ঢাকার কেরানীগঞ্জে মাদ্রাসা ভবনে বিস্ফোরণ, নাশকতার প্রস্তুতির অভিযোগ

ঢাকার কেরানীগঞ্জে মাদ্রাসা ভবনে বিস্ফোরণ, নাশকতার প্রস্তুতির অভিযোগ


জেলা প্রতিনিধি
ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের হাসনাবাদ এলাকায় একটি মাদ্রাসা ভবনে বিস্ফোরণের ঘটনায় নারী ও শিশুসহ চারজন আহত হয়েছেন। শুক্রবার দুপুরে উম্মাল কুরা ইন্টারন্যাশনাল মাদ্রাসা নামে পরিচিত ওই প্রতিষ্ঠানে এ বিস্ফোরণ ঘটে। প্রাথমিক তদন্তে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানিয়েছে, এটি কোনো সাধারণ দুর্ঘটনা নয়; বরং নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডের প্রস্তুতির সময় বিস্ফোরণটি ঘটেছে বলে তারা ধারণা করছে।

ঘটনার পরপরই এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। স্থানীয় বাসিন্দারা বিকট শব্দ শুনে ছুটে গিয়ে ভবনের একাংশ ক্ষতিগ্রস্ত অবস্থায় দেখতে পান। বিস্ফোরণে ভবনের পশ্চিম পাশের দুটি কক্ষের দেয়াল সম্পূর্ণ ধসে পড়ে এবং ছাদ ও বিমে ফাটল দেখা দেয়। পাশের আরও কয়েকটি কক্ষেও ফাটল ধরেছে। তবে শুক্রবার ছুটির দিন হওয়ায় মাদ্রাসাটি বন্ধ ছিল, ফলে বড় ধরনের প্রাণহানির ঘটনা এড়ানো সম্ভব হয়েছে।

এ ঘটনায় তদন্তে নেমেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি), অ্যান্টিটেররিজম ইউনিটসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক ইউনিট। ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান শনিবার গণমাধ্যমকে জানান, ঘটনাস্থল থেকে বিপজ্জনক রাসায়নিক দ্রব্য, চারটি ককটেল সদৃশ বস্তু, একটি ল্যাপটপ এবং দুটি মনিটর উদ্ধার করা হয়েছে। এসব আলামত পরীক্ষার জন্য সংশ্লিষ্ট ফরেনসিক ল্যাবরেটরিতে পাঠানো হয়েছে।

পুলিশ সুপার জানান, এ ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন আছিয়া (২৮), ইয়াসমিন আক্তার (৩০) ও আসমানি খাতুন ওরফে আসমা (৩৪)। তাদের জিজ্ঞাসাবাদে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে বলে দাবি করেছে পুলিশ। তবে ঘটনার মূল অভিযুক্ত শেখ আল আমিন এখনও পলাতক রয়েছেন। তাকে গ্রেপ্তারের জন্য অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দা ও ভবন মালিকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০২২ সাল থেকে শেখ আল আমিন ওই ভবন ভাড়া নিয়ে মাদ্রাসাটি পরিচালনা করে আসছিলেন। একই ভবনে তিনি স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে বসবাস করতেন। বিস্ফোরণের সময় তার পরিবারের সদস্যরাও সেখানে ছিলেন। এ ঘটনায় শেখ আল আমিনের দুই শিশু সন্তান আহত হয়েছে। আহত দুই শিশুর বয়স যথাক্রমে ১০ ও ৭ বছর। তারা বর্তমানে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

ভবন মালিক পারভীন বেগম জানান, দীর্ঘ তিন বছর ধরে আল আমিন ও তার স্ত্রী আছিয়া ওই বাড়িতে ভাড়া থাকতেন এবং মাদ্রাসা পরিচালনা করতেন। তিনি বলেন, নিয়মিত খোঁজখবর নেওয়া হলেও মাদ্রাসার আড়ালে কী ধরনের কার্যক্রম চলছিল, তা তিনি বুঝতে পারেননি।

দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল আলম জানান, ঘটনাস্থল থেকে ককটেল, দাহ্য পদার্থ এবং বোমা তৈরির বিভিন্ন সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে এবং মামলার প্রস্তুতি চলছে।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, পলাতক শেখ আল আমিনের বিরুদ্ধে ঢাকা ও আশপাশের বিভিন্ন থানায় মোট সাতটি মামলা রয়েছে। তিনি এর আগেও একাধিকবার গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। একইভাবে গ্রেপ্তার আসমানি খাতুনের বিরুদ্ধেও একাধিক মামলার তথ্য মিলেছে।

পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান বলেন, ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে ব্যবহার করে কোনো ধরনের নাশকতা বা অপরাধমূলক তৎপরতা বরদাশত করা হবে না। ঘটনার সঙ্গে জড়িত সকলকে আইনের আওতায় আনা হবে এবং তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত উদ্দেশ্য ও নেপথ্যের ব্যক্তিদের চিহ্নিত করা হবে।

ঘটনাটি স্থানীয় পর্যায়ে যেমন উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে, তেমনি ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা ও অপব্যবহার নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সবাইকে গুজব না ছড়ানোর আহ্বান জানিয়েছে।

শীর্ষ সংবাদ সারাদেশ