জাতীয় ডেস্ক
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটকে সামনে রেখে পোস্টাল ভোট বিডি অ্যাপে নিবন্ধনের সময়সীমা পুনরায় বাড়িয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। নিবন্ধনের নতুন সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে আগামী বছরের ৫ জানুয়ারি মধ্যরাত পর্যন্ত। এর পর আর সময় বাড়ানোর কোনো সুযোগ থাকবে না বলে স্পষ্ট জানিয়েছে কমিশন।
আজ মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) বিকেল ৩টার পর নির্বাচন ভবনে আয়োজিত এক প্রেসব্রিফিংয়ে এ তথ্য নিশ্চিত করেন নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ। তিনি জানান, নিবন্ধনের সময় ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত থাকলেও দেশ-বিদেশে থাকা বহু ভোটার এখনো প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে না পারায় বারবার সময় বাড়ানোর অনুরোধ জানাচ্ছেন। কমিশন তাদের সেই বাস্তব অসুবিধার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে সময় বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ বলেন, পোস্টাল ভোট বিডি অ্যাপে প্রবাসী বাংলাদেশি এবং দেশের অভ্যন্তরে তিন ক্যাটাগরির বিশেষ ভোটারদের নিবন্ধন করার সময়সীমা প্রথমে ২৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত নির্ধারিত ছিল। পরে তা বাড়িয়ে ৩১ ডিসেম্বর করা হলেও অনেকেই এখনো প্রক্রিয়া শেষ করতে পারেননি। বিশেষ করে বিদেশ থেকে অ্যাকাউন্ট ভেরিফিকেশন, জাতীয় পরিচয়পত্র আপডেট সংক্রান্ত জটিলতা, ইন্টারনেট সংযোগজনিত সমস্যা, অ্যাপের টেকনিক্যাল লোড বৃদ্ধি এবং সার্ভার রেসপন্স টাইম ধীরগতির মতো কারণগুলোতে ভোটারদের নিবন্ধন সম্পন্ন করতে বিলম্ব হচ্ছে।
এছাড়া পোস্টাল ভোটের জন্য যোগ্য তিন ক্যাটাগরির মধ্যে রয়েছেন:
-
প্রবাসী বাংলাদেশি ভোটার
-
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, প্রতিরক্ষা বাহিনী ও নির্বাচনকালীন দায়িত্বে থাকা ভোটার
-
চিকিৎসাধীন, শারীরিকভাবে অক্ষম বা বিশেষ পরিস্থিতিতে থাকা ভোটার
ইসি সচিব বলেন, “আমরা নিবন্ধনের সময় বাড়ানোর জন্য দেশ-বিদেশ থেকে অসংখ্য অনুরোধ পেয়েছি। অনেকেই সময়সীমার মধ্যে আবেদন সম্পন্ন করতে না পারায় উদ্বেগ জানিয়েছেন। তাই কমিশন বাস্তব পরিস্থিতি বিবেচনা করে ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত সময় বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।”
ডিজিটাল ভোটিং কাঠামোর অংশ হিসেবে পোস্টাল ভোট বিডি অ্যাপটি নির্বাচন কমিশনের অন্যতম প্রযুক্তিনির্ভর উদ্যোগ, যার উদ্দেশ্য হলো ভোটারদের সরাসরি ভোটকেন্দ্রে উপস্থিত না থেকেও নিরাপদ, যাচাইকৃত এবং নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ভোট প্রদানের সুযোগ নিশ্চিত করা। বিশেষত প্রবাসী বাংলাদেশি ভোটারদের ভোটাধিকার প্রয়োগ সহজ করতে এ অ্যাপটি চালু করা হয়েছে, যা ডাকযোগে ভোট পাঠানোর (Postal Ballot Dispatch) ডিজিটাল নিবন্ধন প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করছে।
নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা যায়, প্রথম দফায় নিবন্ধন শুরুর পর অ্যাপটিতে বিপুলসংখ্যক ব্যবহারকারীর একযোগে প্রবেশের কারণে প্রযুক্তিগত লোড বৃদ্ধি পায়। একইসঙ্গে, প্রবাসী ভোটারদের জন্য বিদেশি মোবাইল নেটওয়ার্কে OTP (One Time Password) ডেলিভারি বিলম্বিত হওয়া এবং বিভিন্ন দেশে NID ডাটাবেস ভেরিফিকেশন API রেসপন্স টাইমে ধীরগতির মতো সীমাবদ্ধতা নিবন্ধন প্রক্রিয়াকে দীর্ঘায়িত করে।
