বিনোদন ডেস্ক
ফরিদপুর জিলা স্কুলের ১৮৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানের সমাপনী দিনে দেশবরেণ্য সংগীতশিল্পী নগরবাউল জেমসের কনসার্টকে ঘিরে সৃষ্টি হয় চরম বিশৃঙ্খলা। শুক্রবার রাতে এই ঘটনার কারণে নির্ধারিত সংগীতানুষ্ঠানটি বাতিল করা হয়। শিল্পী জেমস নিজে এ ঘটনার জন্য আয়োজকদের অব্যবস্থাপনা ও ব্যর্থতাকে দায়ী করেছেন। এতে স্কুলের প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থীসহ উপস্থিত দর্শকদের প্রত্যাশিত আনন্দঘন সমাপ্তি পরিণত হয় হতাশা ও উদ্বেগে।
অনুষ্ঠান সংশ্লিষ্ট সূত্র ও শিল্পীর প্রতিনিধিদের দেওয়া তথ্যমতে, শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে জেমস ও তাঁর দল ফরিদপুরে পৌঁছান। তারা শহরের নদী গবেষণা ইনস্টিটিউটের গেস্ট হাউসে অবস্থান করছিলেন। এ সময় থেকেই তারা অনুষ্ঠানস্থলে দর্শকদের ভিড় ও বিশৃঙ্খলার খবর পেতে থাকেন। রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পরিস্থিতির অবনতি ঘটে। রাত সাড়ে ১০টার দিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে আয়োজক কমিটি শিল্পী পক্ষকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানায় যে নিরাপত্তাজনিত কারণে অনুষ্ঠানটি বাতিল করা হচ্ছে। এরপর জেমস ও তাঁর দল ঢাকার উদ্দেশে ফরিদপুর ত্যাগ করেন।
ঘটনার পর শিল্পী জেমস সংক্ষিপ্ত প্রতিক্রিয়ায় বলেন, এটি সম্পূর্ণভাবে আয়োজকদের অব্যবস্থাপনা ও ব্যর্থতার ফল। তাঁর মতে, একটি বড় আয়োজনের ক্ষেত্রে দর্শক নিয়ন্ত্রণ, প্রবেশ ব্যবস্থাপনা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা আয়োজকদের প্রধান দায়িত্ব, যা এই অনুষ্ঠানে যথাযথভাবে পালন করা হয়নি।
এদিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, রাত সাড়ে ১০টার দিকে গেস্ট হাউস থেকে দ্রুত বের হয়ে গাড়িতে ওঠেন জেমস। ভিডিওতে তাঁর সঙ্গে থাকা সহযোগীদের শিল্পীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তৎপর দেখা যায়। আয়োজকদের পক্ষ থেকে নিশ্চিত হওয়ার আগেই অনুষ্ঠানস্থলে না গিয়ে তিনি সরাসরি ঢাকার পথে রওনা দেন।
আয়োজক কমিটির একাধিক সূত্র জানায়, পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানটি মূলত নিবন্ধিত প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের জন্য নির্ধারিত ছিল। তবে জেমসের উপস্থিতির খবর ছড়িয়ে পড়ার পর কয়েক হাজার অনিবন্ধিত দর্শক স্কুল প্রাঙ্গণের আশপাশে জড়ো হন। নির্ধারিত নিয়ম অনুযায়ী তাদের প্রবেশে বাধা দেওয়া হলে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। অনেকেই গেটের সামনে ও সড়কে অবস্থান নেন এবং দেয়াল টপকে ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করেন।
এক পর্যায়ে পরিস্থিতি সহিংস রূপ নেয়। স্কুল প্রাঙ্গণ ও মঞ্চ লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ শুরু হয় বলে আয়োজকরা দাবি করেন। এতে আয়োজক কমিটির আহ্বায়কসহ প্রায় ২৫ থেকে ৩০ জন আহত হন। আহতদের মধ্যে ১০ থেকে ১২ জনকে ফরিদপুরের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হয়েছে। ঘটনার সময় আতঙ্কে অনেক দর্শক অনুষ্ঠানস্থল ত্যাগ করেন।
স্থানীয়ভাবে দায়িত্বশীল সূত্রগুলো জানায়, অনুষ্ঠানের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক স্বেচ্ছাসেবক ও নিরাপত্তাকর্মী প্রস্তুত থাকলেও অনিবন্ধিত দর্শকের অস্বাভাবিক ভিড় সামাল দেওয়ার মতো সমন্বিত পরিকল্পনা ছিল না। প্রবেশপথে পর্যাপ্ত নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা না থাকায় পরিস্থিতি দ্রুত অবনতি ঘটে।
ফরিদপুর জিলা স্কুলের ১৮৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে এই পুনর্মিলনীকে কেন্দ্র করে দেশ-বিদেশে অবস্থানরত প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ ছিল। দীর্ঘদিন পর এমন একটি বড় সাংস্কৃতিক আয়োজন স্কুলের ঐতিহ্য ও গৌরব উদ্যাপনের কথা ছিল। তবে শেষ মুহূর্তের এই বিশৃঙ্খলা পুরো আয়োজনকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে।
ঘটনার পর স্থানীয় প্রশাসন ও আয়োজক কমিটি পরিস্থিতি পর্যালোচনার কথা জানিয়েছে। ভবিষ্যতে এ ধরনের বড় আয়োজনের ক্ষেত্রে দর্শক ব্যবস্থাপনা, নিরাপত্তা পরিকল্পনা এবং শিল্পীদের সুরক্ষার বিষয়ে আরও কঠোর ও সুস্পষ্ট ব্যবস্থা নেওয়ার প্রয়োজনীয়তার কথা সংশ্লিষ্টরা উল্লেখ করছেন।


