রাজনীতি ডেস্ক
নেত্রকোণা-৪ (মদন, মোহনগঞ্জ ও খালিয়াজুরী) আসনের ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কেন্দ্রীয় পর্যায়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে দাঁড়িয়েছে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর ও তাঁর স্ত্রী তাহমিনা জামান শ্রাবনী একই নির্বাচনী আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় মনোনয়ন নেওয়া। সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে পৃথকভাবে মনোনয়নপত্র জমা দেন এই দম্পতি।
সকালের দিকে এই আসনে দলীয় দল থেকে মনোনয়নপত্র গৃহীত হয় সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরের। বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে আবারও কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের অনুমোদন নিয়ে তাঁর স্ত্রী তাহমিনা জামান শ্রাবনী স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে একই আসনের মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। এ ঘটনা রাজনৈতিক মহলে প্রশ্ন ও জল্পনা তৈরি করেছে।
জেলায় মনোনয়নপত্র দাখিল কার্যক্রমের সময় জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক সাইফুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেন। জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ের সামনে মনোনয়নপত্র দাখিলকালে লুৎফুজজ্জামান বাবরসহ দলীয় সমর্থক ও নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। তবে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি এই বিষয়টি এড়িয়ে যান এবং বিশেষ কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার তথ্য অনুসারে, তাহমিনা জামান শ্রাবনীর মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন বাবরের একান্ত সচিব মির্জা হায়দার ও জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মাসুদ রানা চৌধুরী যৌথভাবে। মনোনয়নপত্র জমাদানের ফরমে স্বামীর নামের স্থানে ‘লুৎফুজ্জামান বাবর’ নামই উল্লেখ রয়েছে, যা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে তাহমিনা শ্রাবনীর প্রার্থীতার প্রেক্ষাপট হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে নেত্রকোণা জেলা বিএনপির নৌকা প্রতীকের অভিজ্ঞ নেতৃত্বও কিছু জানান দেন। জেলা বিএনপির সভাপতি ডাক্তার আনোয়ারুল হক বলেন, “আমি শুনেছি, সাবেক প্রতিমন্ত্রীর সহধর্মিণী স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। তবে দলীয়ভাবে ওই আসনে লুৎফুজ্জামান বাবরকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।” তিনি আরও জানান, মনোনয়ন পরিবর্তন বা জোটকে ত্যাগ করার মতো কোনো বিষয়ে এখনো সেন্ট্রাল স্তর থেকে তাঁকে অবহিত করা হয়নি।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, একই পরিবার থেকে দুটি মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার ঘটনা সাধারণত বিরল এবং তা নির্বাচনী কৌশল, সম্প্রীতি, অথবা স্থানীয় রাজনৈতিক পরিস্থিতির প্রতিফলন হতে পারে। বিশেষ করে নেত্রকোণা-৪ আসনের মতো মাইক্রো রাজনীতিতে এমন ঘটনা দলীয় ব্যবস্থাপনায় অনড় থাকলে বিরূপ প্রতিক্রিয়া কিংবা সমর্থকদের মধ্যে বিভাজনও দেখা দিতে পারে। এ ধরনের পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের মন্তব্য ও সিদ্ধান্ত নির্বাচনকে আরও উত্তেজনাপূর্ণ করে তুলতে পারে।
স্থানীয় নির্বাচনী সংস্কৃতি ও রাজনৈতিক সম্পর্ক বিশ্লেষণে বলা হচ্ছে, যখন একই পরিবারের সদস্য একই আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অংশ নেন, তখন তা রাজনৈতিক শক্তি এবং সমর্থনের একটি নতুন মাত্রা সৃষ্টি করে। একদিকে দলীয় প্রার্থীর সাথে স্বতন্ত্র প্রার্থীর প্রতিদ্বন্দ্বিতা গ্রাস করলে দুই পক্ষের ভোটে বিভাজন ঘটতে পারে, অন্যদিকে স্থানীয় পর্যায়ের ভোট ব্যাংককে প্রভাবিত করার ক্ষেত্রে এটি একটি নতুন পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটাতে পারে। নেত্রকোণা-৪ আসনে প্রচলিত রাজনৈতিক ধারা এবং ভোটারের প্রতিক্রিয়া বিবেচনায় এই ঘটনা নির্বাচনকেন্দ্রিক আলোচনা ও মনমত তৈরি করেছে।
এদিকে বাবরের স্ত্রীর সাথে যোগাযোগের নিয়মিত প্রচেষ্টা করেও তাকে সরাসরি বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে রাজনৈতিক মহলের ধারণা, তিনি ব্যক্তিগতভাবেও নির্বাচনে অংশগ্রহণের প্রবল ইচ্ছা পোষণ করছেন, যা স্বতন্ত্র মনোনয়নপত্র গ্রহণের সিদ্ধান্তের পেছনের অন্যতম কারণ বলে উল্লেখ করা হচ্ছে।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা আরও উল্লেখ করেন, আসন্ন সংসদ নির্বাচনের আগে দলীয় সমন্বয়ের অভাব অথবা স্থানীয় স্তরে নেতাদের পৃথক প্রতিদ্বন্দ্বিতার মতো ঘটনা বিরল হলেও না-ও বলা যায় না। এই ধরনের ঘটনাগুলো সাধারণত কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের মনোভাব, স্থানীয় সমর্থকের প্রত্যাশা এবং নির্বাচন প্রসঙ্গে কোন কৌশল অবলম্বন করা হচ্ছে—এসব বিষয়কে সামনে এনে ভোটারদের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করতে পারে।
এ বিষয়টি নেত্রকোণা-৪ এলাকার ভোটার, রাজনৈতিক কর্মী ও বিশ্লেষকদের মধ্যে ব্যাপক আলোচনা সৃষ্টি করেছে। নির্বাচনী মাঠে এখন প্রতিটি পদক্ষেপ এবং কেন্দ্রীয় দলের পরবর্তী মনোভাবই আসলে আসন্ন নির্বাচনে প্রভাব ফেলবে কি না—এটিই প্রশ্ন হিসেবে থেকে গেছে।