কমিশন আশা করছে, সময় বাড়ানোর ফলে অ্যাপের লোড পর্যায়ক্রমে কমবে এবং বাকি যোগ্য ভোটাররা নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই নিবন্ধন শেষ করতে পারবেন।
ইসির প্রাথমিক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সময়সীমা বারবার বাড়ানোর পরও এখনো উল্লেখযোগ্যসংখ্যক প্রবাসী ও বিশেষ শ্রেণির ভোটার নিবন্ধন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারেননি। তবে ইতোমধ্যে যারা নিবন্ধন সম্পন্ন করেছেন, তাদের মধ্যে অধিকাংশই মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ, মালয়েশিয়া, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা প্রবাসী। দেশের অভ্যন্তরে থেকে নিবন্ধন করা ভোটারদের একটি বড় অংশ প্রতিরক্ষা বাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, যারা নির্বাচনকালীন দায়িত্বে নিয়োজিত থাকবেন।
ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারের প্রবণতা বিশ্লেষণে দেখা গেছে, শেষ সময় ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে অ্যাপে নিবন্ধনের হার দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে—যাকে “Deadline Surge Behavior” বলা হয়। সময় বাড়ানোর ফলে এই ‘সার্জ’ প্রবণতা আরও বিস্তৃত হবে এবং যোগ্য ভোটারদের নিবন্ধন সম্পন্ন করার হার বৃদ্ধি পাবে বলে ধারণা করছে কমিশন।
নির্বাচন কমিশন বারবার জানিয়েছে, পোস্টাল ভোট বিডি অ্যাপে ভোটার নিবন্ধন ও ডাকযোগে ব্যালট পাঠানোর প্রক্রিয়ায় ডাটা নিরাপত্তা, পরিচয় যাচাইকরণ, এনক্রিপ্টেড যোগাযোগ এবং ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষায় আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসরণ করা হচ্ছে। অ্যাপটি শুধুমাত্র নিবন্ধন ও ব্যালট ডেলিভারি অনুরোধ সংগ্রহ করে; প্রকৃত ভোট প্রদান ও ব্যালট সিল করার প্রক্রিয়া ডাকযোগে নির্দিষ্ট নিরাপত্তা নির্দেশিকা মেনে সম্পন্ন হবে।
ইসি সচিব আখতার আহমেদ ব্রিফিংয়ে চূড়ান্তভাবে বলেন, “৫ জানুয়ারি মধ্যরাত পর্যন্ত নিবন্ধন চলবে। এটি হবে শেষ সময়সীমা। এর পর আর সময় বাড়ানোর কোনো সুযোগ বা আইনি কাঠামো থাকবে না।”
তিনি আরও বলেন, নিবন্ধনকারী ভোটারদের ডাকযোগে ব্যালট পাঠানোর পরবর্তী সময়সীমা, ব্যালট গ্রহণের প্রক্রিয়া এবং যাচাই কার্যক্রম যথাসময়ে জানিয়ে দেওয়া হবে।
নিবন্ধন সম্পন্ন করতে নির্বাচন কমিশন নাগরিকদের প্রতি কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা দিয়েছে:
-
NID নম্বর ও জন্মতারিখ সঠিকভাবে প্রদান
-
প্রবাস থেকে নিবন্ধনের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মোবাইল নম্বর সচল রাখা
-
ইন্টারনেট সংযোগ স্থিতিশীল থাকা নিশ্চিত করা
-
অ্যাপে প্রোফাইল ভেরিফিকেশন ধাপগুলো সম্পন্ন করা
-
শেষ সময় পর্যন্ত অপেক্ষা না করে দ্রুত নিবন্ধন সম্পন্ন করা
পোস্টাল ভোট বিডি অ্যাপে সময়সীমা বাড়ানোর সিদ্ধান্তটি মূলত ভোটার অধিকার সুরক্ষা, প্রযুক্তিগত বাস্তবতা, ব্যবহারকারীর অসুবিধা এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনী পরিবেশ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নেওয়া হয়েছে। আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটে প্রবাসী এবং বিশেষ শ্রেণির ভোটারদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে এটি নির্বাচন কমিশনের সর্বশেষ নমনীয় উদ্যোগ—তবে একইসঙ্গে চূড়ান্ত সতর্কবার্তাও, কারণ ৫ জানুয়ারির পর আর সময় বাড়বে না।


