জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ইসলামপন্থি দলগুলোর ভোট একত্রিত করার লক্ষ্য নিয়ে গঠিত আটদলীয় নির্বাচনী জোটে প্রার্থী বাছাই ও আসন বণ্টন প্রক্রিয়া অনেকটাই চূড়ান্ত হলেও বরিশাল বিভাগে এখনো জটিলতা কাটেনি। বিশেষ করে বরিশাল সদর আসন নিয়ে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মধ্যে মতবিরোধ স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। উভয় দলই আসনটিকে নিজেদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ও মর্যাদার বলে দাবি করছে, ফলে জোটের অভ্যন্তরে সমঝোতা এখনো হয়নি।
জোট সূত্রে জানা গেছে, জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশসহ আটটি দল নিয়ে গঠিত এই জোটের মূল সিদ্ধান্ত হলো—যে আসনে যে দলের জনপ্রিয়তা ও সাংগঠনিক অবস্থান শক্তিশালী, সেই আসন সে দল পাবে। এ নীতির আলোকে বেশ কয়েকটি আসনে ছাড়–ছাড় দেওয়া হলেও বরিশাল বিভাগের মোট ২১টি আসনের মধ্যে সদর আসন নিয়ে দ্বিমুখী অবস্থান তৈরি হয়েছে। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীমের রাজনৈতিক ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত বরিশাল সদর আসনে ইসলামী আন্দোলন ছাড় দিতে রাজি নয়। অন্যদিকে, দীর্ঘদিনের সাংগঠনিক উপস্থিতি ও নির্বাচনকেন্দ্রিক তৎপরতার কথা উল্লেখ করে জামায়াতে ইসলামীও আসনটি দাবি করছে।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নেতাদের দাবি, বরিশাল বিভাগ তাদের প্রধান ভোটব্যাংক। দলটির বরিশাল বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা সিরাজুল ইসলাম বলেন, পিরোজপুর জেলার দুটি আসন ছাড়া বিভাগের বাকি অধিকাংশ আসনে ইসলামী আন্দোলনের অবস্থান শক্ত। সে বিবেচনায় তারা অন্তত ১৫টি আসনে প্রার্থী দেওয়ার যৌক্তিকতা দেখছেন। পিরোজপুরের দুটি আসনে জামায়াতে ইসলামীকে ছাড় দেওয়া হয়েছে, যেখানে আটদলীয় জোটের প্রার্থী হিসেবে আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর দুই ছেলে মাসুদ সাঈদী ও শামীম সাঈদী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।
এ ছাড়া ভোলা-৩ আসন বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টির (বিডিপি) সেক্রেটারি জেনারেল মোহাম্মদ নিজামুল হক নাঈমকে ছাড় দেওয়ার আলোচনা রয়েছে। বরগুনার দুটি আসনেও ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থীরা ভালো অবস্থানে আছেন বলে দলটির দাবি। বরগুনা-২ আসনে ইসলামী আন্দোলনের নেতা গোলাম সরোয়ার হিরু অতীতে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ায় সেখানে দলটির সাংগঠনিক ভিত্তি শক্ত বলে মনে করা হচ্ছে।
অন্যদিকে, জামায়াতে ইসলামী পটুয়াখালীর বাউফল আসনে নিজেদের প্রার্থী ডা. শফিকুল ইসলাম মাসুদের পক্ষে অবস্থান ধরে রেখেছে। পাশাপাশি ঝালকাঠি-১ ও ঝালকাঠি-২ আসনেও দলটি প্রার্থী দিয়েছে। ঝালকাঠি-২ আসনটি ছাড়তে নারাজ ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, যেখানে দলটির প্রভাবশালী নেতা মাওলানা সিরাজুল ইসলাম সিরাজী মনোনয়ন পেয়েছেন। ফলে ওই আসন নিয়েও জোটের ভেতরে আলোচনা চলমান রয়েছে।
বরিশাল জেলায় ইসলামী আন্দোলনের প্রভাব আরও স্পষ্ট হয় চরমোনাই পীরের পরিবারের অংশগ্রহণে। ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে ইসলামী আন্দোলনের হয়ে চরমোনাই পীরের তিন ভাই চারটি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। দলের সিনিয়র নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুর করীম বরিশাল সদরসহ দুটি আসনে এবং সহকারী মহাসচিব মুফতি সৈয়দ এছহাক মুহাম্মাদ আবুল খায়ের বরিশাল-৪ আসনে প্রার্থী হয়েছেন। ফলে জেলার ছয়টি আসনের মধ্যে তিনটি ইসলামী আন্দোলন নিজেদের জন্য দাবি করছে।
জামায়াতে ইসলামীও বরিশাল সদর ও বরিশাল-৪ আসনে শক্ত প্রার্থী দিয়েছে। সদর আসনে দলের কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাডভোকেট মুয়ায্যম হোসাইন হেলাল দীর্ঘদিন ধরে প্রচার চালিয়ে আসছেন। বরিশাল-৪ আসনে জেলার আমির অধ্যাপক আব্দুল জব্বারকে প্রার্থী করা হয়েছে। অ্যাডভোকেট মুয়ায্যম হোসাইন হেলাল বলেন, জামায়াতে ইসলামী এখানে দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতি করছে এবং নির্বাচনী কর্মকাণ্ডে সক্রিয় রয়েছে। জনপ্রিয়তা ও সাংগঠনিক অবস্থান বিবেচনায় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জোট নেবে।
এ বিষয়ে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুর করীম সাংবাদিকদের বলেন, বরিশাল সদর আসন ইসলামী আন্দোলনের আমিরের আসন হিসেবে পরিচিত। জোটগত রাজনীতিতে পারস্পরিক সম্মান বজায় রাখার প্রয়োজন রয়েছে। তিনি জোটের ভেতরে সমঝোতার গুরুত্বের কথাও উল্লেখ করেন।
সব মিলিয়ে বরিশাল বিভাগের আসন বণ্টন, বিশেষ করে সদর আসন নিয়ে টানাপোড়েন এখনো কাটেনি। জোটের কেন্দ্রীয় পর্যায়ে আলোচনা চললেও জনপ্রিয়তা ও রাজনৈতিক মর্যাদার প্রশ্নে শেষ পর্যন্ত কী সিদ্ধান্ত আসে, তা নিয়ে স্থানীয় পর্যায়ে কৌতূহল ও অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে।


