বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে রাজনৈতিক শূন্যতা সৃষ্টি: মির্জা ফখরুল ইসলাম

বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে রাজনৈতিক শূন্যতা সৃষ্টি: মির্জা ফখরুল ইসলাম

রাজনীতি ডেস্ক

আজ মঙ্গলবার ভোর ৬টায় ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী এবং জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির (বিএনপি) চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া মৃত্যুবরণ করেছেন। তার বয়স হয়েছিল ৭৯ বছর। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, তার মৃত্যু বাংলাদেশের রাজনীতিতে এবং বিশ্বব্যাপী গণতান্ত্রিক আন্দোলনে একটি বিশাল শূন্যতা সৃষ্টি করেছে।

মির্জা ফখরুল বলেন, “আজ ভোর ৬টায় আমাদের গণতন্ত্রের মা, আমাদের অভিভাবক, আমাদের জাতীয় অভিভাবক আমাদেরকে ছেড়ে চলে গেছেন। এই শোক এবং ক্ষতি অপূরণীয়, যা এই জাতি কখনও পূরণ করতে পারবে না।” তিনি আরও বলেন, খালেদা জিয়া তার সারাজীবন জনগণের কল্যাণে নিবেদিত ছিলেন।

বিএনপির মহাসচিব সাংবাদিকদের জানান, রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তার জানাজা ও দাফনের বিষয় নিয়ে আজ সকাল ১০টা থেকে সাড়ে ১০টার মধ্যে বিশেষ ক্যাবিনেট বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। বৈঠকের পর বিস্তারিত পরিকল্পনা গণমাধ্যমের মাধ্যমে জানানো হবে।

বেগম খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে নানা জটিল রোগে ভুগছিলেন। ২৩ নভেম্বর শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়ায় তাকে জরুরি ভিত্তিতে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এর আগে ২১ নভেম্বর সশস্ত্র বাহিনী দিবসের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে রওনা দেয়ার সময় তিনি অস্বস্তি বোধ করেন। দীর্ঘদিন তিনি লিভার সিরোসিস, আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, ফুসফুস এবং চোখের সমস্যা সহ অন্যান্য রোগে ভুগছিলেন। ২০২১ সালের মে মাসে তিনি করোনায় আক্রান্ত হন এবং করোনারি কেয়ার ইউনিটে চিকিৎসা নেন। ২০২৪ সালের জুনে হৃদপিণ্ডে পেসমেকার বসানো হয়।

খালেদা জিয়া ২০১৮ সালে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় পাঁচ বছরের কারাদণ্ড পান। পরে হাসপাতালভিত্তিক চিকিৎসার মাধ্যমে ও নির্বাহী আদেশে বিশেষ শর্তে মুক্তি পান। ২০২৪ সালের আগস্টে রাষ্ট্রপতির নির্বাহী আদেশে তাকে সব দণ্ড থেকে মুক্তি দেওয়া হয়।

১৯৪৫ সালের জলপাইগুড়িতে জন্ম নেওয়া খালেদা জিয়া দিনাজপুর মিশনারি স্কুল থেকে শিক্ষা নেন। ১৯৬০ সালে তিনি দিনাজপুর গার্লস স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন সম্পন্ন করেন। একই বছর তিনি তৎকালীন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন জিয়াউর রহমানের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন পাকিস্তানি বাহিনী তাকে গ্রেপ্তার করে, পরবর্তীতে মুক্তি পান।

রাজনীতিতে তিনি ১৯৮৪ সালে বিএনপিতে সহসভাপতি হন এবং একই বছরের ১০ মে দলের চেয়ারপারসন নির্বাচিত হন। খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে ১৯৮৩ সালে সাতদলীয় জোট গঠন করে এরশাদের স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু হয়। এরশাদ সরকারের নানা নিষেধাজ্ঞা এবং আটক সত্ত্বেও তিনি ‘আপসহীন নেত্রী’ হিসেবে পরিচিত হন।

বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যু বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি শূন্যতা তৈরি করেছে এবং তার নেতৃত্ব ও অবদান দীর্ঘদিন স্মরণীয় থাকবে।

রাজনীতি শীর্ষ সংবাদ