১৭ বছর পর দেশে ফিরলেন তারেক রহমান

১৭ বছর পর দেশে ফিরলেন তারেক রহমান

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক

দীর্ঘ ১৭ বছর পর বাংলাদেশে ফিরেছেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)-এর ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) সকাল ১১টা ৪০ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের বিজি ২০২ (বিজি-২০২) ফ্লাইটে তিনি অবতরণ করেন। ফ্লাইটটিতে তার সঙ্গে ছিলেন স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমান এবং মেয়ে ব্যারিস্টার জাইমা রহমান। এর আগে সকাল ৯টা ৫৫ মিনিটে সিলেটের ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে একই ফ্লাইট অবতরণ করে। সেখানে গ্রাউন্ড টার্নঅ্যারাউন্ড শেষে সকাল ১১টা ১২ মিনিটের দিকে ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা শুরু করে। ফ্লাইটটি বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) লন্ডনের স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টা ১৫ মিনিটে (বাংলাদেশ সময় রাত ১২টা ১৫ মিনিট) হিথ্রো বিমানবন্দর ত্যাগ করেছিল।

বিএনপির দলীয় সূত্র জানায়, বিমানবন্দরের রেড জোন এলাকায় দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যরা আনুষ্ঠানিকভাবে তাকে শুভেচ্ছা জানাবেন। এরপর তিনি ৩০০ ফিট সড়কে দলের আয়োজিত গণসংবর্ধনা সমাবেশে যোগ দেবেন। সেখানে তিনি দলীয় নেতাকর্মী ও সমর্থকদের উদ্দেশে বক্তব্য দেবেন। গণসংবর্ধনা সমাবেশ শেষে তিনি মায়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে এভারকেয়ার হাসপাতালে যাবেন। সাক্ষাৎপর্ব শেষে তার গুলশানের বাসভবনে ফেরার কথা রয়েছে।

তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তন ঘিরে রাজধানীতে অভূতপূর্ব জনসমাগম দেখা গেছে। বুধবার গভীর রাত থেকেই ঢাকার বিভিন্ন প্রবেশমুখ, বিশেষ করে জুলাই ৩৬ এক্সপ্রেসওয়ে, ৩০০ ফিট সড়ক ও বিমানবন্দর সংলগ্ন এলাকাগুলোতে নেতাকর্মী ও সমর্থকদের উপস্থিতি বাড়তে শুরু করে। তীব্র শীত উপেক্ষা করে দেশের বিভিন্ন জেলা ও বিভাগ থেকে আসা মানুষ রাতভর সমাবেশস্থল ও বিমানবন্দরের আশপাশে অবস্থান নেন। ভোরের আলো ফোটার পর থেকেই স্লোগানে স্লোগানে মুখর হয়ে ওঠে পুরো এলাকা। বিভিন্ন ব্যানার, ফেস্টুন ও প্ল্যাকার্ড হাতে দলবদ্ধভাবে সমর্থকদের হেঁটে, বাস, ট্রাক, মোটরসাইকেল ও ব্যক্তিগত পরিবহনে করে বিমানবন্দর ও ৩০০ ফিট সড়কের দিকে অগ্রসর হতে দেখা যায়।

স্লোগানে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এবং তারেক রহমানের প্রতি আনুগত্য ও আবেগঘন সমর্থনের বার্তা প্রতিফলিত হয়েছে। ঢাকার আশপাশের জেলা—গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, মুন্সীগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, টাঙ্গাইল, কিশোরগঞ্জসহ দেশের উত্তর, দক্ষিণ ও পূর্বাঞ্চল থেকে আসা নেতাকর্মী ও সমর্থকরা মহাসড়কে জড়ো হন। বিভিন্ন পরিবহনে অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই করে ঢাকামুখী যাত্রা শুরু করায় রাত থেকে ভোর পর্যন্ত রাজধানীর প্রধান সড়ক ও এক্সপ্রেসওয়েগুলোতে ধীরগতির যান চলাচল লক্ষ্য করা গেছে।

শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সংলগ্ন এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অতিরিক্ত উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। যানবাহন চলাচল ও জনসমাগম ব্যবস্থাপনায় ট্রাফিক পুলিশকে সমন্বয় করতে দেখা যায়। বিমানবন্দরের ভেতরে আনুষ্ঠানিক অভ্যর্থনার কার্যক্রম রেড জোনে সীমাবদ্ধ থাকলেও বাইরে ৩০০ ফিট সড়ক পর্যন্ত দলীয় কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করেছে।

বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ৩০০ ফিট সড়কের গণসংবর্ধনা সমাবেশটি মূলত তারেক রহমানের দীর্ঘ নির্বাসন শেষে দেশে ফেরা উপলক্ষে দলীয় শক্তির সংহতি, জনসমর্থন ও সংগঠনিক প্রস্তুতির প্রকাশ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা মনে করেন, এই প্রত্যাবর্তন দলের রাজনীতিতে নতুন গতি সঞ্চার করবে এবং সাংগঠনিক কার্যক্রম আরও সক্রিয় ও সমন্বিত হবে।

তারেক রহমান ২০০৮ সালে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর থেকে যুক্তরাজ্যের লন্ডনে অবস্থান করছিলেন। তার অনুপস্থিতিকালে বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত, কৌশলগত সমন্বয় ও রাজনৈতিক নির্দেশনা প্রধানত লন্ডন থেকেই পরিচালিত হতো। তার প্রত্যাবর্তন ঘিরে বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে দীর্ঘদিনের জমে থাকা আবেগ ও প্রত্যাশা প্রকাশ্য রূপ পেয়েছে, যা ঢাকার মহাসড়ক ও সমাবেশস্থলে জনস্রোতে দৃশ্যমান হয়েছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তন দেশের সমসাময়িক রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে। তবে এই প্রভাবের মাত্রা ও রাজনৈতিক গতিপথ নির্ভর করবে পরবর্তী সময়ে তার রাজনৈতিক কর্মসূচি, বক্তব্য, সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত ও রাষ্ট্রীয়-রাজনৈতিক বাস্তবতার সমন্বয়ের ওপর। তার প্রত্যাবর্তনকে বিএনপি সমর্থকরা ঐতিহাসিক মুহূর্ত হিসেবে দেখলেও জাতীয় রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ঘটনা, যা সময়ের ধারায় আরও স্পষ্ট প্রভাব তৈরি করবে।

রাজধানীতে চলমান কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে এখন পর্যন্ত কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার তথ্য পাওয়া যায়নি। দলীয় কর্মসূচি, জনসমাগম, অভ্যর্থনা ও পরবর্তী সফরসূচি ঘোষিত পরিকল্পনা অনুযায়ী সম্পন্ন হবে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র।

সমাপনী বক্তব্য হিসেবে বলা যায়, তারেক রহমানের ১৭ বছর পর দেশে ফেরা বিএনপির রাজনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হিসেবে যুক্ত হয়েছে। বিমানবন্দর থেকে ৩০০ ফিট সড়ক পর্যন্ত জনসমাগম ও স্লোগানমুখর পরিবেশ তার প্রত্যাবর্তনের প্রতি দলীয় নেতাকর্মীদের সমর্থন ও আবেগের প্রকাশ হিসেবে প্রতীয়মান হয়েছে।

জাতীয় শীর্ষ সংবাদ