২০২৪ সালে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ রেকর্ড পরিমাণ কমে ১.২২ শতাংশে নেমেছে

২০২৪ সালে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ রেকর্ড পরিমাণ কমে ১.২২ শতাংশে নেমেছে

অর্থনীতি ডেস্ক

ঢাকা: দেশে পুঁজিবাজারে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ ২০২১ সাল থেকে ধারাবাহিকভাবে কমছে। ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর (১১ মাস) পর্যন্ত বিদেশি বিনিয়োগকারীদের শেয়ার লেনদেনের পরিমাণ ছিল মাত্র ৩ হাজার ৮০০ কোটি টাকা, যা ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) মোট লেনদেনের মাত্র ১ দশমিক ২২ শতাংশ।

ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন মাসে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা পরিমাণে বেশ ভিন্নতা রেখে লেনদেন করেছেন। জানুয়ারিতে দেড় কোটি ডলার, ফেব্রুয়ারিতে ২ কোটি ২০ লাখ ডলার, মার্চে ১ কোটি ৪০ লাখ ডলার এবং এরপর এপ্রিল, মে, জুন, জুলাই, আগস্ট, সেপ্টেম্বর, অক্টোবর—সব মাসেই লেনদেনের পরিমাণে কিছুটা ওঠানামা দেখা গেছে। নভেম্বরের প্রথমার্ধে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা ১ কোটি ডলারের লেনদেন করেছেন।

গড়ে, প্রতি মাসে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের লেনদেনের পরিমাণ ছিল ২ কোটি ৮৭ লাখ ডলার। যখন এই পরিমাণকে বাংলাদেশের মুদ্রায় রূপান্তর করা হয়, তখন তা দাঁড়ায় ৩ হাজার ৮৬২ কোটি টাকায়। ২০২৪ সালের শেষে, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের মোট লেনদেনের পরিমাণ ছিল ৩১ থেকে ৩২ কোটি ডলার।

বিশ্লেষকরা বলছেন, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের পুঁজি কমানোর পেছনে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কারণ রয়েছে। প্রথমত, দীর্ঘমেয়াদে এমএসসিআই ফ্রন্টিয়ার মার্কেট সূচকগুলোর শ্লথগতি এবং বিনিয়োগকারীদের অধিক মুনাফা লাভের প্রত্যাশা তাদেরকে অন্য অঞ্চলের বাজারে বিনিয়োগের দিকে প্ররোচিত করেছে। দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশের ব্যাঙ্ক খাতের দুর্বলতা, মুদ্রা বিনিময় হার ঝুঁকি, এবং ভালো মানের শেয়ারের অভাবও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করেছে।

এই সংকটের কারণে, ২০২৪ সালের প্রথম ১১ মাসে সার্বিকভাবে পুঁজিবাজারের পরিস্থিতি হতাশাজনক ছিল। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সূচক ডিএসইএক্স এই সময়ে ২৩৭ পয়েন্ট কমেছে।

পুঁজিবাজারের গতিশীলতা নির্ধারণকারী গড় দৈনিক লেনদেন গত আগস্টে ছিল সর্বোচ্চ—৭ কোটি ৭০ লাখ ডলার। একই সময়ে, মার্চ মাসে ছিল সর্বনিম্ন—১ কোটি ৪০ লাখ ডলার।

বিদেশি বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণের হ্রাস দীর্ঘমেয়াদী প্রবণতা হিসেবে দেখা যাচ্ছে। ২০২০ সালে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের লেনদেনের পরিমাণ ছিল ১০ হাজার ৩৮৮ কোটি টাকা, যা ডিএসইর মোট লেনদেনের ৩ দশমিক ৮৫ শতাংশ ছিল। ২০২১ সালে তা কমে ৭ হাজার ৭৬৪ কোটি টাকায় দাঁড়ায়, যা ছিল ১ দশমিক ১০ শতাংশ। এরপর ২০২২ ও ২০২৩ সালে লেনদেনের পরিমাণ আরও হ্রাস পায় এবং ২০২৩ সালে তা ২ হাজার ১৬৭ কোটি টাকায় নেমে আসে।

২০২৪ সালে বিদেশি বিনিয়োগ কিছুটা বৃদ্ধি পেলেও এটি একে অপরের তুলনায় তুচ্ছ পরিমাণ।

ডিএসইতে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণের এই অব্যাহত পতন দেশের অর্থনীতির জন্য একটি বড় সংকেত। বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহে এ ধরনের পতন দেশের পুঁজিবাজারের ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলতে পারে, যার ফলে দেশীয় বিনিয়োগ পরিবেশও আরও ঝুঁকির মধ্যে পড়তে পারে।

অর্থ বাণিজ্য শীর্ষ সংবাদ