ভাঙ্গায় ট্রাক–অ্যাম্বুলেন্স সংঘর্ষে ভাই–বোনসহ তিনজন নিহত

ভাঙ্গায় ট্রাক–অ্যাম্বুলেন্স সংঘর্ষে ভাই–বোনসহ তিনজন নিহত

জেলা প্রতিনিধি

ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলায় ট্রাক ও অ্যাম্বুলেন্সের মুখোমুখি সংঘর্ষে ভাই–বোনসহ তিনজন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আরও দুইজন গুরুতর আহত হয়েছেন। শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) সকাল আনুমানিক সাড়ে ৭টার দিকে ভাঙ্গা–খুলনা মহাসড়কের মুনসরাবাদ এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতরা ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান। দুর্ঘটনার পর মহাসড়কে সাময়িক যানজট সৃষ্টি হলেও পরে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।

নিহতদের মধ্যে রয়েছেন যশোরের মনিরামপুর উপজেলার রাজগঞ্জ গ্রামের বাসিন্দা রহমতউল্লাহর ছেলে নিশান (২৩)। অপর দুজন যশোরের কেশবপুর উপজেলার চালতীবাড়ি গ্রামের বাবর আলীর ছেলে মিজানুর রহমান (৪০) এবং তার মেয়ে বিউটি বেগম (৩০)। নিহত মিজানুর রহমান ও বিউটি বেগম সম্পর্কে বাবা–মেয়ে বলে পুলিশ নিশ্চিত করেছে। দুর্ঘটনার সময় তারা ঢাকাগামী অ্যাম্বুলেন্সে ছিলেন।

ভাঙ্গা হাইওয়ে থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সোহেল খান জানান, ভাঙ্গা থেকে খুলনার দিকে যাওয়া একটি ট্রাকের সঙ্গে বিপরীত দিক থেকে ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা করা একটি অ্যাম্বুলেন্সের সরাসরি সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষের তীব্রতায় অ্যাম্বুলেন্সটি গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং ঘটনাস্থলেই তিনজনের মৃত্যু ঘটে। আহত দুজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাৎক্ষণিকভাবে উদ্ধার কার্যক্রম জোরদার করা হয়।

দুর্ঘটনার খবর পেয়ে হাইওয়ে পুলিশ, স্থানীয় থানা পুলিশ এবং ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সদস্যরা দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছান। তারা আহতদের উদ্ধার করে ভাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠান। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে গুরুতর আহতদের প্রয়োজন অনুযায়ী উন্নত চিকিৎসার জন্য অন্যত্র স্থানান্তরের প্রস্তুতি নেওয়া হয় বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকালবেলায় মহাসড়কে যানবাহনের চাপ তুলনামূলক কম থাকলেও সংঘর্ষের শব্দ ও ধাক্কায় আশপাশের মানুষ দ্রুত ঘটনাস্থলে জড়ো হন। দুর্ঘটনার পর কিছু সময়ের জন্য মহাসড়কের একাংশে যান চলাচল ব্যাহত হয়। উদ্ধার কার্যক্রম ও দুর্ঘটনাকবলিত যান সরিয়ে নেওয়ার পর ধীরে ধীরে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।

পুলিশ জানিয়েছে, দুর্ঘটনার সুনির্দিষ্ট কারণ জানতে তদন্ত শুরু করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, গতি নিয়ন্ত্রণে ত্রুটি অথবা লেন শৃঙ্খলা ভঙ্গের কারণে সংঘর্ষটি ঘটে থাকতে পারে। তবে তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত এ বিষয়ে নিশ্চিত করে কিছু বলা যাচ্ছে না। দুর্ঘটনায় জড়িত যানবাহন দুটি হাইওয়ে পুলিশের হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।

এ ঘটনায় নিহতদের মরদেহ প্রয়োজনীয় আইনগত প্রক্রিয়া শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তরের প্রস্তুতি নেওয়া হয়। একই সঙ্গে দুর্ঘটনার বিষয়ে মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে। আইনগত পদক্ষেপের অংশ হিসেবে চালকদের দায়িত্ব ও যানবাহনের কাগজপত্র যাচাই করা হচ্ছে।

ভাঙ্গা–খুলনা মহাসড়ক দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের একটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা। এই সড়কে প্রায়ই ভারী যানবাহন ও জরুরি সেবার গাড়ির চলাচল থাকে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মহাসড়কে নিরাপদ গতি বজায় রাখা, লেন শৃঙ্খলা মেনে চলা এবং চালকদের সতর্কতা বাড়ানো জরুরি। নিয়মিত নজরদারি ও সচেতনতামূলক উদ্যোগ জোরদার করা হলে এ ধরনের দুর্ঘটনা কমানো সম্ভব বলে মনে করছেন তারা।

দুর্ঘটনায় নিহতদের পরিবারের সদস্যদের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, দুর্ঘটনার বিষয়ে প্রয়োজনীয় সহায়তা ও পরবর্তী করণীয় নির্ধারণে সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো সমন্বয় করে কাজ করছে।

শীর্ষ সংবাদ সারাদেশ