রচারণা পৌঁছানো, পোলিং এজেন্ট ব্যবস্থাপনা, এবং নির্বাচনের দিন বুথ-ভিত্তিক কার্যক্রম—সবই নির্বাচনি প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্ধারক হিসেবে কাজ করে। ডা. তাসনিম জারা ফান্ড সংগ্রহ শেষ করে এখন স্বেচ্ছাসেবক-নির্ভর প্রচারণা কার্যক্রমকে তার ক্যাম্পেইনের মূল কৌশল হিসেবে উল্লেখ করেছেন। এ কৌশল বাস্তবায়নে স্বেচ্ছাসেবক প্রশিক্ষণ, টিম সমন্বয়, পরিবার-ভিত্তিক জনসংযোগ, এবং বুথ পর্যায়ে পোলিং এজেন্ট সক্রিয়তার মতো কার্যক্রম কেমন প্রভাব ফেলবে, তা নির্বাচনি সময়সীমার মধ্যেই স্পষ্ট হবে।

নির্বাচনি অর্থায়ন, প্রচারণা ও ভোটকেন্দ্র কার্যক্রম—সব ক্ষেত্রেই আইন, আচরণবিধি, আর্থিক শৃঙ্খলা ও প্রাতিষ্ঠানিক যাচাই-প্রক্রিয়া মেনে চলাই নির্বাচনি গ্রহণযোগ্যতার প্রধান শর্ত। প্রার্থীর বিবৃতিতে উল্লিখিত প্রতিশ্রুতির বাস্তব প্রয়োগ ও আনুষ্ঠানিক দাখিল-প্রক্রিয়াই নির্ধারণ করবে এই উদ্যোগ কতটা বিধিসম্মত ও যাচাই-উপযোগী।

রাজনীতি শীর্ষ সংবাদ