জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
ঢাকা-১৭ সংসদীয় আসনের অন্তর্গত গুলশান এলাকার ১৯ নম্বর ওয়ার্ডে ভোটার হিসেবে নিবন্ধিত হতে যাচ্ছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এ লক্ষ্যে তিনি ইতোমধ্যে অনলাইনে ভোটার হওয়ার আবেদন করেছেন এবং বাকি আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে আজ নির্বাচন কমিশনে (ইসি) উপস্থিত হওয়ার কথা রয়েছে।
নির্বাচন কমিশন ও বিএনপির একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) দুপুর ১২টার মধ্যে তারেক রহমান আগারগাঁওয়ের নির্বাচন কমিশন ভবনে যাবেন। এর আগে শুক্রবার তার ভোটার নিবন্ধনের জন্য প্রয়োজনীয় ফরম পূরণের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করা হয়। আবেদনপত্রে তার বর্তমান ঠিকানা হিসেবে ঢাকার গুলশান এলাকার একটি বাসভবনের তথ্য ব্যবহার করা হয়েছে।
নির্বাচন কমিশনের সূত্র অনুযায়ী, গুলশানের ‘ফিরোজা’ নামের একটি বাসভবনের ঠিকানায় তারেক রহমান ভোটার হতে পারেন। তবে বিষয়টি এখনো চূড়ান্ত হয়নি। ছবি তোলার আগে তিনি ঢাকায় নাকি জন্মস্থান বগুড়ায় ভোটার হবেন, সে বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানা গেছে। ফলে ভোটার তালিকায় তার নাম কোন ঠিকানায় অন্তর্ভুক্ত হবে, তা শেষ মুহূর্তে নির্ধারিত হবে।
এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রহমানেল মাছউদ বলেন, তারেক রহমানের এই সময়ে ভোটার হতে কোনো আইনি বাধা নেই। তিনি জানান, নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতার মধ্যে রয়েছে যে কোনো যোগ্য নাগরিককে যেকোনো সময় ভোটার হিসেবে নিবন্ধন করা। আইন ও বিধিমালার আওতায় থেকে বিশেষ ব্যবস্থায় ভোটার করার সুযোগ রয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
নির্বাচন কমিশনের বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তারা বলছেন, তফসিল ঘোষণার পর বিশেষ ব্যবস্থায় ভোটার হওয়া বিরল কোনো ঘটনা নয়। শুধুমাত্র তারেক রহমানই এমন প্রক্রিয়ায় ভোটার হচ্ছেন—এমন ধারণা সঠিক নয়। অতীতেও বিভিন্ন সময়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা তফসিল ঘোষণার পর ভোটার হয়েছেন।
তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০০১ সালে শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানা বিশেষ ব্যবস্থায় ভোটার হয়েছিলেন। একইভাবে, নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান এবং সু-শাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)-এর সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদারও তফসিল ঘোষণার পর ভোটার হন। এ ছাড়া অন্তর্বর্তী সরকারের নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমানও বিশেষ সময়ে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হন।
ইসির সাবেক অতিরিক্ত সচিব ফরহাদ আহমেদ খান বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ ইউনূস সরকারের সময় নিরাপত্তাবিষয়ক উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমানকে তফসিল ঘোষণার পর ভোটার করা হয়েছিল। এ ধরনের সিদ্ধান্ত নির্বাচন কমিশনের এখতিয়ারভুক্ত এবং আইনসম্মত বলেই তিনি মন্তব্য করেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ড. বদিউল আলম মজুমদার নিজেও তফসিল ঘোষণার পর বিশেষ ব্যবস্থায় ভোটার হওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেন। তিনি বলেন, নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে নির্বাচন কমিশন আইনের মধ্যে থেকেই এমন সিদ্ধান্ত নিতে পারে এবং অতীতেও তার নজির রয়েছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে তারেক রহমানের ভোটার হওয়া রাজনৈতিকভাবে তাৎপর্যপূর্ণ। ভোটার তালিকায় তার নাম অন্তর্ভুক্ত হলে ভবিষ্যতে দলের সাংগঠনিক ও রাজনৈতিক কার্যক্রমে এর প্রভাব পড়তে পারে বলে তারা মনে করছেন। তবে নির্বাচন কমিশন সংশ্লিষ্টরা বিষয়টিকে একটি নিয়মিত প্রশাসনিক প্রক্রিয়া হিসেবেই দেখছেন।
সব মিলিয়ে, নির্বাচন কমিশনের বিধিবিধান অনুসরণ করে তারেক রহমানের ভোটার নিবন্ধনের প্রক্রিয়া এগোচ্ছে। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত ও আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হলে শিগগিরই ভোটার তালিকায় তার নাম অন্তর্ভুক্ত হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে।


